পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪ৰ্থ সংখ্যা ] মাতৃহারা তাকে কণ্ঠরোধ করে কে কেন রেখে গেল, বিমূঢ় ভয়ক্লিষ্ট শিশু ভেবে পেলে না। মাথার উপর হঠাৎ সমস্ত আকাশখানাকে দুই টুকরো করে বিদ্যুতের আলো ঝলকে উঠল ; খুকীর মুদিতপ্রায় চোখে আলোর চমক্‌ এসে লাগল। সে ভয়ে মূৰ্ছা গেল ন। তার বুকের, স্পন্দন যেন ফিরে এল। এই যে আলো, এই যে স্বষ্টি ! ওই যে বটগাছের ঝুরি, ইষ্টিশনের থাম, টিনের চালা, সিগনালের লম্বা হাত দুটো । স্বষ্টি তবে ধ্বংস হয়ে যায়নি। খুকীর গলার স্বর কেঁপে উঠল, কিন্তু তবু কথা ফুট ল । "মা, মাগে, আবার আলো দিয়েছ ! ভাইয়াকে রেখে আমায় কোলে নিয়ে যাও মা, বড় ভয় কবৃছে।” কিন্তু আলো আবার নিবে গেল । সঙ্গে সঙ্গে ক্রুদ্ধ দানবের হুঙ্কারের মত বাজ গর্জন করে’ উঠল। মাটিও যেন গৰ্জনের তাড়সে কেঁপে কেঁপে खेळेल । يجب সত্যি সত্যিই মাটি কাপ ছিল । গুম্‌ গুম্‌ গুম্‌ করে’ কি-একটা শব্দ ক্রমেই এগিয়ে আসছিল । একি আকাশের দানবটা আলো জেলে পৃথিবীট। একবার দেখে’ নিয়ে ভারী পায়ের শব্দে মাঠ কঁাপিয়ে এই দিকে এগিয়ে আসছে ! খুকীর বুকে হঠাৎ সেন কিসের সাহস জেগে উঠল। দেখে নেবে সে ওই দুষ্ট, রাক্ষসটাকে, কি করতে পারে সে তার ? সে জোর করে’ চোখ মেলে’ তাকালে । ঐ যে দূরে তিনটে আগুনের ভাটার মত চোখ জলজল করছে। ঐ যে আসছে দৈত্যটা এই দিকেই। খুকী উঠে দাড়াল। এবার তার পা টলে গেল না । মাঠ পায় হ’য়ে রক্তচক্ষু দৈত্যটা এগিয়ে আসছিল। খুকী ছুটে সেই দিকে গেল। ওমা! তার পিছনে যে সারি সারি আলো ! এক নিমিযে খুকীর সামনে সব আলোগুলো লম্বা একছড় হীরার মালার মত এসে পড়ল। আনন্দে খুকীর প্রাণ নেচে উঠল। এ ত রাক্ষস নয়, এ যে রেলের গাড়ী । এই রেলের গাড়ী চড়বে বলেই ত মা তাকে আজ ডুরে শাড়ী পরিয়ে সঙ্গে করে গরুর গাড়ী চড়েছিল। মা কি দুষ্ট ! গাড়ী করে’ কোথায় বেড়িয়ে এল, তাকে এই বিত্র গলাচাপ অন্ধকারে ফেলে রেখে দিয়ে। এতক্ষণে বুঝি মার মনে পড়ল খুকুর స్రీ = R হারানিধি Qミ> কথা। ভাইয়াই তার সব হয়েছে ! অভিমানে ঠোট ফুলে উঠল । কাদা-জলে ডুরে শাড়ীর আঁচল লুটিয়ে খুকী যখন ট্রেনের দিকে দৌড়চ্ছিল, তখন ষ্টেশনে আবার একটু মানুষের কোলাহল স্বরু হয়েছিল। সেদিকে কিন্তু তার কোনোই নজর ছিল না। সে দু-হাতে ট্রেনের দিড়ি আঁকড়ে কোনপ্রকারে একটা গাড়ীতে উঠে পড়ল। মাকে গিয়ে গ্রেপ্তার করতেই হবে । ভিতরে অনেকগুলি মাছৰ খুমচ্ছিল। তাদের সে দেখলে না। শাল মুড়ি দিয়ে একটি মেয়ে কোলের কাছে একটি ছোট ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল । এই নিশ্চয় তার মা । খুকী তার পায়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে হুম্ড়ি থেয়ে পড়ল । তার পর পায়ের উপর দুইহাতে ছোট ছোট কিল দিয়ে সে বললে, “ম দুষ্ট, মা দুষ্ট, মা দুষ্ট ।” বেশীক্ষণ আর তার রাগ দুঃখকে জয় করে রাখতে পারলে না তাই চোখের জলে ফেটে সে সেইখানে লুটিয়ে পড়ল। নিদ্রিত মেয়েটির পা চোখের জলে ভিজে উঠতেই "ওম কে রে কার বাছ তুই ?” বলে বিস্মিত তরুণী উঠে খুকীকে তুলে ধরলে। কাদায়ফেলা শুকনে মলিন গোলাপ ফুলের মত সিক্ত কেশে-বাসে ঘেরা কচি এতটুকু মেয়েটি ঝড়ের বুক থেকে ছিটকে তার পায়ে কেমন করে এসে পড়ল ? ট্রেন তখন ছেড়ে দিয়েছে। দুরে শোনা যাচ্ছিল ব্যাকুলকণ্ঠে কারা যেন ডাকাডাকি কবৃছে, “খুকী রে খুকী !” খকীর কানে সে ডাক গেল না ; সে তখন তার অপরিচিত। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফপিয়ে ফ পিয়ে কাদছিল । খুকীর পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে ব্যথিত বিস্মিত তরুণী অন্ধকারে জানালার বাইরে মুখ বাড়িয়ে ষ্টেশনের নাম দেখ বার চেষ্টা কবুলে । কিন্তু এই দুয্যোগে মিটমিটে ঝাপস। আলোগুলোও চোখে পড়ে না, কিছুই বোঝা গেল না । মেয়েটি পাশের বেঞ্চির মহিলাকে ডেকে বললে, “হ্যাগ দিদি, এটা কি ইষ্টিশান গ| ? কার কচি মেয়েটা জলে ভিজে এ-গাড়িতে এসে উঠল। ম-মাগীর হস্ নেই, কোথায় উঠল, কোথায় নামবে কে জানে ? দুধের ছেলে কেমন ছেড়ে দিয়েছে ! আমি একি গেরোয় পড়লাম দেখ ত। একে নিয়ে এখন কি করব ?”