পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] ঝোলাতে আছে, বাহির করিয়া দাও।” তাহীর পত্নী তাহাই করিলেন । পরে তিলক-সেবা করিবার জন্য খড়ি-মাটির প্রয়োজন হওয়াতে র্তাহাব পত্নী খড়ি আনিতে যাইতেছিলেন, তুলসীদাস বলিলেন, “আমার ঝোলাতে আছে, বাহির করিয়া দাও।” তদ্রুপ করা হইল। পূজার পর রন্ধন করিতে বসিয়া তুলসী দেখিলেন ভ্রম-ক্রমে ডা’লে দিবার মশলা আনা হয় নাই । তাহার পত্নী তাড়াতাড়ি মশলা আনিতে যাইতেছিলেন, কিন্তু অতিথি বলিলেন, “যাইবার প্রয়োজন নাই, আমার ঝোলাতে আছে, বাহির করিয়া দাও।” তাহার পত্নী আর আত্ম-প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারিলেন না। বলিলেন, “বৈরাগী মহাশয়ের বৈরাগ্য ত বেশ দেখিতেছি, ঝোলার মধ্যে কপূর লইয়াছ, পড়ি লইয়াছ, এমন কি ডা’লের মশলা লইয়াছ, তবে ঐ ঝোলার মধ্যে রাধিয়া দিবার জন্য স্ত্রীকে লইতে পার নাই ? তাহাকে ত্যাগ করিয়াছ কেন ?" - তুলসীদাস এতক্ষণ কুল-কামিনীকে লক্ষ্য করিয়া দেখেন নাই, এই ব্যঙ্গোক্তি শুনিয়া বক্তাকে লক্ষ্য করিলেন । বহুকাল পূৰ্ব্বেকার একখানি মুখ মনে পড়িয়া গেল। এতকালে কতটা পরিবর্তন সম্ভব তাহাও ভাবিয়া লইলেন । তখন নিঃসন্দেহে চিনিতে পারিলেন । র্তাহার পত্নী, ভ্রাতার অবস্থার পরিবর্তন, ভিন্ন গ্রামে বাস, ক্রমে অবস্থার উন্নতির সকল কথা বলিলেন । পরে বলিলেন, “আ৷র তোমাকে ছাড়িতেছি ম, আমাকে তোমার ঝোলাতে পূরিয়া লওঁ । তোমার বৈরাগা ত দেখিতেছি ভণ্ডামির রূপান্তর মাত্র । তোমারও সেবিকার প্রয়োজন দেখিতেছি, আমারও এখানে আর মন টিকিতেছে না। আমি তোমার সহিত তীর্থ-ভ্ৰমণ করিব।” কিন্তু তুলসীদাস স্বীকৃত হইলেন না। তিনি দু-এক দিবস গ্রামে বাস করিয়! আবার তীর্থ-ভ্রমণে বাহির হইলেন । প্রথম যখন তুলসীদাস গৃহত্যাগ করিয়া সাধুসঙ্গ করিবার জন্য তীর্থ-ভ্ৰমণ করিতে বাহির হন, তখন র্তাহার কোনো নির্দিষ্ট গতি-বিধি ছিল না। যখন যেমন সুবিধা বা সঙ্গী জুটিত সেইরকমেই যাইতেন । কোনো গ্রামে বা মন্দিরে দশ-পাচ দিন থাকিতেন, রামনাম করিতেন, গ্রামবাসীকে উপদেশ দিতেন। একবার গোস্বামী তুলসীদাস 886. গঙ্গাতীরের কোনো গ্রামে কিছুকাল বাস করিয়াছিলেন। তিনি প্রত্যঙ্গ প্রাতে নদী-তীরে শৌচক্রিয়া করিয়া ফিরিবার সময়ে এক গাছে ঘটির বাকী জলটুকু ঢালিয়া দিতেন। সেই গাছে এক প্রেত থাকিত । সে একদিন} তাহাকে দেখা দিয়া বলিল, “আমি তোমার নিত্য-সেবায় তুষ্ট হইয়াছি, তুমি আমার কাছে কিছু চাহিয়৷ লও " তুলসী বলিলেন, "আমি তোমার কাছে কিছুই চাই না, তবে যদি আমার ঠাকুর ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে একবার দেখাইতে পার, তবে দেখাও।” প্রেত বলিল, “সে ক্ষমতা আমার নাই । তবে যে তোমাকে শ্রীরামচন্দ্রকে দেখাইতে পারে, তাহাকে দেখাইয়া দিতে পারি।” তুলসী বলিলেন, “তবে তাহাই দেখাইয়া দাও।” প্রেত তখন এক শ্রীরাম-মন্দিরের:নাম করিয়া বলিল, “ঐ মন্দিরে প্রত্যহ রাম-কথা পাঠ হইয়া থাকে, শুনিতে অনেক লোক আসে একটি অতি বৃদ্ধ কুষ্ঠ-রোগী শ্রোতা দেখিতে পাইবে । সে সকলের পূৰ্ব্বে আসে ও পশ্চাতে কথা শেষ হইলে যায়। সেইটি ভক্ত- প্রবর মহাবীব হকুমান । তিনি ইনকুপ ধারণ করিয়া রামায়ণ শুনিতে আসেন। তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাকে ঠাকুর দর্শন করাইতে পারেন । তুমি তাহার উপাসনা কর।” তুলসী তৎক্ষণাৎ সে-গ্রাম ত্যাগ করিয়া নিদিষ্ট মন্দিরে উপস্থিত হইলেন। হকুমানকে সহজেই চিনিতে পারিলেন । পাঠ শেষ হইলে মন্দির-প্রাঙ্গণেই বুদ্ধের পা জড়াইয়া ধরিয়া বলিলেন, “আপনি যে মহাপুরুষই হউন, আমায়ু ঠাকুর দেখাইতেহ ইবে ।” তুলসীর কাতর প্রার্থনায় তিনি বলিলেন, “তুমি চিত্ৰকূটে গিয বাস কর, প্রত্যহ বিগ্ৰহ দশন ৪ রাম নাম করিবে, সেখানেই তোমার অভিলাষ পূর্ণ হইবে।” তুলসী এইবার চিত্ৰ-কৃটের পাহাড় ও বনের মধ্যে এক কুটার বাধিয়া বাস করিতে লাগিলেন। প্রত্যহ স্থানীয় রাম-মন্দির দর্শন করেন ও দিবারাত্রি ভজন বা নাম করেন । উৎসবের সময়ে অনেক যাত্রী আসে, প্রত্যহ দশ-পাচ জন আসে । কেহ না কেহ তাহার আহার যোগায় । একদিন তিনি বিগহ দর্শন করিয়৷ নিজ কুটীরে ফিরিতেছেন, পশ্চাতে অশ্বপদশব্দ পাইয়৷ সঙ্কীর্ণ পথ ছাড়িয়া দাড়াইলেন। দেখিলেন একটি