পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

898 প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রকৃতিতে, কিন্তু প্রায় কোনটিই মাহুষের শ্রম ব্যতীত বাস্তবিক ঐশ্বৰ্য্য বলিয়া গণ্য হয় না। আমরা ভারতবর্ষে কতপ্রকার দ্রব্য নিত্য ব্যবহার করি, তাহা একবার চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে । কাচি, ছুরি, আলো, বাতি, ঔষধ, স্বচ, স্বত, কাগজ, পেরেক, ক্ষু, তার, কড়ি, বর্গ, জুতা, বোতাম, কাচ, চিনামাটি ও এনামেলের দ্রব্য, দেশালাই, ছাত, ছড়ি ইত্যাদি নানানপ্রকার দ্রব্য ত সৰ্ব্বদা সৰ্ব্বঘটে ব্যবহৃত হইতেছে। তাহা ব্যতীত সকললোকই রেলগাড়ী, ষ্টিমার, ট্রাম, ট্যাক্ষ্মী, প্রভৃতির সাহায্যে স্থান হইতে স্থানান্তরে গমনাগমন করিতেছেন। সৰ্ব্বত্রই লৌহের যন্ত্রপাতি সাক্ষাৎ- বা পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হইতেছে। এবং দেশকে উন্নত ও সম্পদশালী করিতে হইলে , আরও অধিকপরিমাণে সকলপ্রকার দ্রব্য উৎপাদন করিতে হইবে। আধুনিক জীবনযাত্রার দোষ-গুণ যাহাই থাকুক না কেন, ইহা মানুষকে নানানরূপে উন্নত করিয়াছে ; অবনতও করিয়াছে। কিন্তু তাহা বিশেষ করিয়া আধুনিক জীবনযাত্রারই ফল, ইহা কেবল একশ্রেণীর “দার্শনিকদের” বিশ্বাস, প্রমাণিত সত্য নহে । আধুনিক জীবনযাত্রার জন্ত যতপ্রকার দ্রব্য প্রয়োজন হয়, তাহার মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র অন্ততম ; কিন্তু সমস্ত নহে। খাদ্য ও বস্ত্র যদি আধুনিক জীবনে একফুট উচ্চ স্থান লাভ করে তাহা হইলে অন্তান্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমুদয় মিলিয়া প্রায় দশ ফুট উচ্চ স্থান অধিকার করিবে। সভ্যতার চিহ্ন শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ। এই সৰ্ব্বাঙ্গীণ উৎকর্ষের জন্ত যেপরিমাণ ও যতপ্রকার দ্রব্যের প্রয়োজন তাহার মধ্যে খাষ্ঠ ও বস্ত্র অতি ক্ষুত্র স্থানই পাইবে। খাদ্য ও বস্ত্রও উপযুক্তপরিমাণে ও -প্রকারে পাইতে হইলে নানা-প্রকার যন্ত্রপাতি ও কলকজার ব্যবহার প্রয়োজন । এবিষয়ে অধিক কথা না বলিয়া বর্তমানে কেবল ইহাই বলা দরকার যে, বর্তমান জীবনের বৈচিত্র্য ও বৈভবের মূলে রহিয়াছে মাহুষের সমুদয় প্রাকৃতিক শক্তি কাজে লাগাহবার সামর্থ্য। মাহুষ ক্রমে ক্রমে এমন-একটি যুগ আনয়ন করিতে চায় ও তজ্জন্ত চেষ্টা করিতেছে, যখন সকল মানুষ অল্পায়াসে বৈভব ও বৈচিত্র্যময় জীবন যাপনে সক্ষম হইবে এবং মামুষের অবসর যতই বুদ্ধি পাইবে ততই সে শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ বিষয়ে মনোযোগী হইতে সক্ষম হইবে। ফলে যে অতিমানবের যুগ আমরা কল্পনা করিয়া আনন্দ পাই, সেই অতিমানব পৃথিবীতে আসিবে ও মানবীয় সভ্যতা আর-এক পদ শ্রেষ্ঠত্বের দিকে অগ্রসর I কল্পনা র স্বপ্নের রাজপথ প্রকৃতি-“জয়” এবং নবনব যন্ত্রের উদ্ভাবন । আমরা চাই উত্তম জীবন ধারণের পক্ষে যথেষ্ট বাস্তব ঐশ্বৰ্য্য। ইহা “শ্রেষ্ঠত্বের” দিকে অগ্রসর হুইবার উপায় মাত্র, ইহাই আমাদের উদ্দেশ্য নহে। এই দারিদ্র্য, দুঃখ, অকাল-বাৰ্দ্ধক্য, অজ্ঞতা, জড়তা, দাসত্ব, কুসংস্কার, উদ্দেগু-ও আদর্শ-হীনতা প্রভৃতি বহুল দোষের লীলাভূমি ভারতবর্ষের এখনও এমন দিন আসে নাই, যে, আমরা "বাস্তব ঐশ্বৰ্য্য আর চাই না” বলতে পারি। বাস্ত ঐশ্বধ্য লাভের সঙ্গে-সঙ্গে যদি আমরা আমাদের উচ্চতর আদর্শগুলি সম্মুখে রাখি, তাহা হইলে যথেষ্ট ঐশ্বৰ্য্য পাইবার পর আমাদের মুখ ফুটিয়া বলিতে হইবে না, “আর চাই না” । আমরা “কাৰ্য্যেই” আর চাহিব না। অর্থাৎ ঐশ্বৰ্য্যবুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ঐশ্বৰ্য্য-উৎপাদনচেষ্টা কমিয়া আসিবে ও উৎকর্ষের দিকে উৎসাহ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইবে। . মামুষের এই যে প্রকৃতি-“জয়"-চেষ্ট, ইহার প্রধান অস্ত্র বর্তমানে লৌহ ও ইস্পাত। অনেকে বর্তমান সভ্যতাকে যান্ত্রিক সভ্যতা ও বর্তমান সময়কে ইস্পাতের যুগ বলিয়া থাকেন। কারণ, ইস্পাতের উপরই আমাদের সকল ঐশ্বৰ্য্য-উৎপাদন ও সকল ক্ষমতা বিশেষরূপে নির্ভর করে। সকল-প্রকার যন্ত্রই মূলত ইস্পাত-নিৰ্ম্মিত। এই কারণে আমাদের দেশে ইস্পাতের কারবার যাহাতে ভাল করিয়া গড়িয়া উঠিতে পারে, তাহার বিশেষ চেষ্টা বহুকাল হইতে হইয়া আসিতেছে। বড় বড় কারখানা কয়েকটি স্থাপিত হইয়াছে। তাহাদের মধ্যে তাতার লৌহ ও ইস্পাতের কারখানাই সৰ্ব্বপ্রধান। কিছুদিন পূৰ্ব্বে এদেশে একটি “কমিশন” বসিয়াছিল। তাহার উদ্দেশু ছিল, কিভাবে ভারতীয় কারখানা ও কারবারগুলিকে উন্নত করিয়া তোলা যায়, তাহা স্থির করা। দেশীয় কারখানা ও কারবারগুলিকে উন্নত করিবার একটি উপায় তাহাদিগকে বাহিরের কারখানাদারের প্রতিযোগিতার হস্ত হইতে সাময়িক ভাবে রক্ষণ করা । অর্থাৎ প্রথম প্রথম দেশীয় কারখানাগুলিকে একটু জিয়াইয় রাখিলে তাহার একটু জোর পাইলে পরে নিজ হইতেই আত্মরক্ষায় সমর্থ হইয়া উঠিবে। আমাদের দেশে এই সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করা হইবে কি না বিচার করিয়া উপরোক্ত কমিশন স্থির করেন, যে, যদি কোন কারবার এই দেশের পক্ষে বিশেষরূপ উপযুক্ত হয় ও প্রথমে সংরক্ষিত হইলে পরে আত্মরক্ষায় সমর্থ হইবে বলিয়া বিবেচিত হয়, তাহা হইলে সেই কারবারকে বাহিরের প্রতিযোগিতা হইতে সাময়িকভাবে রক্ষা করিবার জন্ত সেই কারবারজাত দ্রব্য বাহির হইতে আমূদ্রানি যাহাতে সহজে নাহয় এবং হইলেও যাহাতে আমদানীকৃত দ্রব্যের মূল্য অল্প না থাকিতে পারে, তজন্ত তাহার উপর শুষ্ক বসাইতে হইবে । ইহা ব্যতীত