পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৮ লক্ষ্মী দেবী ললেন—“আমি ঠিক যাব, তুমি কিন্তু যতদূর পারো স তরে গিয়ে তার পর ডাঙায় উঠে চলে যেও ।” নরনারায়ণ রায় সেই ঘনকৃষ্ণ অন্ধকারের মধ্যে নিঃশব্দে খালের জলে পড়ে মিলিয়ে গেলেন । লক্ষ্মী দেবীর প্রদীপট অনেকক্ষণ বাতাসে নিবে গিয়েছিল- তিনি অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে শ্বশুরের গড়ের দিকে ফিরলেন। একটু দূরে গিয়ে তিনি দেখলেন, পাশের ছোট খালটায় দুখানা ছিপ, মশালের আলোয় সজ্জিত হচ্ছে—ভন্ধে তার বুকের রক্ত জমে গেল—সৰ্ব্বনাশ! এরা কি তবে জানতে পেরেছে ? ক্রতপদে অগ্রসর হয়ে গুপ্ত স্থড্রঙ্গের মুখে এসে তিনি দেখতে পেলেন স্বৰ্ডঙ্গের পথ খোলাই গাছে। তার পর তিনি তাড়াতাড়ি মুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়লেন । কীৰ্ত্তি পায় বুঝতেন নিজের হাতের আঙুলগু যদি বিষাক্ত হ’য়ে ওঠে ত তাকে কেটে ফেলাতেই সমস্ত শরীরের পক্ষে মঙ্গল । পরদিন আবার দিনের আলো ফুটে উঠল, কিন্তু লক্ষ্মী দেবীকে আর কোন দিন কেউ দেখেনি। Iা তের হিংস্র অন্ধকার তাকে গ্রাস করে” ফেলেছিল । নরনারা ণ রায় নিজের রাজধানীতে বসে’ সব শুনলেন —গুপ্ত মুড়ঙ্গে র দুধারের মুখ বন্ধ করে কীৰ্ত্তি রায় তার পুত্রবধূর শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেছেন । শুনে তিনি চুপ করে রইলেন । এর কিছুদিন পরে তার কানে গেল—বাশুণ্ডার লক্ষ্মণ রায়ের মেয়ের সঙ্গে শীঘ্র চঞ্চলের বিয়ে । সেদিন রাত্রে চাদ উঠলে নিজের প্রাসাদ-শিখরে .েড়াতে বেড়াতে চারিদিকের শুভ্র সুন্দর আলোর সাগরর দিক দৃষ্টিপাত করে দৃঢ়চিত্ত নরনারায়ণ রায়েরও চোখে ; পাতা যেন ভিজে উঠল—তার মনে হ’ল তার অভাগি ীৈ বৌঠাকুরাণীর হৃদয়-নিঃসারিত নিষ্পাপ অকলঙ্ক * বিত্র মেহের ঢেউয়ে সারা জগৎ ভেসে যাচ্ছে, মনে হ’ল তারই অন্তরের শুামলতায়, জ্যোৎস্না-ধৌত বনভূমির সঙ্গে অঙ্গে তামস্কন্ধর ত্র, নীরব আকাশের তলে তার চোখের দুষ্ট হাসিটি তারায় তারায় নব [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড মল্লিকার মতন ফুটে উঠেছে। নরনারায়ণ রায়ের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন দুৰ্দ্ধৰ্ষ ভূম্যধিকারী দক্ষ্য. হঠাৎ পূৰ্ব্বপুরুষের সেই বর্বর রক্ত নরনারায়ণের ধমনীতে নেচে উঠল, তিনি মনে মনে বললেন,—আমার অপমান আমি একরকম ভুলেছিলাম বৌ-ঠাকৃরুন, কিন্তু তোমার অপমান আমি সহ কখনো করুন না। কিছুদিন কেটে গেল। তার পর একদিন এক শীতের ভোররাত্রির কুয়াস কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল, কীৰ্ত্তি রায়ের গড়ের খালের মুখ ছিপে, মুলুপে, জাহাজে ভরে গিয়েছে। তোপের আওয়াজে কীৰ্ত্তি রায়ের প্রাসাদ-দুর্গের ভিত্তি ঘন ঘন কেঁপে উঠতে লাগল । কীৰ্ত্তি রায় শুনলেন আক্রমণকারী নরনারায়ণ রায়, সঙ্গে দুরন্ত পর্তুগীজ জলদস্থ্য সিবাটিও গঙ্গালেস। উভয়ের সম্মিলিত বহরের চল্লিশখানা কোষা খালের মুখে চড়াও হয়েছে; পুরা বহরের বাকী অংশ বাহির নদীতে দাড়িয়ে । এ আক্রমণের জন্য কীৰ্ত্তি রায় পুৰ্ব্ব থেকে প্রস্তুত ছিলেন—কেবল প্রস্তুত ছিলেন না নরনারায়ণের সঙ্গে গঞ্জালেসের যোগদানের জন্তে । রাজা রামচন্দ্র রায় এবং রাজা লক্ষ্মণ মাণিক্যের সঙ্গে গঞ্জালেসের কয়েক বৎসর ধরে’ শত্রুত চলে আসছে, এ অবস্থায়গঞ্জালেস্ যে, তাদের পত্তনিদার নরনারায়ণ রায়ের সঙ্গে যোগ দেবে—এ কীৰ্ত্তি রায়ের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তা হলেও কীৰ্ত্তি রায়ের গড় থেকেও তোপ চলল । গঞ্জালেস্ স্বদক্ষ নৌ-বীর । তার পরিচালনে দশখান। স্বলুপ চড়া ঘুরে’ গড়ের পাশের ছোট খালে ঢুকতে গিয়ে কীৰ্ত্তি রায়ের নওয়ারায় এক অংশ দ্বারা বাধা প্রাপ্ত গড়ের কামান সেদিকে এত প্রখর যে খালের মুখে দাড়িয়ে থাকলে বহর মারা পড়ে। গঞ্জালেস্ দুখান ছোট কামান-বাহী স্থলুপ ছোট খালের মুখে দাড় করিয়ে বাকীগুলো সেখান থেকে ঘুরিয়ে এনে চড়ার পিছনে দাড় করালে । গঞ্জালেসের অধীনস্থ অন্যতম জলদস্থ্য মাইকেল রোজারিও ডি ভেগা এই ছোট বহর খালের মধ্যে ঢুকিয়ে গড়ের পশ্চিম দিক আক্রমণ করবার জন্তে আদিষ্ট হ’ল । অতর্কিত আক্রমণে কীৰ্ত্তিরায়ের নওয়ার শত্ৰু-বহর ङ्'ल ।