পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

むミe বধূত্বের লজ্জায় কথার উত্তর দিতে সে পারছিল না। তিস্থ-ঝি বেীকে তুলে ধরে বললে, “র্কেদ না বৌরাণী, আমার যে পরনের কাপড়পান ছাড়া সব কিছু গিল্লির পটুলির সাথে গেছে, তা কি করব বল ? কাপড় ত আর না পরে থাকব না, আবার হবেই।” বেী, ঝির কাধে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে বললে, “তিহু, আমার মেয়ে, আমার খুকুম। কই ?” তিতু সরব ক্রনীনে সকলকে সচকিত করে মেয়ে ঙ্গরানোর পবর জানিয়ে দিলে। মূহ্যমান যাত্রীদের মধ্যে আবার একটা ভাতি ও উত্তেজনার ঢেউ পেলে গেল। গাড়ীর একমাত্র যুবকমাত্রী ছুটে এসে শিকলট টানতে যেতেই চিরঞ্জীব-বাপ তার হাত চেপে ধরে বললেন, “না দাদা, আমার আর উব গারে দরকাব নেই। মেয়েটাত গেছেই, আবার তোমাদের পাল্লায় পড়ে রেলকোম্পানীকে পাঁচশ টাকা দিতে পারব না।” যুবক হতভম্ব হ’য়ে বসে পড়ল। চিরঞ্জীব-দুহিতা সাত্বনার স্বরে বললেন, “কে জানে হয় ত পাশের গাড়ীতে নবর সঙ্গে উঠেছে। গাড়ীট থামলেই বাব খোজ মি ও । বে, কেঁদন ভাই, এত দু’মিনিটের মামলা, এখুনি গাড়ী থামূলেই খবর পালে। কোলের ছেলেটার দিকে ততক্ষণ একটু তাকা ও ” ( २ ) চটেমোড় বিছানার উপর উপুড় হ’য়ে খুকী ঘুমিয়ে -পড়েছিল। গাড়ী আসার গোলমালে তার ভারপ্রাপ্ত যুবক নব তার কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। বিছানাটাও তুলার কথা কারুর মনে আসেনি। স্বতরাং খুকীর গভীর নিদ্রায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটিয়েই যাত্রীরা গাড়ীতে উঠে পড়েছিল । সারা বিকেলটা গরুর গাড়ীর ভিতর বাক্স, বিছানা ও মানুষের ঠাসাঠাসির গরমে তার বড় অসোয়াস্তির মধ্যে কেটেছিল । তাই খোলাআকাশের তলায় রাত্রের ঠাণ্ডা হাওয়ায় তার শিশু-সুলভ গাঢ় নিদ্রাটি স্বথস্বপ্নে মধুর হয়ে তাকে একেবারে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল । অনেক রাত্রে বটগাছের মাথায় দোলা দিয়ে, খেজুর প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ঝোপের মধ্যে শুকনো পাতার কর্কশ ক্ৰন্দন তুলে’, পথের রাঙা কাকরের ছররা ছুটিয়ে কালবৈশাখীর ঝড় নেমে এল। ষ্টেশনের আশে-পাশে যে দুটে-চারটে কুলিমজুর পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিল সকলেই ঝড়ের রুদ্র মূৰ্ত্তি দেখে টিনের চালার তলায় আশ্রয়ের সন্ধানে দৌড় দিলে । খুকী ঘুমের ঘোরে দু-চারবার উস্থুস করে বিছানাটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। ঝড়ের সহচরী বৃষ্টি যখন মাটির বুকে নেমে এসেছে, তখন সেই অতবড় খোলা চাতালটার মধ্যে ছোট্ট খুকীটি ছাড়া আর দ্বিতীয় মাস্থ্য নেই। খুকীর হাসিমাথা ঘুমন্ত মুখের উপর বৃষ্টির তীক্ষ ঝাপট এসে পড়তেই সে চমকে উঠে বসল। তারার আলো নেই ; ধন মেঘের ঘটায় আকাশের গায়ের স্বচ্ছতার আলো-টুকুও ঢাকা পড়ে' গেছে ; বৃষ্টির জলে ভাল করে’ চোথ চাওয়া যায় না । পুকীর বুক ভয়ে জুলে’ উঠুল ; "ম, মা” বলে ডেকে সে দুইহাতে শূন্যতাকে জড়িয়ে ধরতে গেল । ছোট হাত দুখানি কঠিন মাটির গায়ে এসে ঠেকূল, মায়ের কোমল উষ্ণ বাহুর বন্ধন তাকে জড়িয়ে তুলে নিলে না। মনে হ’ল কালে। আকাশের বুক চিরে সংস্ৰ কালনাগিনী নেমে আসছে তাব দিকে, তাদের তুষারুশীতল দেহেব নিবিড় আবৰ্ত্তনে তার কোমল দেহটুকু পিষে ফেলতে , সমস্ত শরীরের রক্ত যেন তাক কে হিম করে তুলছিল। পায়ের তলায় বৃষ্টির জল ঝড়ের দাপটে সরে’ সরে’ দুলে’ জুলে’ উঠ ছিল, সৰ্ব্বাঙ্গে বাতাসের দাপাদপি পা-দুখান এক জায়গায় স্থির করেও রাখতে দিচ্ছিল না। মনে হ’ল, পায়ের তলায় কঠিন পুথিবীও বুঝি এই সরে’ যায় । অতলস্পর্শ হিম-সমুদ্রের অনন্ত কালিমায় এখনি সে ডুবে মিশিয়ে যাবে। কালো, কালো, কালো ; উপর নীচ চারিধার একি বিষম কালে, কি ভীষণ নিবিড় নিষ্ঠুর শূন্যতা ! কোথাও এতটুকু ফাক নেই। তার ভয়-কাতর বুকে কান্নাও থমকে থেমে গিয়েছিল, একি অন্ধ-তমসার তীরে স্বষ্টি হতে সমূলে উপড়ে এনে তার নিষ্ঠুর মা তাকে ফেলে গিয়েছে ? মা নেই, কাকে সে ডাকবে ? হষ্টির শেষ আলোকণাটুকুও মুছে নিয়ে শূন্য অন্ধকারের গহবরে