পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৩২ তেম্নি সন্ধ্যার নিঃশব্দ তিমির-সঞ্চারের মধ্যে চিন্ত৷ করিতে করিতে সমস্ত দিনের ভোগ করা স্বখ এবং দুঃখ স্বমিত্রার নিকট বস্তুহীন মায়ার মত ঠেকিল। মনে হইল স্বদেশ এবং বিদেশের বিচার একেবারে অর্থহীন, দেশী খদ্দর এবং বিলাতী বস্ত্ৰ সৰ্ব্বতোভাবে প্রভেদরহিত । এমন কি বিমানবিহারীর ডেপুটিত্ব এবং স্বরেশ্বরের স্বদেশপ্রেম একই মাত্রায় অবাস্তব ! অনবচ্ছিন্ন মহাকালের গর্তে ক্ষণস্থায়ী মানবজীবন অস্তিত্ববিহীন বলিয়া মনে হইল, এবং তদন্তর্গত স্নখ-দুঃখ, হৰ্ষ-বেদন, আশানৈরাশ্বের কোনও স্বাতন্ত্র্য অথবা মূল্য আছে বলিয়া একবারও তাহার মনে হইল না । এইরূপে বৈরাগ্যের মহাশূন্যতার মধ্যে বিচরণ করিতে করিতে স্বমিত্রার নিকট জীবনটা বস্তুহীন বুদ্ধদের মত হইয়া উঠিয়াছে এমন সময়ে কক্ষে বিমলা প্রবেশ করিয়া বলিল, “মেজদি, তোমাকে মা বৈঠকখানায় ডাকৃছেন।” তাহার পর স্বইচ টিপিয়া আলো জালিয়া দিয়া বলিল, “অন্ধকারে শুয়ে রয়েছ যে, মেজদি ? মাথা ধরেনি ত - সে-কথার কোনও উত্তর না দিয়া সুমিত্ৰা জিজ্ঞাসা করিল, “বৈঠকখানায় কে কে আছেন, বিমলা ?” “বাবা, মা আর বিমান-দাদা।” বলিয়া বিমল প্রস্থান করিল। দুশোদ্য বৈরাগ্যজাল এক মুহূৰ্বেই ছিন্ন হইয়া ঔদাস্যশিথিল মন সাধারণ জীবনের আসক্তি-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে প্রবলভাবে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিল। একটা তীব্র আঘাতে আহত হইয়া সুমিত্রা ক্ষণকাল নিঃশবে পড়িয়া রহিল। উপযুপিরি কয়েকদিন ন-আসার পর যে-দিন মরেশ্বরের কারাদণ্ডের সংবাদ প্রকাশিত হইল, সে-দিন বিমানবিহারীর আসা, এবং তৎপরে পূর্বের মত ড্রয়িংরুমে তাহাকে জয়ন্তীর আহবান, পরস্পর-সম্পকিত ব্যাপার মনে করিয়া অপরিমেয় ঘৃণায় ও বিরক্তিতে স্বমিত্রার মন কণ্টকিত হইয়া উঠিল । মনে হইল, স্বরেশ্বরের কারাবাসের স্বযোগ পাইয়া স্বার্থোদ্ধারের জন্য এই দুইজনের লোভাতুরতা একদিনও অপেক্ষা করিতে পারিতেছে না। সবিদ্বেষ অবজ্ঞার সহিত বিমানবিহারীর কথা স্বমিত্রা মন হইতে বাহির করিয়া দিল, কিন্তু জয়ন্তীর প্রতি একটা প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড দুর্শিবার ও দুর্জয় অভিমান জাগ্রত হইয়া তাহার नमख* মনটা ভরিয়া রহিল ! 呼 সকালে জয়ন্তী যে-সকল কথা বলিয়াছিলেন, তাহ স্বমিত্রার একে একে মনে পড়িতে লাগিল । তিনি বলিয়াছিলেন, “আমার এত সাধের সংসারে আগুন ধরিয়ে দিসনে! আমি তোর হাতে ধরছি, আমার কথা রাখ! : আমিও তোর মা !” দুঃখে স্বমিত্রার চক্ষে জল ভরিয়া আসিল । সে মনে-মনে বলিতে লাগিল, ‘সংসারটা কি শুধু তোমার একলারই, মা ? আর কারো নয় ? তোমার ইচ্ছাতেই আর-সকলের ইচ্ছা বিসর্জন দিতে হবে ? তুমি আমার মা তা জানি ; কিন্তু তাই বলেই কি আমার উপর তোমার জুলুমের সীমা থাকৃতে নেই ?” নির্দোষ খন্দরের সজ্জা জয়ন্তীর পক্ষে সাজা হইল, অথচ অস্পৃষ্ঠ বিলাতী বস্ত্র সুমিত্রার পক্ষে শাস্তি হইতে পারিল না। আত্মপ্রতিষ্ঠার চেষ্টায় সমগ্ৰ দেহ যখন জীবন পণ করিয়াছে, তখন প্রমদাচরণের সহিত স্বদেশ-চর্চা হইল, প্রমদাচরণকে জয়ন্তীব হস্ত হইতে বাহির করিয়া লওয়া ! মাতৃত্বের উৎপীড়নে সুমিত্রার শ্বাস রুদ্ধ হইয়া আসিল । জননী এবং জন্মভূমি উভয়েই গরীয়সী ; কিন্তু স্বমিত্রার দুর্ভাগ্যবশতঃ জন্মভূমির সহিত জননীর বিরোধ বাধিস্থাছে । এই কঠিন অবস্থাসঙ্কটে কৰ্ত্তব্য-নিরূপণ করিতে স্বমিত্রা ক্ষণকালের জন্য বুদ্ধিভ্রষ্ট হইল। একবার চর্কার প্রতি সাগ্রহ দৃষ্টিপাত করিল, একবার স্বরেশ্বরের মূৰ্ত্তি স্মরণ করিল, তৎপরে জননীর ব্যাকুল আবেদনের কথা মনে পড়িল । তখন সুমিত্রা একাগ্রচিত্তে চিন্তা করিতে লাগিল । আত্মহত্যা করিবার কল্পনায় মামুষে যেমন করিয়া চিন্তা করে, ঠিক সেইরূপ উদ্ভান্ত নিবিড় চিন্তা ! আত্মবিনাশের উৎকট উন্মাদনা তাহার আকৃতিতে প্রকট হইয়া উঠিল। যে-ঘরে তাহার পূর্বের বস্ত্রাদি ছিল, তথায় উপস্থিত হইয়া স্থমিত্রা এক মুহূৰ্ত্ত চিন্তা করিল, তৎপরে একটা ওয়ার্ড রোব খুলিয়া নটনের বাড়ীর মভ ক্রেপের স্বটটা বাহির করিয়া পরিল । একদিন এই সজ্জাটি পরিধান করিবার জন্ত জয়ন্তী তাহাকে অনুরোধ করিয়াছিলেন । সেদিন স্থমিত্র জয়ন্তীর অনুরোধ রক্ষা করে নাই ; সেই