পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 సె6 ধূলিসাৎ করা তখনকার দিনের ধর্মের প্রধান কাৰ্য্য হইয়াছিল। ইহাতে জগতের বিশেষ ক্ষতিও হয় নাই। তখনকার আর্ট মানব-জীবনের খোরাক দিতে অসমর্থ ছিল —এবং খৃষ্টধৰ্ম্ম তাহার জীবনের নবীন অনুভূতি ও অর্থ দ্বারা বিশ্বের সে ক্ষুধা পূর্ণ করিয়াছিল। পরে যখন পুনরায় খৃষ্টধৰ্ম্ম চার্চের ধৰ্ম্মরূপে প্রচারিত হইল তখন পুনরায় এক নূতনপ্রকারের আর্টের স্বষ্টি হইল। খৃষ্ট ও মেরীর অলৌকিক কাহিনী, দ্বাদশ শিষ্যগণের অদ্ভুত ক্রিয়া-কলাপ, খৃষ্ট ভক্তগণের দেবভাব, আশ্চৰ্য্য ভক্তি ও প্রেম ও পরে মধ্যযুগে লৌহবৰ্ম্মাবৃত খৃষ্টীয় নাইটগণের নানা গুণাবলী কীৰ্ত্তন করাই তখনকার আর্টের একমাত্র কার্য্য ছিল । পঞ্চদশ শতাব্দীর পর হইতে উচ্চস্তরের খৃষ্টানদিগের মধ্যে প্রচলিত খৃষ্টধর্মের প্রতি অবিশ্বাস আসিল ও পরে রেনেসঁাস (Renaissance) বা নব-জীবনের সঙ্গে সঙ্গে প্রচলিত ধৰ্ম্মে সম্পূর্ণ অনাস্থা ও আর্টে যুগ-পরিবর্তন সংঘটিত হইল। ইহার ফলে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দই আটের লক্ষ্য হইয়া পড়িল । খৃষ্টধর্মের মঙ্গলভাব কাব্য ও কলা হইতে নির্বাসিত হইল। পরে আনন্দ আবার আমোদের সমার্থ হইয়া পড়িয়াছিল। এই যুগের সাহিত্যের মধ্যে অনেক উৎকৃষ্ট জিনিষ আছে, কিন্তু শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে যে কিরূপ রুচির বিকার হইয়াছিল তাহার সাক্ষ্য এই যুগের সাহিত্য চিরকাল বহন করিবে। এই যুগের শ্রেষ্ঠ কবি শেক্সপীয়র পর্য্যন্ত; এই দোষ হইতে মুক্ত নন। আর্টকে বিচারের ও বিশ্লেষণের চক্ষে দেখা প্রথমে অষ্টাদশ শতাব্দীর জাৰ্ম্মানীতেই আরম্ভ হইয়াছিল। Baumgarton ( বাউমৃগাটেন ) একালের আটের আদি সমালোচক । তিনি বলিয়াছেন সৌন্দৰ্য্য আর্টের লক্ষ্যীভূত। মহিষ বুদ্ধির পথে অগ্রসর হইয়া চরম সত্যে উপনীত হয়—আব ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সৌন্দৰ্য্যকে উপলব্ধি করে । এখানে বলিয়া রাখা ভাল যে, ইন্দ্রিয়-রথে সৌন্দর্ঘ্যের আলোকপুরীর দিকে রম্য প্রয়াণ করিতে যাইয়া যে-আর্টের স্বষ্টি হইয়াছে তাহাতে আর্টের মর্য্যাদা সব সময় রক্ষিত হয় নাই । (বাউমূগার্টেন) যে মত প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন, তাহাতে অনেক বিপদের সম্ভাবনা আছে। তাহার মতে আর্ট, Baumgarten প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড সৌন্দৰ্য্যস্থষ্টি করে এবং এই সৌন্দৰ্য্য আমাদের মধ্যে কামনার (desire) স্থষ্টি করে। যাহা সুন্দর তাহাকে আমরা পাইতে চাই। কান্ট, সৌন্দৰ্য্যকে আর্টের জনক বলিয়াছেন কিন্তু ইহা হইতে কামনাকে বাদ দিয়া ইহাকে মুক্ত করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, মানুষের চিন্তা ও ইচ্ছা বাদে আর-একটি শক্তি আছে তাহ বিচার করে— তাহা যুক্তি-তর্ক ব্যতীত বিচার করে এবং কামনা-বিহীন আনন্দের স্বষ্টি করে। ইহার উপরই মানুষের সৌন্দৰ্য্য-তত্ব প্রতিষ্ঠিত। উহার মতে সৌন্দৰ্য্য তাহাই যাহ। মাহুষের লাভ-ক্ষতির দিকে দৃষ্টি না রাগিয়া সকলকে শুধু আনন্দ দান করে এবং চিরকাল করিবে । ব্যক্তিগত ব্যবহারের লেশমাত্র গন্ধ ইহাতে নাই। শিলারও ( schiller ) এই মতাবলম্বী ছিলেন। ফিকূটে (Fielt) সৌন্দৰ্য্যকে দ্রষ্টার চক্ষের বিযয়ীভূত করেন এবং মানবাত্মার রম্যপুরীতে তাহার স্থান নির্দেশ করেন । এই যে সুন্দর আত্মা ইহার বাহিরের প্রকাশই আর্টের বিষয়ীভূত এবং ইহার কার্য্য মাকুযকে শিক্ষা দান করা—শুধু মন নয়—শুধু হৃদয় নয়, কন্তু সমগ্র মানবকে ইহা সম্পদে পরিপূর্ণ করে। আর্ট, তাঙ্গার নিকট বাহিরের জিনিষ নহে—ইহা শিল্পীর স্বন্দর হৃদয়ের প্রকাশ। এইখানে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমরা একটা স্বন্দর মিল পাই । তিনি র্তাহার What is Art ? নামক প্রবন্ধে এই কথাটিই স্পষ্ট করিয়া বুঝাইয়াছেন। তিনি সমস্ত প্রবন্ধের মধ্যে এই কথাটি বারবার বলিয়াছেন— "The principal object of Art is the expression of unsonality” অর্থাং আর্টের মুখ্য উদ্দেশ্য হইতেছে ব্যক্তিত্বের প্রকাশ । কিন্তু এই যে personality বা ব্যক্তিত্ব ইহ সংযমের দ্বারা স্বন্দর, স্থির ও গম্ভীর হওয়া চাই, নতুবা আর্ট সুন্দর হইবে না—এই কথা তাহার সৌন্দৰ্য্যতত্ত্বে বলিয়াছেন। ভারতীয় চিন্তার অনুসরণ করিয়া হেগেল বলিয়াছেন যে, বিশ্ব-প্রকৃতিতে ও আর্টে ভগবানের সৌন্দৰ্য্য প্রকাশিত হয় । তিনি প্রক্লতিতে ও মানবাত্মায় স্ফৰ্ত্ত হইয়াছেন। আত্মা ও যাহা আত্মিক তাহাই শুধু স্বন্দর। বহিঃপ্রকৃতির সৌন্দৰ্য্য পরমাত্মার সৌন্দর্য্যের প্রতিচ্ছবি মাত্র। এই জগতের পশ্চাতে যে এক বিরাটু ভাব (idea) আছে তাহা ইন্দ্রিয়