পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Հ8 ব্যারিটারীতে যখন র্তাহার খুব পসার ও প্রতিপত্তি তখনও তিনি কাৰ্য্য-বাহুল্যের মধ্যেও নানা লোকহিতকর সাৰ্ব্বজনিক কাজে যোগ দিতেন । দেশের কল্যাণ সাধনের ইচ্ছা তাহার ছিল । ১৯০৪ সালে তিনি বৰ্দ্ধমানে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মিলনের সভাপতি হন। সেই সময়ে তাহার অভিভাষণে তিনি প্রথম বলেন, যে, “পরাধীন জাতির কোন রাষ্ট্রনীতি নাই”(“এ সব জেক্ট নেখন হ্যাজ নো পলিটিক্স)। তৎকালে এই উক্তি লইয়া খুব আলোচনা হইয়াছিল, এবং বঙ্গের রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার উপর উহার প্রভাব অনুভূত হইয়াছিল। 鬱 ১৯১২ খৃষ্টাব্দে চৌধুরী মহাশয় দিনাজপুরে বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মিলনের সভাপতি হইয়াছিলেন । তিনি বাংলার ভূস্বামী-সভার সংস্থাপক ও প্রথম অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি জাতীয় শিক্ষা-পরিষদূ এবং কলিকাতা স্কাশন্যাল কলেজের অন্যতম সংস্থাপক ছিলেন । এই ন্যাশনাল কলেজের যে বিভাগে ব্যাবহাবিক বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহা বরাবর স্বপরিচালিত হইয়া আসিতেছে। ইহা হইতে উত্তীর্ণ অনেক ছাত্র যোগ্যতার সহিত কারখানা আদিতে কাজ করিতেছেন। ইহা সম্প্রতি শিয়ালদহ ষ্টেশন হইতে ৬ মাইল দূরবর্তী যাদবপুর নামক স্থানে নিজের বাড়ীতে স্থানান্তরিত হইয়াছে। চৌধুরী মহাশয় যেমন বে-সরকারী জাতীয় শিক্ষা-পরিষদের সহিত প্রথম হইতে যুক্ত ছিলেন, তেমনি গবর্ণমেণ্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট এবং সিণ্ডিকেটেরও সভ্য ছিলেন । বস্তুত: আমাদের দেশে শিক্ষার বিস্তৃতি ও উন্নতি এত কম হইয়াছে, ইহাতে বৈচিত্র্য এত কম, এবং ইহা এরূপ কম রকম-ওয়ারি, যে, শুধু সরকারী বা শুধু বে-সরকারী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলিদ্বারা দেশের শৈক্ষিক প্রয়োজন সিদ্ধ হইতে পারে না। সকলপ্রকার বর্তমান প্রতিষ্ঠানেরই দোষ-ত্রুটি আছে, সংশোধন ও সংস্কারের প্রয়োজন আছে ; কিন্তু জাতীয় ক্ষতি না করিয়া কোনপ্রকার প্রতিষ্ঠানকেই বিলুপ্ত করা চলে না। সম্ভবতঃ চৌধুরী মহাশয়ের প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ २8* छोण, sञ थ७ ধারণাও এইরূপ ছিল বলিয়া তিনি উভয়বিধ প্রতিষ্ঠানেরই সহিত যোগ রক্ষা করিতেন। যেসকল সাৰ্ব্বজনীন প্রচেষ্টায় খুব হুজুক আছে, কোলাহল আছে, উত্তেজনা-উন্মাদন ও বিদেশ হইতে আমদানি হাত-ভালি পাইবার সম্ভাবনা আছে, তাহার সহিত যুক্ত থাকিলে খুব নামজাদা হওয়া যায়। কিন্তু এমন অনেক ভাল কাজ আছে, যাহাতে এসব কিছু নাই । তাহা করিলে সমাজের উন্নতি হয়, লোকের বিমল আনন্দ বিধান করা যায়, আত্মপ্রসাদ লাভ হয়, কিন্তু হাততালি পাওয়া যায় না, নামজাদা হওয়া যায় না। চৌধুরী মহাশয়ের পত্নী শ্ৰীমতী প্রতিভা দেবী, র্তাহার স্বামীর সম্পূর্ণ অনুমোদন ও সহযোগিতায়, “সঙ্গীতসংঘ” নামক সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান আমরণ চালাইয়া ছিলেন। তাহার জন্য তিনি সময়, শক্তি, অর্থ, হৃদয়ের ঐশ্বৰ্য্য নিয়োগ করিয়া ধন্য হইয়াছিলেন । জাতির হৃদয়মনের উৎকর্য সাধনার্থ সঙ্গীত ও অন্যান্য ললিতকলার অকুশীলন আবশ্যক। এদেশের অধিকাংশ শিক্ষিত লোক এখনও এবিষয়ে উদাসীন। চৌধুরী মহাশয় সৰ্ব্বতোমুখী শিক্ষার এবং সকল দিকে প্রবুদ্ধমনা হইবার মর্য্যাদা বুঝিতেন। এইজন্য তিনি পত্নীর মৃত্যুর পরেও সঙ্গীত-সংঘ বজায় রাখিয়াছিলেন। তিনি ভারতীয় চিত্রকলারও রসজ্ঞ ছিলেন । ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে যখন বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার কোন কোন সভ্য প্রাচ্য কলার অনুশীলনার্থ স্থাপিত ইণ্ডিয়ান সোসাইট অব ওরিয়েণ্ট্যাল আর্ট নামক ভারতীয় সমিতির সামান্য সরকারী সাহাধ্য বন্ধ করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, তখন তিনি তাহাতে বাধা দিয়াছিলেন। চৌধুরী মহাশয় সদালাপী, মিষ্টভাষী, বিনয়নম্র ও অমায়িক লোক ছিলেন। যেমন কাজের লোক ভিন্ন সংসার চলে না, তেমনি কেবল কাজের লোকই পৃথিবীতে থাকিলে লোকালয়ের আনন্দ ভ ঐ-সৌন্দৰ্য্য থাকে না । তজন্য সামাজিকতারও প্রয়োজন আছে। চৌধুরী মহাশয় যে কাজের লোক ছিলেন না, তাহা নহে; কিন্তু তিনি সামাজিকতার জন্যও লোকপ্রিয় ছিলেন ।