পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ও৭২ প্রখালী-আষাঢ় ১৩৩১. [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড লোকে মোটেই লাভজনক মনে করে না, যেহেতু বিবাহের পর কঙ্গ পরিবারাস্তরে চলিয়া যায় এবং সেজন্ত তাহার শিক্ষার্থ একান্নবৰ্ত্তী পরিবারের ধন হইতে যাহা ব্যয় হয়, তাহাতে সেই পরিবারের মোটেই লাভ হয় না। পক্ষাস্তরে একান্নবৰ্ত্তী পরিবারের ধন-ভাণ্ডার হইতে ছেলের শিক্ষায় যাহা ব্যয় হয় ছেলের উপার্জিত অর্থ দ্বারা তাহা পূর্ণ হইতে পারে। আরও একটি কথা । কস্তার বিবাহে অনেক ব্যয় করিতে হয়; ছেলের বিবাহে যৌতুকাদি দ্বারা একান্নবর্তী পরিবারে ধনাগম ঘটে। এইসকল কারণে হিন্দুপরিবারে পুত্রসস্তান যেরূপ আনন্দের বিয়য় বলিয়া পরিগণিত হয়, কস্তা সেইরূপ একটা দুর্ভাগ্য ও নিরানন্দের ছায়া বিস্তার করে। ইংলণ্ডের ন্তায় স্বাধীন দেশে কিন্তু ইহার ঠিকৃ বিপরীত ভাব সমাজে দেখিতে পাওয়া যায়। ইংরেজ পিতামাতা মনে করিয়া থাকে ঃ “পুত্র মম রহে পুত্র যতদিন বিবাহ না হয় । ভক্তিমতী কন্যা কিন্তু চিরদিন কন্যারত্ব রয় ॥” শিক্ষা-বিস্তার দ্বারা কঠোর সমস্তার মীমাংসা হইতে পারে। আমাদের জাতীয় জীবনে এখন এমন এক সময় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে যখন স্ত্রীলোকের মধ্যে প্রচুরপরিমাণ স্বশিক্ষা-বিস্তারের ব্যবস্থা অবিলম্বে করা আবগুক। ভারতের স্ত্রীপুরুষ প্রত্যেকের মধ্যে একটা জাগরণের ভাব আবিভূত হইয়াছে। প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া স্ত্রীলোক আর গৃহ-কোণে আবদ্ধ হইয়া সন্তুষ্ট থাকিতেছে না। তাহারাও জাতীয় জীবন-সংগঠনব্যাপারে স্বামী ভ্রাতা বা পুত্রের সহায়তা করিতে ব্যগ্র ও উৎসুক হইয়া উঠিয়াছে। এরূপ অবস্থায় স্ত্রীলোকদিগকে গৃহকোণে আবদ্ধ করিয়া রাখার অর্থ জাতির অর্ধেক অংশকে মৃতকল্প করিয়া রাখা । প্রত্যেক বালিক বাঁহীu৩ অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষণ পাইতে পারে তাহার ব্যবস্থা করা প্রত্যেক মিউনিসিপ্যালিটির পক্ষে এক্ষণে অবশ্বকৰ্ত্তব্য । এই ব্যবস্থা করিবার জন্ত আমাদের শিক্ষাসচিবদিগকে সদা-সর্বদা তাহাজের এই সবগু-কৰ্ত্তব্য কটি স্বরণ করাইয়া দিতে হইবে । বর-পণ বা যৌতুক-প্রথাও ভারতীয় স্ত্রীলোকের শিক্ষা বিস্তারের এক অন্তরায় । এই প্রথা সমাজে প্রচলিত আছে বলিয়া একদিকে যেমন ছেলেদের শিক্ষা-বিস্তারের সাহায্য করিয়াছে অন্যদিকে সেইরূপ মেয়েদের শিক্ষাপ্রসারের বাধা ঘটাইয়াছে । কস্তার বিবাহের খরচের জন্ত অধিকাংশ পিতামাতাকে কস্তার জন্ম হইতেই এত উদ্বিগ্ন থাকিতে হয় যে, তাহাদের শিক্ষার জন্য পিতামাতা বস্তুত: প্রচুর পরিমাণে সঞ্চয় বা ব্যয় করিবার কথা মনে স্থান দিতে পারে না। বিবাহের বাজারে আমূদ্রানি ও কাটুতির নিয়মানুসারে বর-পণ পরিচালিত হইতেছে। হিন্দুসমাজে জাতিনির্বিশেষে বিবাহের প্রথা আইনসঙ্গত নহে বলিয়া কস্তার পক্ষে উপযুক্ত বর-লাভের স্থযোগ খৰ্ব্ব হইয়া আছে। সুতরাং প্রাপ্তবয়স্ক কস্তার পিতাদের মধ্যে যে যত বেশী দাম দিতে পারে, সে-ই বরক্কপ পণ্যদ্রব্য নীলামে তত সহজে ক্রয় করিতে পারে । এই রোগের একমাত্র ঔষধ অসবর্ণ বিবাহের প্রথা প্রচলিত করা এবং তদ্বারা বর-কন্ত নির্বাচনের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা । এই যৌতুক-প্রথা উত্তরাধিকারিত্বের একদেশদর্শী আইনবশতঃ এরূপ চিরস্থায়ী হইয়া পড়িয়াছে । পুত্র জীবিত থাকিলে বিবাহিতা বা অনুঢ়া কন্যার পৈতৃক সম্পত্তিতে কোন অধিকার থাকে না । এইজন্তই মনে হয় বিবাহ-উপলক্ষে বর-পণ দ্বারা পৈতৃক সম্পত্তি হইতে কন্যার ন্যায্য অংশ আদায় করিয়া লওয়ার ব্যবস্থা সমাজে স্থান পাইয়াছে। পৈতৃক সম্পত্তিতে যে-পৰ্য্যস্ত কন্যাকে ন্যায্য অধিকার দেওয়ার আইন না করা হয়, সে-পৰ্য্যন্ত সমাজ হইতে বর-পণ-প্রথা উঠিয়া যাইতে পারে না ; যদিও স্নেহলতার ন্যায় মেয়েরা বরপণ-জনিত দুঃখে জর্জরিত পিতার দুর্দশা দেখিয়া আত্মহত্যা করিয়া আসিক্রেহে ; আমাদের হিন্দুদের মধ্যে বাল্য-বিবাহ আর-একটা সামাজিক কুপ্রথা। ইহার ফলেই আমরা শর্করাবাহী জন্তু-বিশেষের মত হুইয়া পড়িয়াছি । ইংরেজ-রাজ যদি ভারতসাম্রাজ্য ত্যাগ করিয়া বনে চলিয়া যায়, তাহা হইলেও আমরা অপর কোন ক্ষমতাশালী জাতির দাসস্বরূপ হইয়াই থাকিব, কেননা আমরা বাল্য-বিবাহের