পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নর বিনা, নর ব্যতীত, নরের প্রতি, নরের পশ্চাৎ প্রভৃতি এক-একটি বিভক্তি নহে কেন ? ইহারও কোন উত্তর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য বাংলা ব্যাকরণে নাই। এইরূপ সপ্তমী বিভক্তির বহুবচনে ‘সকল নরে’ বা ‘নরসকলে কি করিয়া যে বিভক্তি হইতে পারে এবং সকল’ শক মুনি বিভক্তির সমস্ত নিয়ম উলটাইয়া দিয়া হঠাং -নরে”র আগে বসিয়া পড়িয়া সপ্তমী বিভক্তি নির্দেশ করে, তাছা হইলে “দুইজন নরে” “দশজন নরে” “অনেক নরে” প্রভৃতি এক-একটি বিভক্তি নহে কেন, এসকল সন্দেহ মিটনার আশ বাংলার ব্যাকরণকারদের নিকট করা অনু্যায় । ভার পর একবচন ও বহুবচন ভেদ । ব্যাকরণকারের দু-একটি শব্দ দেখাইয় তাহার একবচন ও বহুবচন বিভক্তি দেখাইয়াছেন । কিন্তু এইসব বাংলা ব্যাকরণ পড়িয়া কেউ যদি লেখে “অনেক ইটেরা পড়িয়া রহিয়াছে” তাহা হইলে তাহ কেন অশুদ্ধ হইল সেনিয়ম কোন ব্যাকরণ হইতে বাহির হইবে না। আসল কথা বাংলা-ব্যাকরণকারেরা বিভক্তি পদার্থটি বুঝেন নাই। সংস্কৃত-ব্যাকরণকারেরা বহু পরিশ্রমে সমস্ত শব্দ তন্ন তন্ন করিয়া পৰ্য্যবেক্ষণ করিয়া দেখিলেন যে, প্রতিপদিক বা শব্দের যতপ্রকার রূপভেদ হয় তাঙ্গ দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ; এক, যে রূপভেদগুলি অন্য শব্দের এবং ক্রিয়ার সহিত সম্বন্ধ জ্ঞাপন করে, কিন্তু শব্দের অর্থের কোন বিকৃতি হয় না ; অপর, যে রূপভেদগুলিতে শব্দের অর্থের বিকৃতি হয় এবং যে রূপভেদগুলির দ্বারা অন্য শব্দের সহিত সম্বন্ধ বুঝান যায় না। ইহার মধ্যে সম্বন্ধ-জ্ঞাপক রূপভেদ গুলিকে তঁfহার বিভক্তি ও অন্তগুলিকে প্রত্যয় বলিলেন । এই বিভক্তিগুলি ভাগ করিয়া তাহারা সাত শ্রেণী ও তিন বচনে স্থাপন করিলেন । এবং তাহার পর বিভক্তিগুলির কোনটি কি অর্থ প্রকাশ করিতেছে তাঙ্গর বিচারে প্রবৃত্ত হইলেন ও তাহদের প্রয়োগ নির্ণয় করিলেন। কিন্তু ইহা গাধা-পাটুনির কাজ এবং বাংলা ব্যাকরণকারদের উৰ্ব্বর মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। তাছাদের যুক্তি অন্যরূপ । সংস্কৃত ভাষা দেব ভাষা-প্রত্যক্ষভাবে হউক, প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড পরোক্ষভাবে হউক, সংস্কৃত হইতে বাংলার উৎপত্তি— অতএব সংস্কৃতে যখন সাতটা বিভক্তি আছে, তখন বাংলাতেও তাহ অবশ্যই থাকিবে । বাংলায় দ্বিবচন খুজিয়া পাওয়া গেল না এই একটা বড় দুঃখ, সেটা দিতে পারিলেই চমৎকার হইত। কিন্তু একবচন ও বহুবচন বিভক্তি দেওয়া গেল । তাহ হইলেই বাংলা শব্দরূপ সম্পূর্ণ ! এখন যদি তাঙ্গদের জিজ্ঞাপ করা যায়”—দশজন লোক আসিয়াছে" এখানে "লোকের" হইল না কেন ? তাহারা বলিবেন, সংখ্যাবাচক শব্দ পূৰ্ব্বে থাকিলে বহুবচন চিহ্নের লোপ হয়। আপদ চুকিয় গেল, তাহারাও থালাস, আমরাও নিশ্চিন্ত । আসল কথা, বাংলা ব্যাকরণকারের ধনি একটু লক্ষ্য করিতেন তাহা হইলে দেখিতে পাইতেন যে, বাংলা ব্যাকরণে যদিও একবচন ও বহুবচন প্রভেদ করিবার প্রয়োজন আছে, কিন্তু নাম শব্দের একবচন বিভক্তি ও বহুবচন বিভক্তি নাই । বিভক্তি আছে ‘সাধারণ বিভক্তি ও ‘কেবল বহুবচন’ বিভক্তি ও সাধারণ বিভক্তি অর্থাং যাহা একবচন ও বহুবচন উভয় স্থলেই প্রযুক্ত হইতে পারে। দুই’ ‘তিন প্রভৃতি শব্দ লক্ষ্য করিলে দেখা যায় যে, তাহারা "দুইয়ে” “দুইয়ের” তিনে” “তিনের” প্রভৃতি রূপ গ্রহণ করে “দুইয়েদের” বা “তিনেদের” নয়। দুই’ ‘তিন যে বহুবচন তাহাতে সন্দেহ নাই, অতএব ‘এ’ এর যেমন একবচনের বিভক্তি তেমনি বহুবচনের বিভক্তি ৷ সাধারণ বিভক্তিগুলি সমস্ত শবেই প্রযুক্ত হইতে পারে, কিন্তু কেবল "বহুবচন’ বিভক্তি সব শব্দে যুক্ত হয় না। যে শব্দগুলি পুংলিঙ্গ, স্বলিঙ্গ বা উভয়লিঙ্গ কেবল তাহারাই বহুবচন’ বিভক্তি গ্রহণ করে ; এই হিসাবে নাম শব্দগুলিকে সলিঙ্গ ও অলিঙ্গ এই দুই ভাগে ভাগ করা উচিত। সংস্কৃতের পুলিঙ্গ, স্বীলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ এ বিভাগ চলে না । এই ত গেল বচনের কথা, তার পর বিভক্তি। বাংলা শব্দগুলির রূপভেদ পর্য্যালোচনা করিলে দেখা যায় যে, তাছাদের সাধারণ বিভক্তি চা৭িটি ও কেবল বহুবচন বিভক্তি তিনটি মাত্র আছে। ‘নর’ শব্দ ধরা যাক— ‘সাধারণ” বিভক্তি ( ১ ) নর, (২) নরের, (৩) মরকে, (৪)