পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

**::::: **-** - ৪র্থ সংখ্যা কবির শ্রেষ্ঠতম জীবনেরই প্রকাশ। মানুষ যখন নিজের মধ্যে অমৃতের সন্ধান পায় তখনই তাহার জীবন-নদী কুল ছাপাইয়া যায়—তখনই সে সাগর-সঙ্গমের মস্ত ব্যাকুল হয়, তখনই তাহার সেই চঞ্চলত স্বয়, বর্ণ ও রেখার বিচিত্র বন্ধনের মধ্যে আত্ম-প্রকাশ করে। তিনি বলিয়াছেন, “ষথার্থ উপলব্ধি-মন্ত্রই আনন্দ-তােহাষ্ট চরম সৌন্দর্য্য ।” “সত্যের এই আনন্দরূপ, অমৃতরূপ দেখিয়া সেই আনন্দকে ব্যক্ত করাই কাব্য-সাহিত্যেক লক্ষ্য ।” সত্য যখন হৃদয়ের দ্বারা উপলব্ধ হয় তখন তাহা মানবের নিজস্ব হয় তথন তাং তাহার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এক হইয়া যায়। মানবের হৃদয়-বুন্দাবন ভূমার লীলাক্ষেত্র। মানবহৃদয় অপেক্ষ আর্টের আর নিশ্চিত্তর ভূমি কি হইতে পারে ? আর এই মত গ্রহণ করিলে কাব্যের সামগ্রী ও বিষয় কি অসীম অস্তহীন হইয়া পড়ে ! কেননা ইহলোক, পরলোক এক হইয়া যায়। সংস্কৃত সাহিত্যের রস ও ভাবের কল্পিত সীমা-রেখা অদৃপ্ত হইয়া যায়! আমাদের প্রত্যেক হৃদয়ভাবের মধ্যে আমরা ভূমার স্পর্শ লাভ করি ও প্রত্যেক ভাবই উচ্চাঙ্গের আর্টের বস্তু হয় । আর মানবাত্মার সঙ্গে ব্রহ্মের যোগ যেমন বাড়ে, তেমনই বিশ্বের অণুপরমাণুর সঙ্গে তাহার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই যে ব্ৰহ্মামুভূতি ইহন অনন্ত, সেই হিসাবে আর্টের বিষয়ও অনন্ত হয় । অপরদিকে ইহলোকের সঙ্গে অধ্যাত্মলোকের সম্বন্ধ যাহারা ছিন্ন করে তাহারা কি দরিদ্র হইয়া পড়ে । ইহার যদি প্রমাণ কেহ চায়, তাহাকে আমরা ইংলণ্ডের অষ্টাদশ শতাব্দীর সাহিত্য ( রোমান্টীক রিভাইভ্যালের আগে পৰ্য্যন্ত ) পাঠ করিতে অনুরোধ করি। আমাদের দেশেও বৈষ্ণব-ধর্মের পতনের পর হইতে ব্রাহ্মধর্শের অভু্যখানের পূৰ্ব্ব পর্যন্ত এই দশ ছিল । আমরা পূর্বেই দেখাইয়াছি যে, টলষ্টয়ের মতটি উদারতা হইতে আরম্ভ করিয়া সঙ্কীর্ণতার দিকে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু হেগেলের মতটি সঙ্কীর্ণ ভূমি হইতে নামিয়া বিশাল সাগরে পড়িয়াছে। রবীন্দ্রনাথের ভারতীয় প্রতিভা এই দুইকে এক সমন্বয়ের ভূমিতে আর্টের আদর্শ 8సారి আনিয়াছে। তিনি যে ভূমিতে উপস্থিত হইয়াছেন, সেখানে দণ্ডায়মান হইয়া আমরা দেখি যে, যে-ভাবগুলি আপনার বেগে আপনি বাহির হইবার জন্ত চিত্তকে ব্যাকুল করে তাহারা সত্য, স্বন্দর ও মঙ্গল । তাই তাহার পবিত্র। তাহারা মানব-জীবনের যাহা সর্বোচ্চ অনুভূতি তাহাই প্রকাশ করে। যাহা স্বতঃস্ফূৰ্ত্ত হইবার জন হৃদয়কে ব্যাকুল করে নাই, তাহা বেগ ীৈন, তাহার স্বষ্টিং সময় মানব হৃদয় অমৃতের সন্ধান পায় নাই—বিশ্বের মধে সে আপনাকে দেখে নাই—-সত্যকে সে আনন্দের শঙ্গ বাজাইয়া বরণ করিয়া লইতে পারে নাই । সেখানে যে ব্ৰহ্মাতৃভূতি পায় নাই। সে হয়ত তাহার অসার, অসনাত কয়টি কথা নামাছন্দে সাজাইয়া দেউলিয়া-হৃদয়ের দৈন ঢাকে। পশ্চিমের টলষ্টম বৈজ্ঞানিক ভূমিতে দণ্ডায়মান হইয়াছেন, কিন্তু ভারতের রবীন্দ্রনাথ ঋষিদের মতই সত্তা ভূমিতে স্থান লইয়াছেন। টলষ্টয়ের মধ্যে বৈজ্ঞানি প্রতিভা দেখিতে পাই । কিন্তু রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্যের, তা র্তাঙ্গার মধ্যে অতীন্দ্রিয় সহজামুভূতি (mystic intuition এত প্রবল র্তাহার মধ্যে কুয়াসার ভাব নাই—তিf এমন এক সত্যে আসিয়াছেন ষে, তা হইতে বিচুr হইবার সম্ভাবনা নাই—তাহ ৬ .নের মূলে বা করিয়া আছে । যাহা অভেদ টলষ্টয় তাহাকে বিভি করিয়া দেখিয়াছেন, রবীন্দ্রনাথ ভেদের মধ্যে অভেদে দেখিয়াছেন। সেইজন্তই তাহার সকল কথা সত্য—প্রা নাড়া দেয়—সকল কথাই এক অপূৰ্ব্ব সৌরভে ভরপুর কিন্তু আসল কথায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে টলষ্টয়ের কো প্রভেদ নাই। তবে বৈজ্ঞানিক প্রতিভার এক স্ববি আছে, সে আপনার ভূমি বেশ করিয়া চেনে, কিন্তু যি অদৃশ্ব লোকের জ্যোতির দিকে মুখ ফিরাইয় তাহ প্রকাশের অপেক্ষায় আছেন, তাহার কাছে বিছাংস্ফ স্থিরালোক বলিয়া ভুল হইবার বিপদ আছে এইজন্যই ত অনিমেষ স্থির-দৃষ্টি চাহ যাহা গ্ৰহতারকা চন্দ্রতপনকে ভেদ করিয়া প্রকৃতির দূর গোপন-গুহায় অবিরাম নৃত্য চলিতেছে তাহ দেখিতে পায়।