পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] 8óጫ দিয়ে ভেবেছি যেন ঐ ঢেউয়ের সঙ্গে মিশে গেছি, যেন মুহূৰ্ত্তের মধ্যে সমস্ত চিস্তা-প্রবাহ রুদ্ধ হ’য়ে এসেছে। বুকের কপাটে ধকৃ ধকৃ করে’ রক্ত-স্রোতের আঘাত অনুভব করেছি, আতঙ্কে সরে’ এসেছি, মুগ্ধ মন জেগে উঠেছে, সমূত্রের ভয়ে দূরে পালিয়ে গেছি। মন যখন গোছগাছ নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকে তখন ভাবা যায় তাই ত এমন ব্যস্ত গৃহিণীকে একলা পাওয়া গেলে তবেই একে পেতে পারতুম—একে একলা নিরালা স্থির হয়ে কখন পাই । স্থির হয়ে যখন পাবার অবসর ঘটে তখন দেখি যে কৰ্ম্মপরায়ণাকে অন্বেষণ করছিলুম নৈষ্কর্ঘ্যের দ্বার দিয়ে তিনি কোথায় সরে’ পড়েছেন, বদলে যাকে রেখে গেছেন তার সঙ্গে সঙ্গ করবার জো নেই। র্তাকে পেতে হ’লে আপনাকে খুইয়ে অসঙ্গ হতে হবে। & কতকগুলি ভক্তসম্প্রদায় বাদ দিলে আর বাকী প্রায় সমস্ত হিন্দুসাধনা আমাদের এই অরূপের রূপসাগরে ডুব দিতে বলছেন । এই অরূপকে পাওয়া আত্মনাশ কি আত্মপ্রাপ্তি বোঝা শক্ত। উপনিষদ বলছেন এর নাম আত্মপ্রাপ্তি, কিন্তু বৌদ্ধ বলছেন এর নাম নিৰ্ব্বাণ । কিন্তু নিৰ্ব্বাণই বলুন আর নাশই বলুন বৌদ্ধও বলছেন যে এই অবস্থাটিই আমাদের চরম উপেয় ; এইখানেই সমস্ত জীবন-প্রবাহের লয় ও চরম সার্থকতা। এই মনোহরণপুর থেকে যে আমরা নানা সময় ডাক পাচ্ছি, আহবান পাচ্ছি, সাড়া পাচ্ছি একথা যারা ভাবুক, তারা কখনও অস্বীকার করতে পারে না । এর সত্তা এবং ডাক আমি চোখে দেখেছি এবং কাণে শুনেছি ; অথচ এর স্বরূপ কি তা আমি জানিনে। মন এখানে হারিয়ে যায় তাই একে আমি “মনোহরণপুর” বলছি, এবং মন হারিয়ে যায় বলেই এর সম্বন্ধে কিছু বলা যায় না । যতক্ষণ মনের রাজ্য, ততক্ষণই চাঞ্চল্য । যাকে আমরা চলিত কথায বজি মন স্থির করা, সে আর কিছুই নয় একজাতীয় বস্তুপরম্পরার সঙ্গে ব্যবহার কর', মনকে নানা বিষয়ের টানে লক্ষ্যহীনভাবে ছেড়ে না দেওয়া । কিন্তু মনের নড়া-চড়া বন্ধ করে দিলে, মন হারিয়ে যায়, ফলে হয় স্বযুপ্তি নয় সমাধি। এই অবস্থার কথা মনে জাগ্রত অবস্থার কথা দিয়ে বোঝান যায় না, কারণ সে অবস্থায় মন ঘুমিয়েছে এবং মনের লয় হয়েছে। "মনোহরণপুরে” মন নেই, তাই সেখানকার কথা মন বলতে পারে না । মনের কাজ আমাদের কাছে তখনই চলে যতক্ষণ আমাদের জাগ্রত জ্ঞান তার সাম্য-বৈষম্য নিয়ে ই-না নিয়ে কাজ চালাতে থাকে। এই মনোহরণপুরের সঙ্গে মনের ষে একটা সম্বন্ধ আছে তাও অস্বীকার কর; যায় না । কিন্তু সে SSASAS AAAAASAAAA স্বন্ধ যে কিজাতীয় তা বলা কঠিন । শাস্ত্র বলছেন যে সেই মনোহরণপুরের যে তত্ত্ব সেইটিই হচ্ছে মূলপরমার্থ আর মনোরাজ্যের যত খেলা সব মায়া । আমাদের চরম উপেয় হচ্ছে সেই মনোহরণপুরের তত্ত্ব ; সেইটিই যথার্থ সত্য । এইখানে আমার মন বিদ্রোহী হ’য়ে ওঠে। যাতে আমরা সৰ্ব্বদা আছি তাতে আমাদের মন সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। তাই আমরা দেখতে চাই যে এই চাঞ্চল্য থেকে কোথাও বিশ্রাম পাওয়া যায় কি না ; মনোহরণপুরের অতল বিশ্রাম আমাদের চিত্তকে আকর্ষণ করে, তাই এই তত্ত্বটি আমাদের মনীষীদের কাছে এত সমাদর পেয়েছে, যে তারা থালি এইটিকেই সত্য বলে’ মনে করেছেন । কিন্তু আমার মন আমাস বলে’ যে কেন আমরা এই তত্ত্বকে চরম উপেয় ও সত্য বলে মানব । ডুবে যাওয়া লয় পাওয়া, আত্মার নিৰ্ব্বিকার স্বস্বরূপে অবস্থান করা, এটা কেন আমার পরম ও চরম উপেয় বলে’ মানব ? আমি একথা মানি যে মনোহরণপুরের ঘাটে । যখন আমরা ডুব দিয়ে উঠি তখন যেন একটা সদ্যঃস্নাত পবিত্রতায় আমাদের মন ভরপুর হয়ে ওঠে, এবং মনোরাজ্যের বিষয়গুলিকে যেন আমরা তাতে আরও গভীরভাবে ভোগ করতে পারি ; কিন্তু তাই বলে মনোরাজ্যের বিষয়ের চেয়ে মনোলয়ের বিষয় বেশী সত্য কেন হবে তা আমি বুঝতে পারিনে । এইখানে সমস্ত ভারতীয় সাধনাব বিরুদ্ধে আমার মন যুদ্ধ করতে চায়। যুরোপীয় সাধনা সাধারণতঃ মনোরাজ্যকে সত্য ও পরমার্থ বলতে চায়, এবং মনোলয়ের রাজ্যকে খেয়াল বলে’ উড়িয়ে দিতে চায়। ভারতবর্ষ তেমনই মনোলয়ের রাজ্যকেই পরম বলে মনোরাজ্যকে খেয়ালের খেলা বলে’ উড়িয়ে দিতে চায়। এই দুয়েরই বিরুদ্ধে আমার মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। আমার মনে হয় পার্থী যেমন তার দুটি ডানায় ভর করে সীমাহীন অনন্ত আকাশে বিচরণ করে তেমনি আমরা মন ও মনোলয় এই উভয় পক্ষকে আশ্রয় করে আনন্তে ভেসে চলেছি। এদের উভয়ের কাউকে ছাড়া আমাদের চলে না । এদের যে-কোনটির অভাবে আমাদের জীবন তার সার্থকতার গতি-রেথা থেকে দূরে সরে’ পড়ে। ত্যাগ ও ভোগ, মুক্তি ও বন্ধ । মন ও মনোলয় এই উভয়ের কাউকে ছাড়লে আমাদের চলে না। যারা শুধু মনের এই দৈনন্দিন ভাঙা-গড়া ছাড়া আর-কিছুরই সদ্ধান রাখতে চায় না, তাদের উপরেও ঐ গহন মনোলয়ের আকর্ষণ অল্প পরিমাণে হ’লেও প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং প্রেয়ের পথে প্রেয়ের নিশান উড়িয়ে দিয়ে পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কেন প্রেয়ের পথে আমরা শ্ৰেয়ের দাবী মানতে যাব এপ্রশ্নের উত্তর যুরোপীয় চিন্তা আজ পর্ষ্যস্ত