পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাস্তবে যা নেই এমন বহু সত্য ও স্বন্দরকে যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে। না হলে যুদ্ধের রিপোর্ট কি মহামারীর রিপোর্ট পড়লেই ত রুদ্র ও করুণ-রসের চর্চা করা যেতে পাবৃত । - গান শিখতে গিয়ে অনেক নবীন গায়ক যেমন সবার আগে ওস্তাদের মুদ্রা দোষটা নকল করে বসে ; নবীন সাহিত্যিকরাও অনেক সময় তেমনি শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের মুত্র-দোষটুকুই আয়ত্ত করে ফেলেন, প্রকৃত আর্ট যেট, তার পরিপূর্ণতা, তাকে আনাড়ির চোথে গোপন করে’ রাখে ; সেটা এমন সহজ স্বচ্ছ অনাবিল জল-স্রোতের মত বয়ে চলে বলে’ মানুষের তাতে তাক লাগে না। তাই যেটা বিকট, যেটা বিস্ময়কর, যেটা অস্বাভাবিক ঘেটা হেঁয়ালি, সেইটাকেই আপাত-দৃষ্টিতে আদত জিনিষ বলে ভ্রম হয়। এইজন্য অনেক লেখক সেইটাকেই প্রাণপণে বড় করতে চেষ্টা করেন । যেহেতু কোনো একজন নামজাদ সাহিত্যিকের নায়িকারা অধিকাংশই কোপন-স্বভাব, তাই আজকাল কাগজ খুললেই দেখা যায়, শতকরা ত্রিশজন নায়িকা নায়কের গায়ে ভাঙা বোতল ছুড়ে' কিম্বা মাথায় ইট মেরে প্রেম প্রকাশ করছেন । কেন যে তারা এমন করছেন এটা যে বুঝ। যার নL এইখানেই নাকি নারী-চরিত্রের রহস্য । অনেকে ঘরে বসে শাক-চচ্চড়ি ভাত খেতে খেতে হঠাৎ ঘর ছেড়ে উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটে দুর দিগন্তের পারে মিলিয়ে যাচ্ছেন, কি জানি কিসের ডাকে, যা বোঝানো যায় না । যেহেতু কোনো প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক গল্পের খানিকটা আবছায়া রাখেন, অতএব বেশী মৃন্দর করবার উৎসাহে এর আগাগোড়াই রহস্তাবৃত থেকে গেল । গল্পের কার্য্য-কীরণ না বোঝা যাওয়া আজকালকার গল্পের আর একটা বিশেবত্ব । মানুষের বাহিরের ব্যবহার ও ভিতরের চিন্তার মধ্যে অনেক প্রভেদ থাকে সত্য কিন্তু সেটা হচ্ছে চৰ্ম্মচক্ষের দৃষ্টিতে দেখা। সাহিত্যিকের একটা দিব্য দৃষ্টি আছে ধরে নিতে হবে; না হ’লে আগাগোড়া সুসামঞ্জস্তের স্বষ্টি তিনি কি করে করবেন ? মানুষ অতি দুঃখেও হাসে, অতি প্রিয়কেও ছেড়ে চলে যায়, অতি অস্পৃশ্য চণ্ডালকেও ঘরে তুলে আনে, দেবতাকেও দূরে রাখে বটে; কিন্তু কেন করে, যার অন্তদৃষ্টি আছে সে বুঝে নেয় এবং অপরকে বুঝে নেবার চাবিটি দেখিয়ে দেয়। সাহিত্যিকের সেই অন্তদৃষ্টি থাকা চাই এবং থাকার প্রকাশটা অপরকেও একটু জানতে দেওয়া চাই। জগৎটা যে ঠিক কলের মত চলে না, ন্যায় স্বত্রের নিয়ম ও যে সে পদে-পদেই ভাঙে এবং ভাল-মন্দর বিচারও যে সেখানে নিক্তির ওজনে হয় না, একথা খুবই ঠিকৃ। কিন্তু তাই বলে সাহিত্যিক যদি দেখান যে নায়ক নায়িকাকে ভালোবসেছিল এবং পর মুহূৰ্ত্তে ঘর থেকে বীর করে দিল, তা হ’লে মনে হবে যেন ভালবাসার এইটাই প্রকাশ। সাহিত্যিক হয়ত জগতের নাট্যলীলার এই প্রকাশ দেখিয়ে মনে মনে খুব খুশী হবেন, কিন্তু পাঠকেরা তার এ লীলায় মোটেই খুলী হতে পারবেন না, যদি না তিনি নায়ক-নায়িকার অস্তরে প্রবেশ করবার একটুখানি পথও খোলা রাখেন। বলছি না যে উত্তর-রাম-চরিতের লক্ষ্মণের মত সব কথার পরেই একটা ব্যাখ্যা দিতে হবে, কিন্তু মনগড়া ব্যাখ্যা তৈরী করে নেবার মতও একটু স্বত্র অন্তত: দেওয়া দরকার। মানুষকে চম্কে দেওয়া গল্পের প্লটের একটা লক্ষ্য থাকে বটে অনেক সময়ই । কিন্তু সে চমকৃটা হঠাৎ বিনামেঘে বজ্রাঘাতের মত হ’লে স্বরসিক পাঠক তাতে মোটেই পুলকিত হন না । মেঘটা আগাগোড়া থাকা সত্ত্বেও পাঠকের দৃষ্টি বজ্রাঘাতের পূর্ব মুহূৰ্ত্ত পৰ্য্যন্ত তার দিকে তাকাবার অবসর না পেলে অথবা দরকার বোধ না করলে এবং পরিশেষে সেইটাকে বজ্রাঘাতের অবশুম্ভাবী কারণ বলে বুঝতে পারলে তবে চমক্‌টার মধ্যে কিছুমাত্র বাহাদুরী থাকে। - বিস্ময়ে পাঠকের চোখ ঠিকূরে দেওয়াই ছোট গল্পের সব চেয়ে বড় আদর্শ নয়। স্বমস্ত গল্পটির মধ্যে একটা সামঞ্জস্ত ও স্বষমার প্রকাশ থাকা চাই, পরিপূর্ণতার তৃপ্তি মনে জাগিয়ে তোলা চাই। তার চরিত্র, তার বর্ণনা, তার বঁধুনী কোনোটা যেন কাউকে টেক্কা দিতে চেষ্টা না করে। কোনো একটা দিক ভারী হয়ে পড়লেই অন্য সকল সৌন্দৰ্য্যও তার ভারে চাপা পড়ে যায়। বৃত্তস্থিত ফুল যেমন রং, রেখা, ভঙ্গী, সৌরভ সমস্ত নিয়ে ভবিষ্যতের