পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* 8 ভাল। কিন্তু শাক দিয়ে কি আর মাছ ঢাকা দেওয়া যায়, স্বরেশ্বর ? আসল কথাটা আমি ধরতে পেরেছি কি না তুমিই তার সাক্ষী!" বলিয়া সজনীকান্ত হাসিতে লাগিল। এবারও সুরেশ্বর কোনো, কথা না বলিয়৷ মৃদু মৃত্যু হাসিতে লাগিল । ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া সজনীকান্ত বলিয়া উঠিল, “কিন্তু যাই বল স্বরেশ্বর, তোমার উপরদিদির রাগ হতেই পারে । আহ বেচারী শত কষ্ট করে একটি হাকিম পাত্র জুটিয়েছে, আর তুমি মেয়েটির কানে কি-এক মস্তর ঝেড়ে দিয়ে একেবারে বিষম গোলযোগ বাধিয়েছ। যে ছিল ছেলেবেল থেকে পুরোদস্তুর মেম-সাহেব, সে হয়ে গেল একেবারে যোগিনী ! পিয়ানে। আর হাৰ্ম্মোনিয়ম্ বাজিয়ে বাজিয়ে ধে লোকের কান ঝালাপাল করে দিত সে এখন দিনরাত একটা চরকা নিয়ে বসে চরোর চরোর করছে। দিদি ত ক্ষেপে ওঠ বার মতন হয়েছেন ! আমার মনে হয় রোজ সকালে অন্ততঃ একবার করে তোমাকে অভিশাপ ন দিয়ে দিদি বোধ হয় জলস্পর্শ করেন না।” বলিয়া সজনীকান্ত উচ্চস্বরে হাসিতে লাগিল । সজনীকাস্তের মুখে সুমিত্রার বর্ণনা শুনিয়া মুরেশ্বরের যত্নাবরুদ্ধ হৃদয় নিমেষের জন্য চঞ্চল হইয়া উঠিল, কিন্তু তখনি সে নিজেকে সংযত করিয়া লইয়া স্মিতমুখে কহিল, “তার জন্য আর আপনার দিদির বিশেষ করে’ দোষ কি বলুন ? দেশের আর বিদেশের সমস্ত লোকই ত এতাহ অপরিমিত পরিমাণে ও-জিনিসটা আমাদের দিচ্ছে ।” সজনীকান্ত বলিল, “দেবে না কেন, স্বরেশ্বর ? তোমরা যে দেশের সমস্ত লোককেই পাকে জড়িয়েছ ! চাকুরের , চাকরী, উকিলের ওকালতী, ব্যবসাদারের বাণিজ্য, মাতলের মদ, কোন বিষয়ে তোমর হস্তারক হওনি বলে ? এমন কি বিয়ের পাত্রীটি পৰ্য্যন্ত তোমাদের জুলুম থেকে রক্ষা পেলে না।” বলিয়া সজনীকান্ত উচ্চস্বরে হাসিতে লাগিল । 달 সজনীকান্তের শেষ কথায় খরখরের মুখে কৌতুকের মৃদু হাটুকু, দিনাস্তকালীন স্বৰ্য্যাস্ত-প্রভার মতন, দেখিতে দেখিতে মিলাইয়া গেল। কথাটার সত্য মিথ্যা পরীক্ষা প্রবাসী—বৈশাখ, •III [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড a করিয়াই এই কথ ভাবিয়া उशब भन একটা অপরিসীম ক্ষোভে ভরিয়া উঠিল যে যেমন করিয়াই হউক বিমান ও সুমিত্রার মধ্যে আবিভূত হইয়া সে একটা বিপ্লবের স্বষ্টি করিয়াছে। ইহার জন্য সে স্বয়ং কতটা দায়ী কাৰ্য্য-কারণের মধ্যে তাহার কতখানি যোগ আছে, সমগ্র ব্যাপারটার লাভলোক্সান, স্যায়-অন্যায়ের কি হিসাব, এসকল বিচারের মধ্যে প্রবেশ করিতে তাহার একেবারেই প্রবৃত্তি হইল না ; শুধু যাহা একান্ত সত্য, ঘটনারূপে যাহা অম্বপেক্ষণীয়, তাহারই কথা মনে করিয়া সুরেশ্বর অন্তরের মধ্যে একট। দুঃসহ প্লানি ভোগ করিতে লাগিল । সুরেশ্বরের মুখে ভাবান্তর লক্ষ্য করিয়৷ সজনীকান্ত সহাস্যমুখে বলিল, “রাগ করলে নাকি হে স্বরেশ্বর ? তুমি মনে কিছু কোরে না, আমি পরিহাস করছিলাম।” স্বরেশ্বর ফিক হাসি হাদিয়া কহিল, “ণ, ন, রাগ করব কেন ? দুঃখিত হবার কথায় রাগ করলে চলবে কেন ?" সজনীকান্ত মুরেশ্বরকে প্রবোধ দিবীর অভিপ্রায়ে বলিল, “দুঃখিত হবার কথাই বা কি করে’ ? ম৷ যদি নিজের মেয়েকে সাম্লাতে না পারে তা হ’লে তুমিই বা কি করবে আর আমিই বা কি করব বলে ?” এ আলোচনা আর অগ্রসর হইতে না দিবার অভিপ্রায়ে সুরেশ্বর বলিল, “তা বটে।" "সুরেশ্বর, আমার একটা অনুরোধ রাখবে?" - কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া স্বরেশ্বর বলিল, “কি বলুন ?” “আজ সন্ধ্যাবেলু একবার আমাদের বাড়ী বেড়াতে যাবে ?" o "আপনি ত জানেন আমি আজকাল আপনাদের বাড়ী যাইনে ৷” o “প্রতিজ্ঞ করে’ নাকি ?” মুরেশ্বর মৃদ্ধ হাসিয়া বলিল, “প্রকাপ্তভাবে এfন কিছু প্রতিজ্ঞ করিনি ; কিন্তু প্রতিজ্ঞ না করেও ত অনেক কাজই করি, আর করিনে।” - এ-উত্তরে অকারণ আশান্বিত হইয়া সজনীকান্ত ঈষৎ নিৰ্ব্বন্ধসহকারে বলিল, “তা হলে যদি বিশেষ আপত্তি না থাকে ত আজ একবার যেয়ো না ?”