পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা | রাজপথ (రిరి কথা স্মরণ করিয়াই আজ সেইহা পরিধান করিয়া ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হইল। প্রবল অভিমানের বশবৰ্ত্তী হইয়া কুমিত্রা এত বড় আত্ম-নিপীড়ন করিয়া বসিল! ক্রুদ্ধা সপিণী কখন কখন যেমন আপনার দেহে আপনি দংশন করে, ঠিক সেইরূপ সে নিজকে নিজে দংশন করিল। মনস্তত্ত্বের হিসাবে ইহা পুরাদস্তুর আত্মহত্য, শুধু দেহের পরিবর্তে মনের ! সে যখন দেশী বস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া বিলাতী বস্ত্র পরিধান করিতেছিল তখন অভিমানের উন্মাদনায় তাহার বুদ্ধিবিবেচনা ভালমন্দর বিচার-শক্তি সমস্তই ঠিক সেইরূপে অপহৃত হইয়াছিল আত্মহত্যার পূৰ্ব্বে যেরূপে হয়। তাই যখন মুখে গভীর দুঃখের ছাপ লইয়। সুমিত্রা ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করিল, তখন তাহাকে নবসজ্জায় সজ্জিত দেখিয়াও জয়ন্তী হৃষ্ট হওয়ার পবিবর্তে সন্ত্রস্ত হইয়! উঠিলেন । পুষ্প-চন্দনে ভূষিত হইয়া মৃতব্যক্তির মুখের নিম্প্রভতা যেরূপ অধিকতর পরিস্ফুট হইয়া উঠে, মৃদৃশ্য বিলাতী বস্ত্রে সজ্জিত হইয়া সুমিত্রার আকৃতির অবস্থাও তদ্রপ হইয়াছিল । খন্দরের সজ্জা পরিত্যাগ করিয়া সহসা সুমিত্রার বিলাতী বস্ত্র পরিধান করার মূলে একটা বিশেষ কোনও গোলযোগ অাছে অনুমান করিয়া প্রমদাচরণ শঙ্কিত হইয়া উঠিলেন । ভয়াৰ্ত্ত-কণ্ঠে তিনি বলিলেন, “এ বেশ কেন, মা সুমিত্রা ?” সুমিত্রা কম্পিত-কণ্ঠে বলিল, “কেন বাবা, এ’ত বেশ ভালই !" - প্রমদাচরণ স্তব্ধ হইয়৷ ক্ষণকাল স্বমিত্রার মুখের দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিয়া উঠিলেন, “ন, না সুমিত্রা, আমার কাছে কোন কথা লুকিয়ে না ! একাজ তুমি যে সহজে করনি তা আমি বুঝতে পারছি। আমাকে বল, কি হয়েছে ?” সহসা কি বলিবে বিশেষত: একজন বাহিরের লোক বিমানবিহারীর সমক্ষে, তাহ স্থির করিতে না পারিয়া স্বমিত্র ইতস্ততঃ করিতে লাগিল । জয়ন্তী উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিলেন। প্রমদাচরণের প্রশ্নের উত্তরে স্বমিত্র। কি বলিতে কি বলিয়। ফেলিবে, এই AAAAAA AAAAS AAAAA SAAAAA ASA AAAA AAA S AAA S AAAAA SAAAAA S আশঙ্কায় তিনি মৃদু হাস্তের সহিত বলিলেন, “হবে কি ? কিছু দিন একটা সখের মত যে কাজ করলে তাই নিয়েই কি চিরকাল থাকবে ? মাঝে মাঝে সাধ করে খদ্দর পরতে ত মান নেই ; কিন্তু তাই বলে’ এসব কাপড় ত্যাগ করবে কেন ?” স্বমিত্র এ-কথার কোনও মৌখিক প্রতিবাদ না করিয়া যেমন দাড়াইয়া ছিল তেমনি নীরবে দাড়াইয়া রহিল। জয়ন্তীর প্রতি কোনওপ্রকার মনোযোগ না দিয়া স্বমিত্রার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া প্রমদাচরণ বলিলেন, “এ যদি তুমি সম্পূর্ণ নিজের বিবেচনায় করে থাক ম; তা’ হ’লে আমার বলবার কিছুই নেই ; কিন্তু আমার ভয় ইচ্ছে যে, এ তা নয়, এর মধ্যে কোন দিক্‌ থেকে জুলুম-জবরদস্তি নিশ্চয়ই আছে।” - এবারও স্থমিত্রা কোনও কথা কহিবার পূৰ্ব্বে জয়ন্তীই কথা কহিলেন । তিনি আশা করিয়াছিলেন, যে, তাহার নিকট হইতে উত্তর পাইবার পর প্রমদাচরণ এপ্রসঙ্গ । পরিত্যাগ করিবেন । তাহ না করিয়া কথাটাকে এরূপ মন্তব্যের দ্বারা গুরুতর অবস্থায় লইয়া যাওয়ায় জয়ন্তী মনে মনে ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। কিন্তু বিমানবিহারীর : সম্মুখে কথাটা লইয়া বেশী বাড়াবাড়ি করা অনুচিত হইবে তজ্জন্য, এবং স্থমিত্রার পরিবর্তনের তরুণ অবস্থায় কথাটা লইয়া অনর্থক আলোচনা করিলে আসল বিষয়ে ক্ষতি হইতে পারে, এই আশঙ্কায়, তিনি তাহার মানসিক অবস্থা কিছুমাত্র জানিতে না দিয়া স্বাভাবিক কণ্ঠে কহিলেন, “জুলুম-জবরদস্তি কোন দিক থেকেই নেই, যদি কিছু থাকে তা তার বিপরীতেই আছে।" . এবার প্রমদাচরণ প্রত্যক্ষভাবে জয়ন্তীর কথার উত্তর দিলেন, বলিলেন, “জুলুম-জবরদস্তির বিপরীতটা আবার সময়ে সময়ে জুলুম-জবরদস্তিকেও ছাড়িয়ে যায়। এমন অনেক ব্যাপার আছে, যা জোর করে” করান যায় না, কিন্তু অন্তরকম করে” করান যায়।” ... : ক্ৰোধে জয়ন্তীর চক্ষু জলিয়া উঠিল ; এবার আর নিজেকে সংযত রাখিতে না পারিয়া বলিলেন, “কিরকম করে" করা যায় বলই না ? হাতে পায়ে ধরে’ ?