পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] জন্য তিনি ভারতের অতীত ইতিহাস এবং ইহার প্রাচীন সভ্যতা ও নানাবিষয়ক কৃতিত্বের অনুশীলনে ও তদ্বিষয়ক গবেষণায় খুব উৎসাহ দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগে কেহ কেহ প্রকৃত গবেষণা করিয়াছেন। পালি ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা এবং তিব্বতীয় ও চৈন ভাষা ও সাহিত্যের অনুশীলনের স্বযোগ দিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরোক্ষভাবে পূৰ্ব্বোক্ত উদ্দেশুসিদ্ধির সহায় হইয়াছেন। প্রাচীন সভ্যতাবিশিষ্ট কোন জাতির পুনরুজ্জীবন ও পুনধেীবনলাভ, অন্ততঃ কিয়ুৎপরিমাণে, তাহার অতীত সভ্যতার জ্ঞানসাপেক্ষ । বিশ্ববিদ্যালয় এবিষযে এপর্য্যন্ত যাহা করিয়াছেন, ভবিষ্যতে তদপেক্ষা অধিক করিলে তাহার কর্তব্য সম্পাদন করা হইবে। পাশ্চাত্য শিক্ষার অনিষ্টকারিতার প্রচার খুবই হইয়াছে। তাহার মধ্যে উপভোগ্য এই, যে, প্রচারকরা নিজেই পাশ্চাত্য শিক্ষার সাহায্যে মান্যগণ্য হইয়াছেন, এবং পাশ্চাত্য ভাষারই সাহায্যে উক্ত অনিষ্টকারিত প্রচার করিয়াছেন। যাহ। হউক, এবিষয়ে আলোচনা এখন প্রাসঙ্গিক নয়। পাশ্চাত্য শিক্ষার দু-একটা ভাল ফল যাহা হইয়াছে, তাহাই উপলক্ষ করিয়া একটা কথা বলিতে চাই। ভবিষ্যতে ভারতের সাধারণ ভাষা যাহাই হউক, বর্তমানে শিক্ষিতদের মধ্যে ইংরেজী সাধারণ ভাষা। তস্থার ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ত হইয়াছেই, সকল বিষয়ে মানসিক আদানপ্রদান, পরস্পরকে জানিবার উপায়, রাষ্ট্ৰীয় ও অন্তবিধ সাধারণ প্রচেষ্টার স্বসাধ্যতা, এবং ঐক্যসাধনের উপায়, প্রভৃতি হইয়াছে। পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্বারাই আমরা আমাদের অতীতকে জানিয়া গৌরব বোধ করিতে শিথিয়াছি। তা ছাড়া, ভারতবর্ষ পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে কূপমণ্ডকত হইতে মুক্ত হইয়া জগতের চিন্তাশ্রোত, প্রভাবস্রোত, কাৰ্য্যস্রোত ও ঘটনাস্রোতের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে। এসব লাভ বড় কম লাভ নয়। দেশে শিক্ষা যত বাড়িবে, এইসব লাভ তত বেশী হইবার সম্ভাবনা বাড়িবে। লর্ড কার্জনের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অন্যতম উদ্দেশু ছিল উচ্চশিক্ষার বিস্তৃতি ও উন্নতিতে বাধা দেওয়া । বাংলা দেশে আশু-বাৰু এই আইনটিকেই কিন্তু উচ্চশিক্ষার বিস্তৃতি ও উন্নতির বিবিধ প্রসঙ্গ—শ্ৰীযুক্ত আশুতোষ মুখোপাধ্যায় 8 DX উপায়ে পরিণত করিয়াছিলেন। অবশ্য ইহা সত্য, যে, বিস্তৃতির দিকে বেশী ঝোক দেওয়ায় উৎকর্ষের দিকে দৃষ্টি কম হইয়াছে ; কিন্তু উৎকর্ষ যে কোন দিকেই সাধিত হয় নাই, তাহাও সত্য নয় । তা ছাড়া, ইহা স্বতঃসিদ্ধ, যে, সব জিনিষেরই উন্নতি তাহার অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি বঙ্গে রক্ষিত ও সংখ্যায় বৰ্দ্ধিত হইয়াছে। তাছাদের উন্নতি বর্তমানে ও ভবিষ্যতে করা যাইতে পারিবে । ভারতবর্ষের প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্য, প্রাচীন মন্দির, মুদ্র, মূৰ্ত্তি, অনুশাসন প্রভৃতি জানিলেই ভারতবর্ষকে জান হইবে না। ভারতীয় জীবনের এবং ভারতের ব্যক্তিত্বের চরম ও চূড়ান্ত অভিব্যক্তি প্রাচীন কালেই হইয়া যায় নাই। অতীত যাহা কিছু, তাহা জানা অবশ্য চাইই এবং তাহার ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় যাহা করিয়াছেন, সংক্ষেপে তাহার উল্লেখও করিয়াছি। কিন্তু অভিব্যক্তি প্রাচীন কাল হইতে মধ্যযুগে এবং মধ্যযুগ হইতে এখন পর্য্যস্ত চলিয়া আসিতেছে। ইহার পরিচয় ৪ প্রমাণ বাংলা সাহিত্যে এবং ভারতীয় অন্যান্য প্রাদেশিক সাহিত্যে আছে। বাংলা সাহিত্যের এবং তৎপরে অন্যান্য প্রাদেশিক সাহিত্যের অধ্যয়ন-অধ্যাপনা ও তৎসংস্থষ্ট গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমাদিগকে ভারতীয় জীবন ও সভ্যতার যে সৰ্ব্বাঙ্গণ ধারণা লাভ করিবার স্বযোগ দিয়াছেন, অন্যত্র কোথাও তাহা নাই। অবশ্য কাৰ্য্যটির প্রারম্ভ মাত্র হইয়াছে, এবং অর্থলপদের দ্বারা ইহার অপব্যবহারও হইয়াছে। কিন্তু সংশোধন অসাধ্য নহে । বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাবহারিক বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কৃষি এবং নানা বৃত্তি শিখাইবার স্বচনা হইয়া আছে। ইহার বিকাশ, বিস্তৃতি ও উন্নতি ভবিষ্যতের গর্ভে নিহিত। ছাত্রদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ও তদ্বারা শারীরিক উৎকর্ষসাধনের চেষ্টার স্বত্রপাতও হইয়া আছে। এই সকল বিষয়েই উপক্রম, উদ্যোগ ও স্বত্রপাত আশু-বাবু করেন নাই বটে, কিন্তু তাহার সম্মতি ও সহযোগিতা ব্যতীত কিছু হইতে পারিত না ও হয় নাই । & যাহা অবস্থাবিশেষে কেজো এবং অবস্থাবিশেষে