পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 SN2 যাওয়ার ভাব। আমাদের দেশে এই ডুবে যাওয়ার ভাবটার প্রতি চিরকালই একটা গভীর শ্রদ্ধা দেখতে পাওয়া যায়, ভাই সমুদ্রের সঙ্গে ব্রহ্মের উপমা আমাদের দেশের ধৰ্ম্ম ও দর্শন গ্রন্থে প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায় । জ্ঞানের উন্মেষের দিক্ দিয়েই হোক, কি প্রবল ইচ্ছাশক্তির আত্ম-সংযমের দিক্ দিয়েই হোক, মানুষ যে তাকে ভুলে’ যেতে পারে এইটিই চিরকাল ধরে আমাদের দেশে একটি চরম সত্য বলে গৃহীত হ’য়ে এসেছে। উপনিষদ যে আত্মাকে পাওয়ার জন্ত ব্যগ্র হয়েছেন, সে ত আমাদের প্রাত্যহিক ক্ষুৎপিপাসার চঞ্চল আত্মা নয়, সে যে আত্মা তার সঙ্গে সাধারণভাবে আমাদের একেবারে পরিচয়ই যেন নেই বলতে হবে । উপনিষদের আত্মার কোনোও ইন্দ্রিয়ের লেশ নেই “অশব্দমস্পর্শম্ অরূপমব্যয়ং তথারসং নিত্যমগন্ধমৰ্চয়ৎ,” শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ কিছুই নেই সেখানে। সে হচ্ছে অনাদি এবং অনস্ত। এই ব্ৰহ্মকে নাকি কথায় পাওয়া যায় না চক্ষুতে দেথা যায় না, মনে পাওয়া যায় না। এর সম্বন্ধে খালি বলা যায় ‘আছে আর কিছুই বলা যায় না। “নৈব বাচান মনসা প্রাপ্তং শক্যেন চক্ষুষা ইত্যাদি উপনিষদের কথাগুলো নিয়ে নানা-রকম ব্যাখ্যা হ’য়ে কত বিভিন্ন পন্থার বেদান্ত দর্শনের মত উঠেছে, কত কথা কাটা-কাটি চলেছে। আর-এক পস্থায় দেখ যোগদর্শন উঠেছে । যোগী বলছেন যে চরম পন্থা হচ্ছে এই যে মনের নড়া-চড়া একেবারে বন্ধ করে এক জায়গায় তাকে বন্ধ করে রাখতে হবে । জায়গাটার পরিমাণ ক্রমশঃ সইয়ে সইয়ে কমিয়ে আনতে হবে, তাই স্বক্ষ থেকে স্বক্ষতর বস্তুতে মনকে সইয়ে সইয়ে আবদ্ধ করে’ রাখতে হয় যাতে এমন অবস্থা আসতে পারে যে তার চিরকালের দৌড়-ঝাপের প্রবৃত্তিটা একেবারে বন্ধ হয়ে যায় ; এইরকম অবস্থাটা পাকা হ’য়ে এলে তাকে একেবারে তার স্বল্পতম জায়গাটি থেকেও সরিয়ে এনে শূন্যে ছেড়ে দিয়ে নিরালম্ব করে’ রাখতে হবে। তা হ’লে মনের দফা একেবারে রফা হবে, মন একেবারে ধ্বংস পাবে, আর সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলি যে তার সঙ্গে ধ্বংস পাবে সেত পাবেই, তার আর কথা কি, থাকৃবে খালি চিন্ময় আত্মা । সে যে কি থাকা, আর সে যে কি চৈতন্য তা “দেব ন জানস্তি কুতো মনুষ্যা ।” ভক্তি-সম্প্রদায়ের যারা তার চান ভক্তিতে ভাবেতে একেবারে আত্মহারা হয়ে একেবারে কৃষ্ণানন্দে ডুবে যাওয়া। আমরা জানি শ্ৰীচৈতন্য এমনি ভাবাবেশে সমুদ্রের জলে হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ বলে’ ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। যতরকম আত্মহারা ভাব আছে তার মধ্যে “আনন্দে আত্মহারা” জিনিষটা শুনতে ভাল শোনায়। কিন্তু তথাপি সেই আপনাংক হারাতে হবে এই সেই পুরানো কথাই গিয়ে শেষে দাড়াল। প্রবালী—আষাঢ়, ১৩৩১ { ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড আমরা যখনই আমাদেরকে সমুদ্রের সাম্নে ছেড়ে দিই, আর থই পাইনে, ডাঙায় বসে” কেবলই অতল জলে ডুব তে থাকি। এর একটা প্রধান কারণ হচ্ছে এই যে আমাদের মনের চলবার একটা প্রধান উপায়ই হচ্ছে তার বিষয়ের বৈচিত্রা । চিস্তার স্রোতের পদ্ধতিই হচ্ছে এই যে সে কতকগুলির সহিত অপর কতকগুলির সাদৃশ্যে কি বৈসাদৃত লক্ষ্য করে এবং কতকগুলি সাদৃশ্য বা বৈসাদৃষ্ঠের উপর ভর করে অপর কতকগুলি নূতন বিষয়ে গিয়ে পৌছায় । রাতদিনই তার ভাঙাগড়ার, আর ঘরকন্নাব ঠোক-ঠুকি চলছে। মনের কোনো বিশ্রাম নেই, তার কাজই হচ্ছে সৰ্ব্বদা এই গোছগাছের কাজে লেগে থাকা । এই গোছগাছের পক্ষে সব চেয়ে বড় কথা হ’ল এই যে নানা জিনিষ পাওয়া চাই, কারণ এই গোছানর প্রধান মন্ত্রই হচ্ছে মিল-গরমিলের সূত্রধরা । তাই অনস্ত আকাশ কি সীমাহারা সাগরকে যখন মন আঁকড়ে ধরতে চায় তখনই সে পায় এক ঘেয়ে নীল জল, নয় এক ঘেয়ে নীল রঙ, বৈচিত্র্যের অভাবে তার গোছানর কাজ বন্ধ হ’য়ে আসে ; ইন্দ্রিয়েরা অবশ হয়ে পড়ে, তারা তার সামনে নূতন নূতন বিষয়ের ভোগ এনে ধরতে পারে না, তাই মনের কাজ বৈচিত্র্যের অভাবে বন্ধ হ’য়ে আসতে চায়, ইন্দ্রিয়গুলি নিম্পন্দ হ’য়ে আসতে থাকে আপনা-আপনি মনের কাজ যখন বন্ধ হ’য়ে আসতে থাকে । ইন্দ্রিয় যখন নিম্পন্দ হ’য়ে আসে তখনই তার ফলে একটা অবশ আত্মহারা ভাব আসে, সে উপলব্ধির মধ্যে একটা মহত্ত্ব বৃহত্ত্ব, একটা উদার গম্ভীর ভাব আছে, সেই ভাবটিকেই ইংরেজীতে বলে sublimity. যোগ সাধন ধ্যান প্রভৃতি বিবিধ সাধন পদ্ধতিতে বলপূর্বক মনকে একস্থানে স্থির করবার চেষ্টা থাকে ; বাহির হতে এই স্থিরতাটি মনের মধ্যে আবিষ্ট হ’তে পারে না, তাই সেখানে এই Sublimityর ভাবটি তেমন থাকে না, খালি একটি তলহীন নিরালম্ব ভাব ভেসে ওঠে । সমুদ্রকে যখন আমরা এমনি করে’ সাম্নে নিয়ে বসি, যেন মনে হয় সফেন গভীর কালো জলে ঝাপিয়ে পড়ি । যেন কি এক অজ্ঞাত আকর্ষণ ঐ ফেনমণ্ডিত গভীর নীল পয়োধিনীরের দিকে আমাকে টানতে থাকে। আপনাকে ভুলে’ যাই, নিজের সত্তা ভুলে’ যাই । যেন কি-এক অনস্তের টান এসে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে চায়। কোথায় যাচ্ছি, কি কাজ, দেশকাল সব ভুলে যাই । এটা যেন অনেকট সংজ্ঞাহীন ভাব, যেন একট। মূক ভাষাহীন অবোধ আকর্ষণ। পতঙ্গ যখন বহ্নিমুখে ধাবিত হয় সেও যেন একটা এইরকমের উন্মাদ আকর্ষণে । ঐ যে বড় বড় ঢেউগুলি সাদা টুপি পরে’ নাচতে নাচতে আসছে, কত সময় এই রেলিংএর উপর মাধ