পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্য। ] লেখা এড়িয়েহ চলবেন । জগতে শত শত মানুষ পলে পলে যথাসৰ্ব্বস্ব হারাচ্ছে, ব্যাপারটা জগতে কিছু মাত্রই নুতন নয় । সুতরাং নায়ক-নায়িকাকে যে-কোনপ্রকারে সৰ্ব্বহার করে দিলেও পাঠকের মন আকর্ষণ করা যায় না । বাস্তব জগতে যেমন এই সৰ্ব্বহারা মানুষটার সঙ্গে মানুষের মনের যোগট। আগে হওয়া চাই, তবে তার দুঃখে বেদনার সঞ্চার মনে হবে, সাহিত্যেও সেইটে আগে দেখতে হবে ; তা ছাড়া দেখতে হবে ট্রাজেডিট। ঠিক পথে ঠিক্ সময়ে ঠিকৃ ওজন নিয়ে রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হচ্ছে কি না । এই পথ সময় ও ওজনের দিকে যার দৃষ্টি নেই, তিনি কখনও করুণ রসের স্বষ্টি করতে পারেন না। এইখানে একচুল এদিক্‌ ওদিক্‌ হলেই করুণ রস হয় হাস্ত নয় বীভৎস রসে ( অথব। বিরক্তি রসে ) পরিণত হয়ে লেখকের সমস্ত চেষ্টা পণ্ড করে দেয় । বড় নামজাদ লেখকের লেখাতেও অনেক সময় দেখা যায়, করুণ রসের অবতারণা করতে গিয়ে তার ভিতরের গাম্ভীৰ্য্য ও ংধমের কথা লেখক একেবারে ভুলে গিয়েছেন ; নায়িকাকে হয়ত প্রথম পাতা থেকে শেষ পাত পৰ্য্যন্ত ক্রমাগত ঝাটা মেরেই পিঠের ছাল তুলে দিচ্ছেন ; পাঠকের মন এতে করুণায় ভরে উঠবে কি, চোখই ধে ঝাটার কাটায় টাটিয়ে উঠছে। হয়ত কেউ হতাশ প্রেমিক নায়কের চোখ দিয়ে এমন অশ্রীবন্ত বওয়ালেন যে তার ধাক্কায় পাঠক একেবারে ছিটুকে বাইরে বেরিয়ে গেলেন ; এমন একটা খটিও সেখানে মাথা জাগিয়ে থাকে না, যা ধরে দাড়িয়ে অন্য, মানুষ দু-ফোটা চোখের জল ফেলতে পারে। দুঃখ জিনিষটা যেখানে যত গভীর, ধত করুণ, সেখানে তত সংযত ও তত শাস্ত হয়ে দেখা দিলেই তার প্রকৃত সৌন্দৰ্য্য ও বিষাদকে দেখা যায়। চিলে ছে৷ মেরে রসগোল্লাটা ছিনিয়ে নিয়ে গেলে ছোট ছেলে যদি হাউ মাউ করে তার পিছনে দৌড়তে থাকে, তবে তার এ ছোট দুঃখটার মাপসই ব্যবহারই সে করেছে বলতে হবে । কিন্তু মৃত্যু কি বিরহ-ব্যথা যেখানে প্রিয়ের সমস্ত অন্তর মথিত করে তোলে, সেখানে বাহিরের চাঞ্চল্যে তার প্রকৃত মূৰ্ত্তি দেখা যায় না । মড়া কান্নায় মানুষের মনে যে ধাক্কাট। লাগে, সেটাকে ঠিক ব্যথার রূপ বলা (نام مس- Rg) মাসিক গল্প-সাহিত্য 8«ፄ যায় না ; বশার খোচার মত কাচ কঠোর ও ভীষণ সেটা, খানিকটা বীভৎসও বটে। আর্টে তার স্থান অনেক সময় একটিমাত্র দীর্ঘশ্বাসেরও নীচে । ব্যথার যে মূৰ্ত্তি সাহিত্য প্রকাশ করতে চায়, তার মধ্যে একট। শ্ৰী একটা শাস্তি ও একট। শাশ্বত গাম্ভীর্য্যের ভাব ক্ষণিক উত্তেজনার চেয়ে অনেক উপরে । প্রিয়-বিচ্ছেদে মানুষ বুকভাঙা কান্না এক দিনই কাদে কিন্তু সেইখানেই তার ব্যথার শেষ হ’য়ে যায় না, বরং অনুভূতির প্রক্লত স্বচনা স্বরু হয়। সাহিত্য প্রকাশ করবে এই অশুভূতিটাকে, ক্ষণিক আকস্মিক আঘাতের প্রতিক্রিয়াটাকে নয় । আজকাল সাহিত্যে বাস্তবের আদর বেড়েছে বলে অনেকে বাস্তব মাত্রকেই সাহিত্যের মালরূপে চালাতে চেষ্টা করছেন। ছোট গল্প ও কাব্য-জগতে এটা একটা মস্ত ভুল। আস্তাকুড়ের সামনে দাড়িয়ে মেথরকে দিয়ে তার সমস্ত ন্তস্কার জনক সম্পত্তি গণন করিয়ে পাতা পেন্সিল নিয়ে খুব পরিষ্কার নিছুল একট। তালিকা করে দেওয়৷ কিছু এমন একটা শক্ত কাজ নয়, কিন্তু তাই বলে’ সেটা কি সাহিত্যের খোরাক হবে ? ছোট গল্প কি কবিতা যে বিষয়েরই হোক না কেন ছবির আর্টের মত তার আর্টেরও একটা প্রধান লক্ষণ হচ্ছে সৌন্দৰ্য্য। রুদ্র রস, করুণ-রস, হাস্যরস, প্রভৃতির সকলেরই একটা নিজস্ব সৌন্দর্ধ্য আছে, যেটাকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে আটের একটা বড় কাজ। সেটা ভুলে গিয়ে যদি কেহ মেডিকেল কলেজের শবব্যবচ্ছেদ কক্ষের নি ভুল রিপোর্ট, কি ময়লার টিন ও ড্রেনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেন, তবে তিনি ডাক্তার কি স্তানিটারী ইনস্পেক্টর হতে পারেন, সাহিত্যিক হবেন না। তা ছাড়া চোথে বাস্তবকে যেমন দেখা যায়, কাগজের পাতায় ঠিক্‌ তেমনি তুলে দেওয়াটাও একটা ভুল । লেখকের মনের রঙে যদি তাকে রঙীন না করা যায়, তবে লেখকের স্থান কোথায় ? মানুষের কল্পন, মানুষের আদশ, মানুষের কামনা, মামুষের নৈপুণ্য ইত্যাদি নানা মশলায় বাস্তবকে যে নূতন রূপ দেওয়া হয় সেই ত সাহিত্য-স্থষ্টি। এতে বস্তু-লোকের ফাঁকে ফঁাকে কল্প-লোক এসে পড়ে তার বহু কদৰ্য্যতাকে ঢেকে দেয়, বহু অবাস্তরকে সরিয়ে দেয় এবং