পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՑԳեր প্রমদাচরণের কথার একটা বাক্য শুনিতে না পাইয়াও জয়ন্তী অনুভব করিলেন যে, এই যত্নকৃত মৌনতার জব্যবহিত পূৰ্ব্বেই একটা কোনও আলোচনায় কক্ষটি মুখর ছিল। একবার স্বামীর মুখের প্রতি এবং একবার কস্তার মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তিনি শুধু বলিলেন, “কি হয়েছে ?” চেয়ারের উপর আরও খানিকটা উচু হইয়া উঠিয়া বসিয়া প্রমদাচরণ বলিলেন, “না, কিছু হয়নি ; স্বদেশী ব্যাপারে স্বরেশ্বরের এক বছর জেল হয়েছে, সেই কথা হচ্ছিল।”

  • জেল হয়েছে ? কেমন করে জানলে ?” সমস্ত মুখের উপর হর্ষের একটা আরক্ত দীপ্তি জয়ন্ত্রী কিছুতেই নিৰাৱিত করিতে পারিলেন না।

খবরের কাগজখানা সম্মুখে উন্মুক্ত অবস্থাতেই পড়িয়াছিল, প্রমদাচরণ নিমিষের জন্ত একবার লাল রেখার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, “খবরের কাগজে ৰেরিয়েছে।” প্রমদাচরণের দৃষ্টি-পথ অনুসরণ করিয়া দেখিয়া জয়ন্তী বলিলেন, “তা অমন করে লাল-পেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়েছ কেন ? খবরটা খুব স্বসংবাদ নাকি ?” . প্রমদাচরণ ক্র কুঞ্চিত করিয়া ক্ষণকাল নিঃশব্দে সংবাদপত্রের রেখান্বিত অংশে চাহিয়া রহিলেন, তাহার পর ধীরে ধীরে বলিলেন, "একদিক থেকে স্বসংবাদই বটে।” জয়ন্তী মাথা নাড়িয়া বলিলেন, “তোমার পক্ষে কোন দিক থেকে স্বসংবাদও নয়, দুঃসংবাদও নয়।” জয়ন্তীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া ঈষৎ দ্বিধাজড়িতভাবে প্রমদাচরণ বলিলেন, “একটা কথা ভুলে যাচ্ছ, জয়ন্তী ; তুমি যে সেই রেজেক্ট চিঠিটা পেয়েছিলে, সে কথা ভুলে যাচ্ছ। স্বরেশ্বরের জেল হওয়ায় এখন আর কোনও সন্দেহ রইল না যে সে চিঠির কথাটা মিথ্যা।” এই পত্রের উল্লেখে ক্রোধে জয়ন্তীর ক্র কুঞ্চিত হইয়া উঠিল; আরক্তমুখে কহিলেন, “সেইজন্যেই সংবাদটা স্বসংবাদ বুঝি ? স্বরেশ্বর একজন নন-কো-অপরেটার, গবর্ণমেণ্টের শক্র, এইটে গুমণি হওয়াতেই তুমি খুব খুলী হয়েছ ?” + প্রবাসী—জাষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড খুলী হইয়াছেন সে কথা বলিতে প্রমদাচরণের সাহস হইল না, কিন্তু নিরুত্তরে বসিয়া থাকিয়া কতকটা সেইরূপ ভাৰই প্রকাশ করিতে লাগিলেন। নিঃশৰে ক্ষণকাল প্রমদাচরণের উপর অগ্নি-দৃষ্টি বর্ষণ করিয়া তীব্র-কণ্ঠে জয়ন্তী বলিলেন, “দেখ এখনও গবর্ণমেন্টের টাকাতেই এই পরিবারটির অন্ন-বস্ত্র চলছে। চিরদিনই চলেছে সে কথা না হয় এখন ভুলেই গেছ ! এতটা নিমকৃহারামি ভাল নয় । মাসের ২রা তারিখে পেনসনের টাকাটি আনিয়ে নিয়ে তার পর সমস্ত মাস ধরে’ বাপে-ঝিয়ে মিলে নন-কো-অপারেশনের চর্চা করায়, আর একজন নন-কো-অপারেটারের জেল হ’লে তার জেলের খবর লাল-পেন্সিল দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় একটুও পৌরুষ নেই!” কথাটা হয়ত ঠিক্ এতটা কঠিন করিয়া বলিবার জয়ন্তীর ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু স্থমিত্রার সম্মুখে রেজেক্ট চিঠির উল্লেখ করিয়া স্বরেশ্বরের সমর্থন করায় জয়ন্তী সমস্ত সংযম হারাইয়া নিষ্ঠুরভাবে স্বামীকে আক্রমণ করিলেন । প্রমদাচরণ এবারও নিরুত্তর বসিয়া রহিলেন, কিন্তু এতখানি পিতৃ-লাঞ্ছনা স্বমিত্রার সহ হইল না। অপাঙ্গে পিতার দুঃখ-পাণ্ডু মুখ নিমেষের জন্য একবার দেখিয়া লইয়া সে প্রমদাচরণকেই সম্বোধন করিয়া বলিল, “বাবা, চাকুরী করা মানে কি তা হ’লে এইরকম করে’ আজীবন গবর্ণমেণ্টের দাসত্ব করা গবর্ণমেন্টের অপছন্দ কোনো বিষয় নিয়ে কখন ভাবতেও পারবে না, আলোচনাও করতে পারবে না ?” প্রমদাচরণ শাস্তম্বরে বলিলেন, “কি জানি মা, তোমার মা ত’ সেইরকমই বলছেন।” তাহার পর সহসা তাহার বেদনাহত নেত্ৰ জয়ন্ত্রীর প্রতি উখিত করিয়া বলিলেন, *আচ্ছা জয়ন্তী, তুমি কি এই বলতে চাও যে আমি যদি নন-কো-অপারেশনের চর্চা করি, কিম্বা কোনো নন কোঅপারেটারের সঙ্গে সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন না করি, তা হ’লে আমার গবর্ণমেণ্টের কাছ থেকে পেন্‌গুন নেওয়া উচিত नग्न ?* জয়ন্তী একমুহূৰ্ত্ত চিন্তা করিয়া বলিলেন, “আমি তোমার অত সব গোলমেলে কথা জানিনে, আমি