পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S* আমাদের দেশে অতি প্রাচীন কাল হঠতে ঐতি হাসিক নাটক স্বাদৃত হইয়া আসিতেছে। বিশাখদত্তের “মুদ্রারাক্ষস” এবং কালিদাসের "মালবিকাগ্নিমিত্র” অতি উচ্চ অঙ্গের ঐতিহাসিক নাটক। কালিদাস ও বিশাখদত্ত কোন সময়ের লোক তাহ! এখনও স্থির হয় নাই বটে কিন্তু তাহাদের এই দুইখানি ঐতিহাসিক নাটকের মূল উপাখ্যান পণ্ডিতের সত্য বলিয়া মানিয়া লইয়াছেন । ঐতিহাসিক এফ ডবলিউ টমাস বলেন-- "অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে রচিত হইলেও বিশাখদত্তের প্রকুষ্টলিপিকৌশলপূর্ণ রাজনৈতিক নাটক মুদ্রীরাঙ্গলে ঐ রাজবংশের উৎপত্তিকালের ঘটনার কতকগুলি মোটামুটি আভাস আছে "...কেজি হিষ্টি অভ ইণ্ডিয়, ভলুম ১, পৃষ্ঠা ৪৬৭ । মালবিকাগ্নি সম্বন্ধে অধ্যাপক ই জে র্যাপসন বলেন— “কালিদাসের সর্বপ্রথম নাটক মালবিকাগ্নিমিত্রে পুধ্যমিত্রের রাজত্বকালের কতকগুলি ঘটনার প্রতিচ্ছবি দেখিতে পাওয়া যায় । বিদৰ্ভ দেশের ( বেরার) রাজকন্ত। মালবিকা ছদ্মবেশে বিদিশার রাঙ্গণ ও পুষ্যমিত্রের রাজপ্রতিনিধি অগ্নিমিত্রের সভায় বাস করিতেছিলেন : উtহারই সহিত অগ্নিমিত্রের প্রেমের কাহিনী নাটকটির আখ্যানবস্তু । ৪•• খুষ্টাব্দের কাছাকাছি কোনো সময়ে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে এক বসন্ত-উৎসব উপলক্ষ্যে এই নাটকটি উজ্জয়িনীতে অপর এক রাজপ্রতিনিধির সভায় অভিনীত হয়। প্রায় সমস্ত সংস্কৃত নাটকের মত মালবিকাগ্নিমিত্র ষড়যন্ত্রের কাহিনী ভিন্ন অধিক কিছু নহে । নাটকটির মূল উদ্দেশ্ব ঐতিহাসিক নয় ; কিন্তু ইহার কতগুলি চরিত্র একেবারে বাস্তব বলিয়া মনে হয় ; এবং শেল অঙ্কে বিদিশ৷ রাজ্যের নিকটবর্তী রাজ্যের ইতিহাসের কথা লেশ সঙ্গতভাবে যোজন করা হইয়াছে। এগুলি যে বাস্তবতীয় প্রতিষ্ঠিত নয় তাহ মনে করা যুক্তিযুক্ত হইবে না "-কেজি হিষ্টি অভ ইণ্ডিয়, ভলুমে ১, পৃষ্ঠা ৫১৯। মধ্যযুগের রঙ্গমঞ্চের কথা আমরা কিছুই জানি না, তবে এই পৰ্য্যন্ত বলিতে পারা যায় যে ভারতবর্ষ যতদিন স্বাধীন ছিল ততদিন এদেশে নাটকের অাদর ছিল । রাঙ্গালাদেশের মুসলমানের অধিকার লোপ পাইলে আবার মূতন করিয়া নাটকের স্বষ্টি হইয়াছিল। এই নূতন •ধরণের নাটক পাশ্চাত্যের আদর্শে গঠিত। প্রথমে আমাদের দেশে পৌরাণিক আখ্যায়িকা লইয়। নাটক রচিত হইত। পরে ঐতিহাসিক নাটক রচনা আরম্ভ হইয়াছিল। আচাৰ্য্য : বঙ্কিমচন্দ্রের সমস্ত ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলি নাটকাকারে পরিবর্তিত হইয় অভিনীত হইবার পরে নূতন ঐতিহ৷:ং, নাটক রচনা আরন্ধ হইয়াছিল। যেসকল গ্রন্থকার ঐতিহাসিক নাটক রচনায় চত্বক্ষেপ করিয়াছিলেন র্তাহাদিগের মধ্যে ৬গিরিশচন্দ্র প্রবাসী—বৈশাখ, ১২৩ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড । ঘোষ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ৪ খ্ৰীযুত ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যা বিনোদ শীর্ষস্থানীয়। গিরিশচন্দ্র ঘোষের ঐতিহাসিক নাটকগুলি বহুদিন পূৰ্ব্বে রচিত হইয়াছিল এবং শুনিতে পাওয়া যায় যে, তাহাদের অনেকগুলি অভিনয়কালে তাদৃশ সমাদর লাভ করে নাই। আধুনিক নাটককারদিগের মধ্যে দ্বিজেন্দ্রলাল সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক মুখ্যাতি অর্জন করিয়াছেন। র্তাহার চন্দ্রগুপ্ত, প্রতাপসিংহ, সাজাহান ও দুর্গাদাস ভারতবর্ষের সর্বত্র বাঙ্গালীর সমাজে অভিনীত ও আদৃত হইয়াছে। কিন্তু ঐতিহাসিকের নিকট । তাঙ্গর নাটকগুলি ভ্ৰম-পরিপূর্ণ। - দ্বিজেন্দ্রলালের নাটক হয়ত নাটক-হিসাবে অত্যন্ত উৎকৃষ্ট, কিন্তু একটি দোষের জন্য তাহ। কখনও বাঙ্গলা ইতিহাস-সাহিত্যে সমাদর লাভ করিবে না। ঐতিহাসিক নাটকের পক্ষে এই দোষটি মহাদোষ এবং এই দোষের জন্ত vদ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সমস্ত ঐতিহাসিক নাটক ঐতিহাসিক আখ্যা লাভ করিবার যোগ্য নহে। দ্বিজেন্দ্রলাল অনেক সময়ে জানিয়! শুনিয়া ও র্তাহার নাটকে এই দোষটি পরিত্যাগ করিতেন না । তিনি নাটকে বীর-রস এবং উত্তেজনার আমদানী করিবার জন্য অনৈতিহাসিক ঘটনার অবতারণা করিতে কুষ্ঠিত হইতেন না। তাহার “প্রতাপসিংহ” নামক নাটকে তিনি ক্ষুদ্র-বৃহৎ অনেক অনৈতিহাসিক ঘটনার অবতারণা করিয়াছেন, একটু ভাবিয়া চিন্তিয় দেখিলে বাঙ্গালী মাত্রেই সেগুলিকে তথ্য বলিয়া ধরিতে পরিবেন । প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে সেগুলি সমস্ত উল্লেখ করিতে পারিলাম না, কেবল উদাহরণস্বরূপ দুইটি ঘটনার উল্লেখ করিলাম। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বিরচিত “প্রতাপসিংহ” নামক নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে সেলিমের সহিত বাক্যালাপ করিয়াই আকৃবরের কন্য। মেহেরউন্নিসা চতুর্থ দৃশ্বে অবগুণ্ঠন পরিত্যাগ করিয়৷ একেবারে একাকিনী শক্তসিংহের শিবিরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। শুধু তাহাই মহে, তৃতীয় অঙ্কের সপ্তম দৃশ্বে মেহেরউন্নিসা একেবারে প্রতাপসিংহের শিবিরে গিয়৷ উপস্থিত হইয়াছেন । রঙ্গমঞ্চের সাময়িক উত্তেজন আনিয় উপস্থিত করিবার জন্য এত বড় ইতিহাস-বিরুদ্ধ কথা আর কোনও দেশের, আর কোনও ভাষার নাটকে স্থান পাইয়াছে