পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] হয়, তথাপি কবিতার অর্থ সরল হয় না। এইরূপে “আত্মারাম”ও বোধ হয় তাহার পিতার নাম নহে ! তিনি যে ভক্ত ছিলেন, আত্মারাম ছিলেন, এইরূপ কোনও উক্তি হইতে র্তাহার নাম “আত্মারাম” হইয়া গিয়াছে । তুলসীদাসের বাল্যাবস্থা সম্বন্ধেও নানা লেখকের নানা মত। কেহ বলেন তিনি শৈশবেই পিতৃহীন হইয়াছিলেন, বিধবা মাতা ভিক্ষা করিয়া তাহাকে প্রতিপালন ও লেখাপড়া শিখাইয়াছিলেন । কেহ বলে তিনি গণ্ডযোগে জন্মিয়াছিলেন বলিয়া পিতামাতা তাহাকে ত্যাগ করিয়াছিলেন। কিন্তু ইহা বিশ্বাস হয় না। এখনও ত রিষ্টিতে ছেলে হয়, কিন্তু কে আপন সন্তান ত্যাগ করে ? এরূপ রিষ্টি থগুন করিবার উপায়ও সহজ । মাতা এরূপ সন্তানকে মাটিতে শোয়াইয়া দেন, অর্থাৎ ত্যাগ করেন, ধাত্রী বা কোন আত্মীয়া তুলিয়া লয়। পরে মাতা ধাত্রীকে বা আত্মীয়াকে যথাসাধ্য কাঞ্চন-মূল্য দিয়া পুত্র কিনিয়া লন, রিষ্টি-দোষ কাটিয়া যায়। বিনয়-পত্রিকা নামক পুস্তকে কবি একস্থানে আপনার বাল্যদুঃখের কথা লিথিয়াছেন, তাহাতে বোধ হয় তাহার বাল্যাবস্থা দারিদ্র্যে কাটিয়াছে। বাল্যাবস্থাতেই দ্বারে দ্বারে রাম নাম করিয়া ভিক্ষা করিতে হইয়াছে । লোকে বিদ্রুপ করিয়া তাহাকে রাম-বোলা (২) বলিয়৷ ডাকিত । পিতা-মাতার কাছে সন্তান যতটা আদর-যত্ব ও ভালবাস। আশা করিয়া থাকে, তুলসী আপন দারিদ্র্য-পীড়িত পিতা-মাতার কাছে ততটা কেন, বোধ হয় কিছুই পান নাই। এক-স্থানে লিথিয়াছেন তাহার ঘর্থন জন্ম হইল, তাহার দরিদ্র মাতা-পিতা আহাৰ্য্য জোগাইতে হইবে বলিয়া দুঃখিত হইলেন । যাহা হউক, তিনি এই অবস্থাতেই নরহরিদাস-নামক কোন দয়ালু ভক্ত ব্রাহ্মণের কাছে বিস্তাশিক্ষা করিতে আরম্ভ করেন, ও পরে এই শিক্ষাগুরু “কৃপাসিন্ধু নর-রূপহরি”র কাছেই দীক্ষা গ্রহণ করিয়া ভক্তিমাগের সাধনার পথে অগ্রসর হইতে থাকেন । দারিদ্র্য-বশত: শৈশবে ও বাল্যাবস্থায় অধিপেটাও (২) রামকে গোলাম, নাম রাম বোলা রাম রাখো। ইত্যাদি दिनघ्न-श्रृंबिकां । 889 খাইতে পান নাই। পিতা-মাতার কাছে দুটা আদরসোহাগের কথা শুনিতে পান নাই, দ্বারে দ্বারে রাম নাম করিয়া ভিক্ষা করিয়া তবে গুরুর কাছে পাঠ গ্রহণ করিতে হইয়াছে, তথাপি পুণ্যভূমি ভারতে বিবাহুরূপ সৌভাগ্যের অভাব হয় নাই। আমাদের দেশে বলে—জন্ম-মৃত্যুবিবাহ, এতিনটি বিধাতা পুরুষ স্থির করিয়া থাকেন বোধ হয় ; ইহার অর্থ যে জন্ম হইলে ধেমন মৃত্যু অনিবাৰ্য্য, সেইরূপ বিবাহও অনিবাৰ্য্য । অনেকে অল্প বয়সে মরিয়া বিধাতাকে ফাকি দিতে চাহে কিন্তু পারে না, তাহার প্রমাণ সেনসস রিপোর্টে পাচ বৎসর অপেক্ষা কম বয়সের বিধবার সংখ্যাও চার বা পাচ অঙ্কে লেখা হয়। তুলসীদাসের অল্প নাই, বস্ত্র নাই, গৃহ নাই, শান্তি নাই, কিন্তু গৃহিণী জুটিয়া গেল। দীনবন্ধু পাঠকের কন্যা তাহার অন্নহীন গৃহে গৃহলক্ষ্মী-রূপে অধিষ্ঠিত হইলেন। যথা সময়ে গৃহিণী এক পুত্র উপহার দিলেন, তাহার নাম রাখা হইল তারক, কিন্তু শিশু এ দারিদ্র্য-পীড়িত মর-জগতে বেশী দিন থাকে নাই, অল্প কালেই নিত্য ধামে চলিয়া গেল । তুলসী দাস যৌবনে স্ত্রীর বড় অমুরক্ত ছিলেন। স্ত্রীকে ছাড়িয়া এক মুহূৰ্ত্তও থাকিতে কষ্ট বোধ করিতেন। র্তাহার বন্ধু-বান্ধবের তাহাকে মহাস্ত্রৈণ বলিয়া উপহাস করিত কিন্তু তিনি সে কথা শুনিয়াও শুনিতেন না। র্তাহার স্ত্রী এই অমুরক্তিতে বড় ব্যথিত হইতেন । র্তাহার সমবয়স্কাদের উপহাস অসহ হওয়াতে কাহারও সহিত দেখা-সাক্ষাৎ করিতেন না। একদিন তুলসীদাস নিকটের হাটে গিয়াছেন, এমন সময়ে তাহার পত্নীর পিত্রালয় হইতে সংবাদ আসিল, তাহার পিতা অত্যস্ত পীড়িত, তিনি একবার শেষ দেখা দেখিবার জন্য কন্যাকে ডাকিয়াছেন । এমন আহবান পাইয়া কোন কস্তা গৃহে বসিয়া থাকিতে পারে ? তিনি প্রতিবাসীদের বলিয়া স্বামীর অনুপস্থিত-অবস্থায় যমুনার পর-পারে তিনচার ক্রোশ দূরে পিত্রালয়ে চলিয়া গেলেন । তুলসীদাস সন্ধ্যার সময়ে বাড়ী ফিরিলেন । সমস্ত দিবসের আদর্শনের পর, যখন বড় আশা করিয়া গৃহে প্রবেশ করিলেন, তখন শূন্তগুহ দেখিয়া, তাহার মাথা ঘুরিয়া গেল। প্রতি