পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t}\ు মরবার ভয়ে যাত্রীদের চলাচল অনেক সংযত হ’য়ে এসেছে। কেবল মাঝে মাঝে ষ্টেশনচর দুই-একটা মানুষ এদিকৃওদিক্‌ ঘুৰ্বছে-ফিরছে। . প্লাটফর্মের কেরোসিনের খরচ যথাসম্ভব বঁচিয়ে আলোগুলি নিভানোই আছে, গাড়ী অfসার অল্পক্ষণ আগে জালা হবে । লাল কাকর-বিছানো খোলা প্লাটুফৰ্ম্মে নিজ-নিজ বাক্স, বিছানা ও পুটুলির উপর বসে যাত্রীরা গাড়ীর অপেক্ষা করছে। ঘুমিয়ে পড়লে গাড়ী ধরতে বিপদ হতে পারে, অথচ চোখের থোরাকের উপর অন্ধকারের এমন কালে পর্দা টানা যে, চোখ মেলে’ থাকা দায়। তাই “অমুক আছ হে—” বলে’ একটা দীর্ঘ টান দিয়ে বন্ধুর খোজে যাত্রীরা থেকে থেকে রাত্রির নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করছে । অমুক কাছে থাকূলে গল্পট আস্তেই চলছে, দূর থেকে সাড়া এলে পার্থে শয়ান রেলের কুলির নিদ্রা-স্বথকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ করে’ উচ্চকণ্ঠে দুই প্রান্ত থেকে দুইজনে পরস্পরের দুঃখ ও প্রতিবাসীর মুখের আলোচনায় সময় কাটাচ্ছে । চিরজীব-বাবু এক বিরাটু বাহিনী সঙ্গে করে’ এই পথে কলিকাতা ফিরছিলেন । সঙ্গে ছিলেন র্তার গৃহিণী, দুটি কস্তা, তিনটি দৌহিত্র, দুটি দৌহিত্রী, বিধবা ভ্রাতৃজায়, সকন্ত একটি ভ্রাতুষ্পুত্রী, সসন্তান ভাগিনেয়-বন্ধু, কস্তার জা, হালক-পত্নী, কন্যার দেবর, দেবরের বন্ধু, তিনটি ঝি ও একটি চাকর । ইহা ছাড়া মোটঘাট ছিল তেইশটি । বাড়ী থেকে রওনা হবার সময় সঙ্গে একটা কেরোসিনের লণ্ঠন জানা হয়েছিল, পথে কাজে লাগবে বলে’ । কিন্তু গরুর গাড়ীর বfাকৃরানির কল্যাণে একটা টিনের প্যাটুর চাপা পড়ে তার চিম্নীটি ভেঙে যায় এবং কাগজের ছিপিটি খুলে সমস্ত তেলট রসগোল্লার ছাড়িটি স্ববাসিত করে তোলে। অন্ধকার যত ঘনিয়ে উঠছিল, শিশুপালের প্রাণ আতঙ্কে ততই পূর্ণ হ’য়ে আসছিল। মাতৃকোলের অধিকার থেকে যারা এখনও বঞ্চিত হয়নি, তার কচি হাতে মার গলা জড়িয়ে মার বুকে মুখ লুকিয়ে কোনপ্রকারে -আকাশ-জোড়া কালে দৈত্যটার আক্রমণের হাত থেকে নিজেদের স্বরক্ষিত মনে করবার চেষ্ট৷ করছিল । যাদের মাতৃকোল নবাগত প্রতিদ্বন্দ্বী বেদখল করে নিয়েছিল, তার কেউ মার আঁচলটুকু ছোট মুঠির প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড সমস্ত-শক্তি দিয়ে চেপে ধরে কেউবা মুদ্রিত চোখ-দুটি নিজ হাতের আবরণে দ্বিগুণ করে আড়াল করে কম্পিতবক্ষে এই ভীষণ দুৰ্দ্দিনের অবসান কামনা করছিল । ভীত শিশুকণ্ঠে কেউ ডাকৃছিল, “মা গে, আলো দাও," কেউ শ্রাস্ত-জড়িত-কণ্ঠে প্রার্থনা করছিল, “ম, বাড়ী যাব,” কেউ বা ক্ষীণ স্বরে জানাচ্ছিল, “মা, ভয় ।” দুই একটি বেপরোয় শিশু ভয় ভুলে’ কঠিন টিনের বাক্সের উপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিল । সকাল বেলা অনেক বুদ্ধি খরচ করে চাকরের হাতে একডাল ফল ও এক ইড়ি সন্দেশ দিয়ে চিরঞ্জীব-বাৰু ষ্টেশন মাষ্টরকে নিজ যাত্রার কথা জানাতে পাঠিয়েছিলেন। সঙ্গে অনেক মেয়েছেলে, কচিকাচ ও লাটবহর আছে, যেন গাড়ীতে ওঠার একটা ব্যবস্থা করা হয়। উত্তরে অভয় পেয়ে তিনি এখন কুমড়োর বস্তা ঠেস দিয়ে নিশ্চিন্তমনে ধূমপান করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ সিগনাল ও ঘণ্টার সঙ্কেতে সকলে সচকিত হ’য়ে উঠে বসল। চারি ধারে “ওঠ, ওঠ, জাগ, জাগরে" সাড়া পড়ে গেল । চিরঞ্জীব-বাৰু এরকম আচমকা সাড়া পেয়ে “মাষ্টর ও ম্যাষ্টর" বলে চীৎকার স্বরু করে দিলেন । দূর হতে কে সাড়। দিলে, “এই যে মশায়, আসছি।” কিন্তু তাকে দেখা গেল না। যাত্রীদের ঠেলা দিয়ে নীলকুর্তা-পরা ফুলি তিনটা কেরোসিনের আলো জেলে দিয়ে সকলকে লাইন থেকে দূরে সরে দঁাড়াবার উপদেশ দিয়ে চলে গেল। ইঞ্জিনের আলো দেখা যাবার আগেই স্থকো, ছাতা, পুটুলি, বস্ত কাধে যাত্রীরা সকলে সামনের দিকে দৌড়তে আরম্ভ করলে। তবু ম্যাক্টরের টিকি দেখা গেল না। গাড়ী এসে পড়ল। আধ-অন্ধকারে গাড়ীর নম্বর পড়া যায় না ; রাত্রির হাওয়ার ভয়ে গাড়ীর জানালাগুলিও ভাল করে’ বন্ধ করা, ভিতরে কতগুলি মানুষ আছে বাহির থেকে তাও বোঝা শক্ত। চিরঞ্জীব বাবু সাহায্যের আশা ছেড়ে মেয়ে-গাড়ীর সন্ধানে সদলে গাড়ীর এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত দৌড় শেষ করে’ সবে হতাশ হয়ে ইাপাতে বাবেন, তখন লণ্ঠন-হাতে ষ্টেশন মাষ্টার এসে “এই যে মশায়, এই গাড়ীতে উঠে” পড়ুন, মেয়েগাড়ী পাবেন না” বলে একটানে একটা দরজা