পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"DO8 একজন প্রণয়-প্রার্থী ! আমাকে কত আদর-যত্ন করে, কত সাধ্য-সাধনা করে—কি অদ্ভুত। এর পর আর কি বক্তব্য আছে ? প্রেম যে-রকম অন্ধ এমন আর কেউ নয়। তাই বুঝি প্রেম আমাকে তার নিজের লোক ব’লে মনে করেছে। - সে ভদ্রলোকটি কি করে আমাদের মধ্যে এসে পড়ল আমি জানিনে ; এখানে সে কি করতে চায় তাও জানিনে । এই পৰ্য্যস্ত আমি বলতে পারি, সে-দিন সে ভদ্রলোকটি আমাদের খাবারের টেবিলে আমার বা দিকে বসেছিল—আর আমার দিকে খুব মনোযোগ দিচ্ছিল— আমার প্রতি খুব যত্ব দেখাচ্ছিল। আমি বল্লাম —”এই প্রথমবার আপনার সহিত সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য আমার ঘটেছে।” তিনি উত্তর করলেন —“সত্য, কিন্তু আমি আপনার মা-বাপকে জানি।" আমি উত্তর করুলাম —“আমি আপনাকে স্বাগত-অভিবাদন করি ; কেনন, যিনি আমার পরম দেবতা আমার সেই বাপ-মার প্রতি কিরূপ শ্রদ্ধা করতে হয় তা আপনি জানেন।” তিনি আস্তে আস্তে বললেন —“শুধু তাদের উপরেই যে আমার মমতা আছে তা নয় ।” আমি না ভেবে-চিপ্তে উত্তর করলাম —“তবে আর কাকে আপনার ভাল লাগে ?” তিনি বললেন – “তোমাকে।" “আমাকে ?” তার মানে কি ?” “মানে-আমি তোমাকে ভালবাসি।” “আমাকে ? আমাকে আপনি ভালবাসেন ?” “সত্যই ভালবাসি—উন্মত্তভাৰে ভালবাসি।” এই কথায় আদি লজ্জিত হ’য়ে পড়লেম, আমার ওড়নাটা কাধের উপর একটু টেনে দিলেম । “এই কথাটা আপনি হঠাৎ পেড়েছেন।” “ও । আমার দৃষ্টিতে, আমার ভাবভঙ্গীতে আমার সমস্ত কাজে এ-কৰা প্রকাশ পাবে।” “তা হ’তে পারে, কিন্তু আমি যে অন্ধ, কোন অন্ধ রমণীকে পাবার জঙ্ক কেউ কি কখন সাধ্য-সাধনা করে ?” তিনি বেশ অকপট ভাবে বললেন —“আমি দৃষ্টির কোন তোরাঙ্ক রাখিনে।” তুমি যদি আলো দেখতে না পাও, তাতে আমার কি এসে যায় ? তোমার গঠনটি কি কুন্দর নয় ? তোমার পা-দুখানি কি পরীর মত ছোট্ট নয় ? তোমার পা-ফেলার ধরণটা কি চমৎকার নয় ? তোমার কেশগুচ্ছ কি দীর্ঘ ও রেশমি কোমল নয় ? তোমার গাত্র কি শ্বেত প্রস্তরের মতো নয় ? তোমার মুখের রংটি কি ছুধে আলতার মতো নয় ? তোমার হাত কি পদ্ম ফুলের রংএর মতো নয় ?” ষ্ঠার কথা থেমে গেলেও, সেই কথাগুলি আমার কর্ণে কঙ্কত হ’তে লাগল। আমার হ্যানো আছে, আমার তানে আছে ব’লে আমার রূপের কতই বর্ণনা করলেন—উীর চোখে আমি সুন্দরী ! অন্ধ বালিকার কাছে এরূপ প্রণয়ী শুধু প্রেমের একজন প্রার্থী মাত্র, কিন্তু আমার মতো অন্ধ বালিকার কাছে তিনি প্রণয়ীর চেয়েও বেণী, তিনি একটা দৰ্পণ । আমি আবার বল্লমে — “আপনি যে-রকম বলছেন আমি কি সত্যই সেইরকম সুন্দরী ?” জাচ্ছ, এখন জামাকে কি করতে বলেন ?” “জামার ইচ্ছে তুমি জামার স্ত্রী ও ।" এই কথায় আমি খুব উচ্চস্বরে ছেসে উঠলেম । আমি বললেম —“সত্যই কি আপনার এই প্রবাসী—জাষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ইচ্ছে ? অন্ধের সহিত চক্ষুষ্মানের—রাত্রির সহিত দিনের বিবাহ ? না ! না । আমার মা-বাপ ধনী : আইবুড়ো হ’য়ে থাকৃতে আমার उग्न इग्न ना । वांभि छिब्रखौवन चांइंदूरफ़ॉरें शांकुक्-" তিনি আর কোন কথা না বলেই চলে গেলেন, আমার কাছে সবই সমান। তবে এইটুকু তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়ে গেলেন যে, আমি স্বন্দরী । কিন্তু কে জানে কেন আমার দর্পণ মহাশয়ের উপর আমার একটু টান হয়েছে বুঝতে পারছি। ও পত্রে ভাই আনাই, তোমায় একটা মস্ত খবর দেবার আছে। এই জীবনে কত কি দুঃখের ঘটনা অপ্রকাশিতভাবে এসে পড়ে। কি ঘটেছে তোমাকে বলতে যাচ্ছি, আর আমার অন্ধ চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ছে। আমি যাকে আমার দর্পণ বলি, সেই অপরিচিত ভদ্রলোকটির সঙ্গে বাক্যালাপ হবার কয়েক দিন পরে, আমার মায়ের বাহুর উপর ভর দিয়ে বাগানে বেড়াচ্ছিলেম, এমন সময় হঠাৎ একজন তাকে চেচিয়ে ডাকূলে । আমার মনে হ’ল, আমাদের দাসী আমার মাকে তাড়াতাড়ি খোজ করতে এসে এই ব্যাকুল-কণ্ঠে চীৎকার করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলেম —“ব্যাপারটা কি মা ?” “কিছুই না বাছা ; বোধ হয় কোন লোক দেখা করতে এসেছে । আমাদের যেরকম অবস্থা তাতে আমাদের সামাজিক কৰ্ত্তব্য কিছুকিছু পালন না করলে চলে না। মাকে চুম্বন করে আমি বললেম –“ত হ’লে মা, তোমাকে আর আটকে রাখব না—বৈঠকখানায় গিয়ে দৰ্শন-প্রার্থীদের অভ্যর্থনা কৰ্ম্ম-গে । যাও ।” মা তার তুষার-শীতল ওষ্ঠাধর দিয়ে আমার ললাট স্পর্শ করলেন। তার পর তিনি চ'লে গেলেন—ৰাকর-বিছানো রাস্ত দিয়ে তার পদশব্দ শুনতে পেলেম—ক্রমে সেই পদ্ধশব্দ দুরে মিলিয়ে গেল। মা চলে যাবার পরেই, আমি যেন দুইজন শ্রমজীবীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেম । তারা একলা রয়েছে মনে ক’রে, মন খুলে গল্পগুজব করছিল। দেখ আনাই, যখন ভগবান এক ইত্রিয় থেকে আমাদের বঞ্চিত করেন,—মনে হয় সান্ধন দেবার জন্য, আমাদের অন্য ইলিয়ের শক্তি বাড়িয়ে দেন। অন্ধের শ্রবণ-শক্তি, যারা দেখতে পার তাদের চেয়ে এই কারণে বেশী তীব্ৰ হ’য়ে থাকে। যদিও তারা আস্তে কথা কছিল, তাদের একটি কথাও আমার কান এড়ায়নি। তার এই কথা বলছিল ——“আহা বেচারী। ওদের জন্য দুঃখ হয় আবার ঘটকর এসেছে।” —“আর বালিকাটির মনে একটু সন্দেহও হয়নি। সে আন্দাজ করতেও পারেনি যে তার অজ্ঞতার সুবিধা পেয়ে ওরা তাকে স্বর্থী করবার চেষ্টা করে। “বল কি তুমি ?” “ন, এবিষয়ে সন্দেহ মাত্র নেই। সে কেবল আবলুস কাঠ ও মখমলই হাত দিয়ে স্পর্শ করছে। তবে কিনা, মখমলট বিত্র ময়লা হয়ে গেছে, আবলুসের চেৰুনাইটাও নষ্ট হয়েছে । আহারের সময় খাবার-টেবিলে বসে’ মুখরোচক নানা-রকম খাদ্য-সামগ্রী সে উপভোগ করে ; সে স্বপ্নেও ভাবে না, তার কাছ থেকে ঘরকন্ত্রীর দুঃখৰষ্ট