পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] পারিয়াছিলেন এবং যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক বৃত্তিও প্রদান করিয়াছিলেন। মৃত্যুর পূর্বেই জেনাবু দেশবিদেশের বুধমণ্ডলীর ভক্তি-শ্রদ্ধার উপহার পাইয়াছিলেন। মহাবীর নেপোলিয়ান জেনারের মহত্ত্বে একান্ত মুগ্ধ ছিলেন—শুধু র্তাহারই কথায় যুদ্ধের সময় দুইজন ইংরেজ-বন্দীকে স্বাধীনতা প্রদান করিতে নেপোলিয়ন্‌ কুষ্ঠিত হন নাই । রোগের বিশিষ্ট জীবাণুদ্বারা মনুষ্যদেহে ব্যাধি ংক্রামিত হয় জেনার এই যে অপূৰ্ব্ব তথ্য প্রথম লোকসমাজে প্রকাশ করিয়া গেলেন তাহারই সাহায্যে মানবজাতিকে অপূৰ্ব্ব সম্পদের অধিকারী করিয়া দিয়া গিয়াছেন পাস্তুর এবং লিষ্টার। পাস্তুবু দেখিলেন যে প্রতিবৎসর সহস্ৰ সহস্ৰ গো-মহিষ মহামারীতে ধ্বংস হইতেছে অথচ ইহার প্রতিকারের কোনোই উপায় নাই । এই বিষয়ে গবেষণার সহকৰ্ম্মীরূপে পাস্তবু পাইয়াছিলেন রবার্ট ককু (Robert coch) নামক পণ্ডিতকে । শীঘ্রই পাস্তুর বুঝিতে পারিলেন যে মনুষ্য-দেহের স্তায় পশু-দেহও রোগের জীবাণুর সমক্ষে অসহায়, ব্যাধির জীবাণুর কবল হইতে পশুকে রক্ষা করিতে গেলে, পশু-দেহেও ঐ রোগের বিষ সামান্ত-পরিমাণে প্রবেশ করান আবশ্যক। পাস্তুরের এই আবিক্রিয়া প্রথমে সকলে হাসিয়া উড়াইয়া দিতে চাহিল, অবশেষে পশু-চিকিৎসক সমিতি এই অভিনব মতবাদের সত্যতা পরীক্ষা করিবেন বলিয়া মত প্রকাশ করিলেন। পরীক্ষার উদ্দেশ্যে র্তাহাকে পঞ্চাশটি মেষ প্রদান করা হইল। পাস্তুর প্রথম পচিশটি মেষের দেহে সামান্য পরিমাণে রোগের বিষ প্রবিষ্ট করাইয়া দিলেন এবং কয়েকদিন পরে সমস্ত মেষগুলিকে একত্র করিয়া তাহীদের প্রত্যেকের শরীরে উগ্ৰ বিয যথেষ্ট পরিমাণে ঢুকাইয়৷ দিলেন। স্থির হইল ১৮৮১ খৃষ্টাব্দের ২রা জুন, সাধারণের সমক্ষে এই পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করা হইবে । পাস্তুরের জীবনে সে এক স্মরণীয় দিন-প্রথম হইতেই তিনি দৃঢ়ভাবে বলিয়া আসিতেছিলেন যে, শেষের পচিশটি মেষ নিশ্চয়ই মরিবে । দ্বিপ্রহরে যখন তিনি পশুশালায় প্রবেশ করিতেছিলেন, তখন তাহার মনোভাব যে কিরূপ হইয়াছিল তাহার ধারণা আমরা এখনও কিছু-কিছু করিতে পারি। পাস্তবু ভাবিয়াছিলেন যে, প্রকৃতির গুপ্ত রহস্ত চিকিৎসা-শাস্ত্রে বিজ্ঞানের দান 8\ෂම් যদি তিনি উদঘাটিত করিয়া থাকেন, জীবদেহে জীবাণুদ্বারা রোগ পরিচালিত হয় ইহা যদি প্রাকৃতিক সত্য হয়, তবে জয় তাহার স্বনিশ্চিত । সহকৰ্ম্মী ও শিস্যবৃন্দে পরিবৃত হইয় যখন তিনি পরীক্ষাঙ্গণে প্রবেশ কৰিলেন তখন দেখিলেন যে, চব্বিশটি মেযের প্রাণহীন দেহ চারিদিকে পড়িয়া আছে, এবং অবশিষ্ট মেযটিও মৃত্যু যন্ত্রণাষ কাতরোক্তি করিতেছে। এই আশাতীত সাফল্যে পাস্তত্ব বুঝিলেন যে, বহুমূল্য তথ্য তিনি আবিষ্কার করিয়াছেন, তাহার ফল শুধু পশু-দেহে আবদ্ধ করিলে চলিবে না, মাহুষকেও এই লাভের অংশ দিতে হইবে। পাস্তু এইবার ক্ষিপ্ত জন্তু-দংশনের প্রতিষেধক ঔষধ আবিষ্কারে তঁহার সমগ্র শক্তি নিয়োজিত করিলেন । তৎকালীন লোকের বিশ্বাস ছিল যে, ক্ষিপ্ত কুকুরের লালার সঙ্গে বিষ মিশ্রিত থাকে। পাস্তুবু দেখিলেন যে এই প্রচলিত মত নিতান্তই ভ্ৰমাত্মক, কারণ শশকের দেহে এই লাল সামান্ত-পরিমাণে প্রবিষ্ট করাইলেও শশক ক্ষিপ্ত জন্তুর আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিতে পারে না। কুকুর ক্ষিপ্ত হইলে তাহার মস্তিষ্ক বিকৃত হয় এইরূপ অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া পাস্তর ক্ষিপ্ত জন্তুর মস্তিত্ব ও অন্য স্নায়বিক অংশ হইতে রোগের জীবাণু গ্রহণ করিতে আরম্ভ করিলেন এবং ইহাতে ফলও আশানুরূপ হইতে লাগিল । কিন্তু পরীক্ষা চলিতে লাগিল পশুর দেহে, পরীক্ষালব্ধ তথ্যের সত্যতা মানব-দেহে প্রমাণিত করিবার কোনোই সুবিধা এপর্য্যন্ত পাস্তর করিয়া উঠিতে পারেন নাই। হঠাৎ ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে সে স্থযোগও উপস্থিত হইল, এই সময়ে ক্ষিপ্ত কুকুরদষ্ট একটি বালক কুকুর-দংশনের দুই দিন পরে পাস্তুরের পরীক্ষাগারে আনীত হইল। পাস্তরের প্রবর্তিত অধুনা স্থবিখ্যাত রীতি-অনুসারে এই বালকই প্রথম চিকিৎসিত হয়— দ্বাদশবার দেহে বিষ প্রয়োগ করিবার পর এই বালক রোগের কবল হইতে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি লাভ করে। পাস্তরের এই মহৎ আবিক্রিয়ার বিরুদ্ধে অনেকেই প্রকাশ্বে নিন্দাবাদ আরম্ভ করিল ; ইংলণ্ডের এক শ্রেণীর লোক এই বিপক্ষদলের নেতা হইয়াছিল । কিন্তু ক্রমে যখন দেখা গেল যে, পাস্তরের প্রবর্তিত চিকিৎসা