পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিকে যেমন এই ফল হয় অপরদিকে তেমূনি মনের জাগ্রত বৃত্তিগুলি এই ডুব দেওয়ার ফলে শিথিল হ’য়ে আসে, এবং চিস্তার চেয়ে চিন্তাহীনতার বিরামের মধ্যে মন ডুব দিতে চায়। সেইজন্যই বলছিলুম যে, যখন হয় একটি স্বন্দর গান শুনে কি উদার সমুদ্রের কি অনন্ত আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে আমাদের মন সেই গোপন গহন গভীর মনোহরণ-পুরে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, অতল গভীরে ডুবে যায়, তখন সেটা শুধু একটা মনের জিমনাষ্টিক হয় যে তা নয়, তার ফলে ভোগাতীতের পথের ত্যাগের পথের মুখ পরিষ্কার হয়ে যায় এবং ভোগ থেকে ভোগাতীতে ও ভোগাতীত থেকে ভোগে আসবার দ্বার উদঘাটিত হয় । যতক্ষণ আমরা শুধু ভোগে থাকি এবং শুধু চিত্তের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াবশতঃ মধ্যে মধ্যে ভোগের মধ্যে ভোগাতীতের ছায়া পাই মাত্র, ততক্ষণ আমরা বুঝতে পারিনে যে ভোগের অবস্থার মতন ভোগাতীতের অবস্থার মধ্যেও আমাদেরই একটি যথার্থ স্বরূপ নিভৃতে নিহিত রয়েছে । আমাদের স্বভাব এই নয় যে ভোগের মধ্যে চিস্তার মধ্যেই আমাদের সম্পূর্ণ সমাপ্ত করে দিয়ে খালি হ’য়ে যাই। ভোগও যেমন আমাদের একটা স্বভাব ভোগাতীতও তেমনি আমাদের আর-একটি স্বভাব নিভৃতে প্রচ্ছন্ন রয়েছে। ভোগাতীতের দিকে মুখ ফিরিয়ে যদি শুধু ভোগ নিয়ে থাকি, সমাধি ছেড়ে যদি যুক্তি-বিচার নিয়ে থাকি, তবে সেই দূর গহনের ছায়া মাত্র আদর্শের রূপ ধরে’ বা কোনো গুহানিহিতের অনির্দিষ্ট আকর্ষণের রূপ নিয়ে আমাদের সাম্নে উপস্থিত হ’য়ে আমাদের মুগ্ধ করে দেয়। তার কারণ আমরা বুঝতে পারিনে, অথচ তার ডাকে আমাদের প্রাণ সাড়া দেয়। এই সাড়ায় যারা ব্যাকুল হয় লোকে তাদের বলে—Mystic ক্ষ্যাপা পাগল । মানুষ যখন এই গহন গভীরকে জীবন থেকে বাদ দিতে চায়, তখনই সে তার চলার বেতালায় পাক খেতে থাকে। তাই এ গহনকে জীবন থেকে বাদ দেওয়া যায় না, চলস্ত জীবনের সঙ্গে এই কুটস্থকে মেলাতে পারলেই জীবনকে যথার্থভাবে পাওয়া যায়, কারণ এ কুটস্থ নিরালম্ব দিকূট জীবনেরই দিক, বাহিরে এর স্থান নেই। এইখানেই ঘুরে ফিরে আবার সেই প্রশ্ন আসবে যে, যদি কুটস্থকে আমি এত গভীরভাবে স্বীকারই করব তবে ভারতীয় সাধনার সঙ্গে আমার বিদ্রোহটা উঠল কোথা থেকে। এর জবাবে আমার এই কথাই মনে আসছে ধে ভারতবর্ষ]এই গহনগভীর অবাঙ-মনসঃ গোচরের স্বাদ পেয়ে একেই চরম সত্য বলে মেনে, এরই মধ্যে তার শেষ পাওয়া শেষ সমাপ্তিকে দেথতে চেয়েছে ; ভারতবর্ষ বলেছে জীবনের উদেষ্ঠ মুক্তি । সমস্ত গতি ভারতবর্ষের কাছে এক চিরকালের জন্ত এক কলহীন সমাপ্তির মধ্যে সমুদ্রের চিঠি 8లిసె থেমে গেছে । আমার চোখে আমি দেখছি যে গতি আছে বলে থামা, প্রাপ্তি আছে বলেই সমাপ্তি, যেখানে প্রাপ্তি ফুরিয়ে গেছে, সেখানে সমাপ্তিও ফুরিয়ে গেছে। যাকে থামা বলে মনে হয় সে শুধু চলার একটা যতি, একটা তাল । সমাপ্তিকে চরম বলে আমি মানিনে, এখানে যুরোপের সঙ্গে আমার মন সায় দেয়। কিন্তু তেমনি আবার যুরোপ যেমন এই গহন গভীরকে, এই সমাপ্তিকে একেবারে জীবনের বাহিরে সরিয়ে দিতে চায়, সেখানে সমস্ত যুরোপকে আমার ঠেলে ফেলে দিতে । ইচ্ছা হয়। চলার দিকটা যেমন সত্য, বিরামের দিকটা ঠিক তেমনিভাবেই সত্য, গহনগভীরের সঙ্গে প্রতিদিনের দৃষ্টি-প্রত্যক্ষের সঙ্গে ভোগাতীতের সঙ্গে বিচিত্র ভোগের সঙ্গে একটা সামঞ্জস্ত করবার চেষ্টাতেই আমাদের জীবন। জীবনটা সেইজন্য পাওয়া জিনিষ নয়, গড় বার জিনিষ। পার্থী যেমন তার দুই ডানায় ভর করে’ অনন্ত আকাশে উড়ে চলে, মাস্থ্য তেমনি মনের উদয় ও লয়কে নিয়ে অনন্ত জীবনের পথে চলেছে। সাধারণতঃ যুরোপ লয়ের দিকটা স্বীকার করতে চায়নি, এবং ভারতবর্ষ উদয়ের দিকূট স্বীকার করতে চায়নি। মাচুধ গভীরের টানে গভীরে চলে যায়, এবং গভীর থেকে যখন ফিরে আসে তখন হয়ত মনে করে—এইটিই বোধ হয় আমার যথার্থ আশ্রয়। আবার যখন মাহুষ চঞ্চল জীবন-প্রবাহের মধ্যে নাচতে নাচতে চলে, হাসির তুফানে আপনাকে আচ্ছন্ন ক’রে তোলে, তখন সে মনে করে জীবনে চলার দিকটাই বুঝি সত্য। কিন্তু এর যেকোনটার অভাবেই মামুষের চলে না। উভয়কে”নিয়ে, এ-উভয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্ত করে’ উভয়ের মধ্যে নিরস্তর আদান-প্রদান করে’ তবেই মানুষ তার যথার্থ স্বরূপকে পায় । আমরা এখন লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে চলেছি। জাহাজ ভৰ্ত্তি লোক। সবই প্রায় ইংরেজ ; আমি ছাড়া ভারতবর্ষের লোক মাত্র আর একজন আছে,—দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরের একজন ভারতীয় খৃষ্টান। এখন বেলা ৩টা, ডেকৃচেয়ারে পড়ে পড়ে' সকলে ঘুমুচ্ছে, কেউ কেউ বা পচা নভেল পড়ছে, কেউ বা সেলাই করছে। আশ্চৰ্য্য হ’য়ে যেতে হয় এই যুরোপীয়দের আশ্চৰ্য্য শৃঙ্খলা দেখে । আমাদের যাত্রীদের সংখ্যা প্রায় ২০ • হবে। এতগুলি লোকের ঠিক একই নির্দিষ্ট সময়ে স্বান জাহার চলছে, বলতে গেলে একমিনিটও অতিক্রম করে नl, ७१छ् মধ্যে কোনোও ফ্যাসাদ নেই,—গণ্ডগোল নেই,কলহ নেই, মনোমালিন্ত নেই, এ একরকম আশ্চৰ্য্য শিক্ষা । ভোর eাটা থেকে সব স্বান ও প্রাতৃ:ক্রিয়া আরম্ভ হ’য়ে যায় । , ঠিক ৮টার সময় শিশুদের খাওয়া। ইতিপূৰ্ব্বে চা ফল ও রুটি ঘরে ঘরে বিলি করে যায়। ৮iটশন লাল ----