পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

чрф е হৰে না ? মানুষ তার উত্তর দিচ্ছে, সুন্দর করে বলছে,—জামার তার বাজল, আমার হাদয়ের বাণীতে তোমার নিমন্ত্রণ ধ্বনিত হ’ল, স্বন্দরক্সপে হ’ল, আমার চিত্তে আমার প্রকৃতিতে আমার নানা কৰ্ম্মে, হে চিরসুন্দর, তোমার নিমন্ত্রণকে আমি স্বীকার করলাম, হে আমার পরম, তোমার নিমন্ত্রণ স্বীকার করলাম। আমিও তেমন সুন্দর করে তোমায় চিঠি পাঠিয়েছি যেমন স্বল্পর করে তুমি পাঠালে। যেমন তুমি তোমার অনিৰ্ব্বাণ তারকার প্রদীপ জেলে তোমার দূতের হাত দিয়ে নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছ ; আমাকেও তেমূনি করে আলো জ্বালতে হবে, যে আলো নিববে না, মালা গাখতে হবে যে মালা শুকোবে না। আমি মামুষ আমার ভিতর যদি অস্তরের শক্তি থাকে, আমার সে ঐশ্বধ্য দিয়ে, এই সুন্দর জগতে যে আমন্ত্রণ পাঠিয়েছ সে আমন্ত্রণের প্রত্যুত্তর দেব। মানুষ একথা বলছে, এই বলার ভিতর সে আপনার গৌরবকে প্রকাশ করছে। সেইজন্য যেসমস্ত কবি,শিল্পী, গুণী, জ্ঞানী, হয়েছে তাদের ভিতর দিয়ে মানুব, আপনার নিমন্ত্রণকে স্বীকার করেছে। তাদের খ্যাতি পৃথিবীতে ছেয়ে গেছে। একথাটি যখন আমার মনে হ’ল, আজকার দিনের সানাইয়ের বাজনা যখন শুল্লাম, আমি দেখলাম অনন্তকালের বরবধুর মিলিত হচ্ছে। এ যখন দেখতে পেলাম, তখন আমার মনে এই প্রশ্ন উঠল যে, কি করে’ হ’ল ? স্বরগুলি এই রূপের যে জগৎ, তথ্যের যে জগৎ—যে জগৎকে যলি তুচ্ছ, এক একবার সরিয়ে দিয়ে বলি মায়, দোদুল্যমান, কিছু নেই, অথচ কি দিয়ে সে বলুলে ধনী আছে, গুণী আছে, মানী আছে, এই একটি-একটি যে স্বর সী, রে, গা, মা প্রভূতি, সেগুলিকে সে বিশেষ আকার দিয়েছে, বিশেষ রূপ দিয়েছে। এ নয় যে তার কোম রূপ নেই। অসীমকে প্রকাশ করেছে, অরূপকে রূপ দিচ্ছে যে রাগিণীতে, অসীমের আনন্দরস উচ্ছলিত হচ্ছে যে রাগিণীতে, সে রাগিণীর রূপ আছে, আশ্চৰ্য্য কোন একটা রূপ গ্রহণ করেছে, সে খাম্বাজ কোনপ্রকার স্বর কোন একটা গদ কোন একটা রমণীয় সম্পূর্ণ রূপ গ্রহণ করেছে, যে রূপকে অসীম বলতে পারিনে, রূপ কখনও অসীম হ’ল পান না। রূপের সীমা আছে; কাব্যের সীন আছে তা নয়, সে রূপকে যদি বড় করতে চাম গু হ'লে তাকে খৰ্ব্ব করে। আজকে এই যে বঁাশী ৰাজছে, খুব উঁচুদরের বাজছে তা নয়, খেলোরকমের একটি স্বর আজকালকার আধুনিকরকমের খাম্বাজে আলাপ করছিল, আলাপ নর গদ বাজাচ্ছিল, বারংবার s পুনরাবৃত্তি করছিল । হোলির সময় পশ্চিম দেশে দেখা যায় যার স্বরে উন্মত্ত হ’য়ে যায় একটা গদ নিয়ে বারংবার পুনরাবৃত্তি করে তাল বাজিয়ে ঝন ঝন শব্দ করছে। তাতে কি করে ? আয়তনে বড় করে, একটা সঙ্গীতের সপ্তক কেটে ২৩ সপ্তক করে ১ ঘণ্টা ২ ঘণ্টা বিস্তৃত করে দেয়, তার ভিতর সংযম নেই। সমস্ত কলা-বিদ্যার মধ্যে বে সংযম থাকে সে সংযম নেই, ক্রমাগত বাজিয়ে চলছে, টানের পর টান, আবৃত্তির পর আবৃত্তি -পুনরাবৃত্তি, তাতে কি করে ? রসকে নষ্ট করে। তা হ’লে আয়তনে এই রসের প্রকাশ নয়, বড় করে অসীমকে আমরা প্রকাশ করতে পারিনে, কেবলমাত্র আয়তনের সীমাকে বড় কৰূলে উণ্টে হয়, আমরা তাকে নষ্ট করি। অর্থাৎ যখন রূপ নিতান্ত কেবল নিজেকে দেখে তথন অরূপকে অচ্ছন্ন করে, বারংবার যখন একই পদ ফিরে ফিরে আসে তখন আমাদের চিত্ত সেই রূপের মধ্যে অন্তর্নিহিত অরূপের বাণী শুনতে পায় না, সে রূপ নিজকে ঢেকে ঢেকে দিতে থাকে, সে ফিরে ফিরে’ বলে—আমাকে দেখো । আমরা কেন তোমাকে দেখ ব? আমরা ছুটি নিতে এসেছি। যে বাণী সে অত্যাচার থেকে ছুটি দেবে , সে বাণী আমাকে বন্ধন করতে চায়, বাণীর বন্ধন এখানে আমাদিগকে ক্লেশ দেয়। প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড সেইজস্ত যখন আমরা সাহিত্যে, কাব্যে, চিত্রে এমন-কিছু দেখি যে আপনার যে technique–সীমা—তাকে একান্ত করে ঢেকে দিতে চায়, তখন তাঁকে ক্ষমা করা অসম্ভব হয়। আপনার ক্ষেত্রে অধিক পাওয়া কেবল বাহুল্য, নয় বিপজ্জনক। পেটুক যখন খেতে বসে তার মনের ক্ষুধ শেষ হ’লেও খাওয়া শেষ হয় না । এতে অনিষ্ট হতে পারে, ডাক্তারের শরণাপন্ন হ’তে হয়, লোকে খুনী হয় সেরকম মানুষকে খাইয়ে, মেয়েরা তাদের আরো খেতে বলে, শেষ কালে, খেয়ে খেয়ে একদিন আসে, যখন তাদের সেবা করবার ডাক পড়ে। এ খাওয়া বাহুল্য । যা বাহুল্য, অনেক সময় সংসার তা মাপ করে” থাকে ; কিন্তু রসের ক্ষেত্রে, কাব্য এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রে যেখানে আমরা দেখি রস ও রূপের বন্ধন থেকে যা আমাদের মুক্তি দেবে সেখানে রূপ যদি লাভ দেখতে আসে, যদি সে নিজকে বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বড় করে দেখে তা হ’লে অত্যন্ত সে শাস্তির যোগ্য হয়। যে সৰ্বৰে ভূত ছাড়াবে তাকে যদি ভূতে পায় তা হ’লে যেমন হয়, এও সে-রকম এ-কথা অনেক লেখক ভুলে যান। অনেক পাঠক হিসাব করেন, যাত্র আরম্ভ হ’ল সন্ধ্যা ৫টা থেকে পরের দিন বেলা ১টা পর্যন্ত চলুল। তাকে দিয়েছি ৫•• টাকা, তারা হিসাব করে, এই সময়ে তারা কত উপার্জন করেন, রস-সমগ্রীর আয়তন দ্বারা বিচার হতে পারে না। অনেক অনভিজ্ঞ, আনাড়ী ১০ ফৰ্ম্মার জায়গায় ১৫ ফৰ্ম্ম পেলে ভারি খুসি হয়। তারা যে কত বোঝা ঘাড়ে করে নেয় হিসাব করে না । তা হ’লে যারা কলাবিদ্যার রসকে প্রকাশ করছে তাদের একটা মস্ত সমস্ত মেটাতে হয়। রূপ না হ’লে হয় না, রূপের ভিতর দিয়ে অরূপকে প্রকাশ করতে হয়, তা না হ’লে বিশ্ব-ব্ৰহ্মাও সৃষ্টি হ’ত না, অসীম নিজকে সীমার মধ্যে প্রকাশ করছে, আমাদের ভিতর ভূম রূপকে অবলম্বন করে অরূপ রসকে প্রকাশ করে থাকে, সে রূপকে মানতেই হবে, আবার নাও মানতে হবে, মানতে হবে এই রূপ কিছু নয়, এটাকে সরিরে দিন এমন করে সেই রূপটিকে ধরতে হবে যাতে সে আপনাকে প্রকাশ না করে ; আমাদের এই দেহকে দেখলে টের পাই। আমাদের এই যে হজম হওয়ার কল স:, রক্ত চালনা করে ভিতরে, চিস্তা করবার কল আছে মাখার মধ্যে, ভগবান সব কল ঢেকে দিয়েছেন, আমাদের এই যন্ত্রগুলি সমস্ত ঢেকে দিয়েছেন, ঢেকে দিয়ে কি রেখেছেন ? এই যে মুখের ভিতর দিয়ে চিবিয়ে খাই এ-কথা মুখ বেশী করে বলে কি ? না, মুখের ভিতর রসের যে রঙ্গভূমি, হাসিকান্নার যে খেলা ঘর, সে কি আমাদের মুখে সেই ? ' বাহুতে, সত্য বটে, আমরা কাজ করি, কিন্তু যে কাজ করে সে যে ভিতরকার মাংসপেশী। সে মাংসপেশী ফুলিয়ে ফুলিয়ে বারা পালোয়ানি করে বেড়ায়, তারা কি দেহের যে সঙ্গীত তাকে ঠিক প্রকাশ করছে ? এই গানের ভিতর রসের প্রকাশ কতরকম করে’ হ’য়ে এল, কত ছন্দে, কত নৃত্যে সেটা দেখলাম, ভিতরে আশ্চৰ্য্য কল রয়েছে, স্নায়ুপেশী, অস্থি প্রভৃতি একেবারে সব ঢেকে দিয়েছেন। পা চলে বটে, কিন্তু প। যে কল নিয়ে চলে সে কল ঢাকা পড়েছে : পায়ের চলার মধ্যে যে ছন্দ আছে, Rhymo আছে সেটা প্রকাশ পায়। ভিতরে আশ্চৰ্য্য স্বনিপুণ কল আছে। স্বষ্টিকৰ্ত্তা বলেন আমি তোমার অন্ত প্রশংসা চাইনে । যারা Muগtical College এ কেটে কেটে দেখে তারা ওস্তাদ বটে, তিনি বলেন—ওস্তাদজীর প্রশংসা আমি চাইনে, আমি ভাল Engineer এটা নাই জানলে বাপু। তবে কি জানবে ? আমাকে জান। এই রঙ্গভূমিতে আমার রসলীলা, সে তোমার মুখে, চোখে, বাহুতে, নৃত্যে, কণ্ঠে। আমি সে প্রকাশকে দেখতে চাই, দেখাতে চাই। নেই আমার সকলের চেয়ে বড় প্রকাশ, আমাদের