পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Oo বিভাগ, সমিতি ও কমিটির সভাপতি ছিলেন ; কিন্তু নরহাজির রোগ তাহাকে আক্রমণ করিতে পারে নাই । তিনি সৰ্ব্বত্রই নামে ও কাজে নেতৃত্ব করিতেন। খুঁটিনাটি সব বিষয়েই এতটা করিবার প্রয়োজন ছিল না ; এবং তাহার ফলে র্তাহার যে সময় ও শক্তি উচ্চতর কার্য্যে ব্যয়িত হইলে জাতি ও জগৎ লাভবান হইতে পারিত, তাহা সম্ভব হয় নাই ; অধিকন্তু অন্যদের নেতৃত্বশক্তি বিকশিত হইবার যথেষ্ট স্বযোগও ঘটে নাই। তাহার স্থানাভিষিক্ত হইবার লোকের অভাবের ইহা অন্যতম কারণ। কিন্তু আশু-বাবুর স্বভাবনেতৃত্ব, আত্মনির্ভর, আত্মবিশ্বাস ও কষ্ঠিত অসামান্য ছিল বলিয়া, তিনি সময় ও শক্তি সম্বন্ধে মিতব্যয়ী ও সকল দিকে বিবেচক হইতে পারেন নাই। অনুমান হয়, আশু-বাবুর এই উচ্চাভিলাষ ছিল, যে, কালক্রমে র্তাহার বিশ্ববিদ্যালয় যেন, শুধু ভারতে নয়, পৃথিবীতেও প্রথমশ্রেণীস্থ বলিয়। পরিগণিত হয়, এবং শেষে সৰ্ব্বপ্রধান হয় ; যদিও এই উদ্বেগু সাধনার্থ অবলম্বিত নীতি ও উপায়সমূহ সকলস্থলে তদুপযোগী বলিয়া স্বীকৃত হয় নাই। জাণ্ড-বাবুর আশার ভিত্তি ছিল তাহার নিজের মানসিক শক্তিতে বিশ্বাস এবং তাহার স্বদেশ-বাসীর মানসিক শক্তিতে বিশ্বাস। এইজন্য, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণীয় প্রধান প্রধান বিদ্যা ও বিজ্ঞানের, প্রত্যেকটিতে, সমুদয় না হউক, কতকগুলি অধ্যাপক ভারতীf । অবশ্য শিক্ষাক্ষেত্রে বিদেশী জ্ঞান বা বিদেশী অধ্যাপক কিছুই বর্জন করিবার পাগলামি তাহার ছিল না। কিন্তু তা বলিয়, তাহার স্বদেশ-বাসীর মানসিক শক্তি ও জ্ঞান অবহেলিত, অবমানিত, ও অবসাদিত হইয়া ভারতীয় প্রতিভা ভগ্নোৎসাহ হইবে, ইহাও র্তাহার অসহ ছিল। তাহা যাহাতে না হয়, তাহার উপায়ও তিনি করিয়াছিলেন। ভারতীয় মানসিক শক্তির কার্য্যক্ষেত্র তিনি ক্রমেই বিস্তৃত করিতেছিলেন। দেশীয় প্রতিভার প্রতি র্তাহার এই আস্থা যে ভিত্তিহীন মহে, তাহাও তিনি দেখিয়া গিয়াছেন। তিনি গুণজ্ঞ, গুণগ্ৰাহী ও গুণের উৎসাহদাতা ছিলেন,—যদিও শক্তিশালী লোকদের স্তাবকবাৎসল্যের দোষ তাহাকেও স্পর্শ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড করিয়াছিল। বিজ্ঞান কলেজের অধ্যাপকতা ও গবেষণ|বৃত্তি আদি যে সমস্তই খাটি ভারতীয়দিগের জন্য বলিয়া বন্দোবস্ত আছে, তাহ অবশ্য রাসবিহারী ঘোষ ও তারকনাথ পালিত মহাশয়দ্বয়ের দানের দলিলেরই অন্তর্গত । কিন্তু এরূপ অকুমান করিবার কারণ আছে, যে, ইহাতে আণ্ড-বাবুরও পরামর্শ ও হাত ছিল। এই উভয় দাতার প্রভূত দানও অনেকটা আশু-বাবুর চেষ্টায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পাইয়াছিলেন, তাহাও সৰ্ব্বজনবিদিত । খয়রা রাজার দান, এবং অন্যান্য ক্ষুদ্রতর অনেক দান আশু-বাবুরই চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় পাষ্টয়াছেন। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের স্বাজাতিকতা রাজনীতিক্ষেত্রে প্রকাশ পাইবার সুযোগ ঘটে নাই, তিনি আরও কিছু কাল বাচিয়া থাকিলে তাহা ঘটিতে পারিত। কিন্তু র্তাহার স্বাঞ্জাতিকতা সম্বন্ধে তাহার বন্ধুগণ নিশ্চয়ই নিঃসন্দেহ ছিলেন । শিক্ষাক্ষেত্রে তাহার স্বাজাতিকতার পরোক্ষ প্রমাণ বিস্তর আছে। কিছুর উল্লেখ উপরে করিয়াছি। আরও কিছু বলিতে পারা যায়। ভারতবর্ষের লোকের প্রাচীন কালে কতটা সভ্য বা অসভ্য ছিল, স্বাধীনভাবে অপরের সাহায্যে কোন বিদ্যা, জ্ঞান, শিল্প প্রভৃতিতে কতটা উন্নতি করিয়াছিল, ভারতীয় সভ্যতার ও উন্নতির কোন স্তরের প্রাচীনত্ব কিরূপ, এইসকল বিষয়ের আলোচন! আবশ্য পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরাই প্রথমে করিয়াছেন, এবং তাহাদের নিকট হইতেই আমরা প্রথমে এইসব বিষয়ের জ্ঞান লাভ করিয়াছি। তজ্জন্য র্তাহারা আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন। কিন্তু সকল বিষয়ে র্তাহাদের সিদ্ধান্ত অবিচারিতভাবে অভ্রান্ত বলিয়া গ্রহণ করা যায় না । আমাদের অতীতের জ্ঞানের জন্য চিরকাল পরমুখাপেক্ষী থাকা নিম্প্রয়োজন ও অবমানজনক, এবং এমন অনেক বিষয় ও তথ্য আছে, যাহা আমরা সহজে আবিষ্কার ও উপলব্ধি করিতে সমর্থ, বিদেশী পণ্ডিতেরা নহেন। আমাদের অতীত সম্বন্ধে চূড়ান্ত নিম্পত্তি যদি কখন হয়, তাহা অনেকটা আমাদেরই দ্বারা হইতে পারে ও হওয়া উচিত। ভারতীয় অন্ত মনীষীদের মত আশুতোষ এইসব কথা জানিতেন বুঝিতেন । সেই