পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজপথ [ २७ ] শীতটা প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছিল ; কিন্তু কয়েকদিন অবিশ্রাস্ত বৃষ্টি ও বায়ুর ফলে একটা তীব্র কন্‌কনানিতে শুধু মানুষের দেহ নয়, মন পৰ্য্যস্ত আৰ্ত্ত হইয়া উঠিয়াছিল। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বায়ু আর্দ্র এবং বেগবান, রাজপথ কর্দমাক্ত : ঠাগু হইতে রক্ষা পাইলার অনাবশ্যক আগ্রহে প্রমদাচরণ র্তাহার বসিবার ঘরের দ্বার ও জানালাগুলা বিবিধ কৌশলে মুক্ত, অৰ্দ্ধ-বিমুক্ত ও অবরুদ্ধ রাখিয়া এবং দেহ বহুবিধ উপায়ে আবৃত ও আচ্ছাদিত করিয়া সদ্য-লব্ধ সংবাদপত্র পাঠ করিতেছিলেন । দেখিতে-দেখিতে সহসা একটা সংবাদের উপর দৃষ্টি পড়ায় প্রমদাচরণ বিশেষরূপে উৎসুক হইয়া উঠিলেন। আরম্ভ হইতে শেষ পর্য্যস্ত গভীর আগ্রহের সহিত পাঠ করিয়া তিনি পেন্সিল দিয়া সংবাদটি চিহ্নিত করিলেন, তৎপরে হঠাৎ কি মনে করিয়া পাশের দেরাজ হইতে লাল-নীল পেন্সিল বাহির করিয়া লাল পেন্সিল দিয়া সমগ্র সংবাদটি রেখাবৃত করিয়া দিলেন। দেরাজে তখনও লাল-নীল পেন্সিল পুনঃস্থাপিত হয় নাই, দ্বার ঠেলিয়া স্বমিত্রা ঘরে প্রবেশ করিল এবং প্রমদাচরণের চেয়ারের বাম পাশ্বে আসিয়া দাড়াইয়া বলিল, “বাব, আজ বড় বেশী ঠাণ্ডা পড়েছে, আজ তোমার জন্তে এক পেয়ালা চা তৈরী করে নিয়ে আসি ।” বহুকাল হইতে প্রমদাচরণের নিয়মিত চা-পানের অভ্যাস ছিল এবং ক্রমশঃ সেই অভ্যাস স্বধৃঢ় আসক্তিতে পরিণত হইয়াছিল। কিন্তু স্বমিত্রা চা ছাড়িবার পর হইতে তিনিও ক্রমশঃ চা-পান বন্ধ করিয়াছিলেন । সম্ভবতঃ এই আসক্তি-বর্জনের সহিত অপত্য-স্নেহেরই একমাত্র যোগ ছিল । মুখে কিন্তু প্রমদাচরণ সে-কথা স্বীকার করেন না ; বলেন বয়স বেশী হইলে চা-পান অনিষ্ট করে; স্নায়বিক দৌৰ্ব্বল্য বাড়ায় । জয়ন্তী ক্রুদ্ধ-কণ্ঠে বলেন, “স্বায়বিক দোৰ্ব্বল্যের কথ জানিনে, তবে মানসিক দুৰ্ব্বলতা তোমার খুব বাড়ছে, তা দেখতেই পাচ্ছি।” তদুত্তরে প্রমদাচরণ স্মিতমুখে বলেন, “স্বায়ুর সঙ্গে মনের এমন ঘনিষ্ঠ যোগ আছে যে, একটার দুর্বলতা বাড়লেই অপরটার দুর্বলতাও বাড়ে।” কথা শুনিয়া জয়ন্তীর পিত্ত জলিয়া উঠে ! বলেন, “কিন্তু তোমার ধিঙ্গী মেয়ে যত প্রবল হয়ে উঠছে, তুমি কেন তত দুৰ্ব্বল হয়ে পড়ছ তা আমাকে বুঝিয়ে দিতে পার ? এটা তোমাদের কিরকম যোগ ?” একথার উত্তরে প্রমদাচরণের মুখ দিয়া কোনও কথা বাহির হয় না, মনে-মনে বলেন, "দুৰ্য্যোগ ! তবে মেয়ের সঙ্গে নয় ; উপস্থিত মেয়ের গর্ভধারিণীর সঙ্গে !’ সুমিত্রার সহিতও মাঝে মাঝে এপ্রসঙ্গ হয়, কিন্তু তাহা একেবারে বিভিন্ন ধারায় । বৃদ্ধ-বয়সে পিতা এতদিনের চায়ের নেশা পরিত্যাগ করায় স্বমিত্রা মনে-মনে আনন্দিত ন ছিলই না বরং কিছু দুঃখিত ছিল। তাই সে তাহার পিতাকে চা-পানে প্রবৃত্ত করিতে মাঝে মাঝে চেষ্টা করিত । ঠাণ্ডা বেশী পড়িলে প্রমদাচরণের দুই-তিন পেয়াল চা বাড়িয়া যাইত, সে-কথা স্থমিত্রার জানা ছিল । তাই প্রত্যুষে উঠিয়া বৃষ্টি বায়ু ও শীতের প্রকোপ দেখিয়াই তাহার মনে হুইয়াছিল যে, আজ এক পেয়ালা তপ্ত চা তাহার পিতাকে পান কমাইতে হইবে। প্রমদাচরণ কিন্তু মাথা নাড়িয়া স্মিতমুখে বলিলেন, “ন, ম', যে নেশাট একরকম কাটিয়ে উঠেছি আর ইচ্ছে করে তার অধীন হচ্ছিনে!” স্বমিত্র প্রদাচরণের স্বন্ধে ধীরে-ধীরে হস্তার্পণ করিয়া বলিল, “চায়ের আবার নেশা নি বাবা ? তা ছাড়া, আজ বড়ড ঠাও। আজ এক পেম্বালা চা খেলে তোমার শরীর ভাল থাকৃবে।” একটু চুপ করিয়া থাকিয়া প্রমদাচরণ বলিলেন,