পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Us (IV) সৰ্ব্বস্বাস্ত হয়, এই সখের সেরূপ কোন অনিষ্টকারিত নাই । অথচ ইহাতে পৌরুষ-বৃদ্ধির খুবই সম্ভাবনা আছে। বহুসংখ্যক ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া, আস্তাবল,সইস, সওয়ার রাখিবার খরচ অপেক্ষ ইহার খরচ বেশী হইবে না। দুঃখের বিষয় ভারতীয় ধনীদের সখ অনেক সময়ে এপ্রকারের যে লেহাতে দৈহিক, মানসিক ও নৈতিক অবনতিই হয়। ভারতীয় যুবকেরা যে একাজে অসমর্থ, তাহা নহে। ব্যারিষ্টার মি: প্যারীলাল রায়ের পুত্ৰ ক্রমান ইন্দ্রলাল রায় গত মহাযুদ্ধে আকাশযোদ্ধদলে ছিলেন, এবং অনেক জামান আকাশযানকে তিনি ভূপাতিত করেন । যুদ্ধে তাহার প্রাণ যায়। গৌরীশঙ্কর জয়ের চেষ্টা হিমালয়ের সৰ্ব্বোচ্চ চুড়া গৌরীশঙ্করকে ইংরেজরা এভারেই নাম দিয়াছেন। উহা সমুদ্র-পৃষ্ঠ হইতে ২৯০০ • ফুটেরও অধিক উচ্চ। পৃথিবীর মধ্যেও ইহা অপেক্ষা উচ্চ পৰ্ব্বতশিখর নাই। ইহা আরোহণ করিবার চেষ্টা বর্তমান বৎসরেও হইয়াছিল। কিন্তু এবারেও মানুষের পরাজয় ও গৌরীশঙ্করের জয় হইয়াছে। এবার ম্যালোরী এবং আর্তিন-নামক দুইজন ইংরেজ ২৮০০০ ফুট উঠিয়াছিলেন, তাহার পর আর র্তাহাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায় নাই। র্তাহাদের একজন সঙ্গী কিছু নীচে থাকিয়৷ যন্ত্রের সাহাযে:তাহাদের গতিবিধি লক্ষ্য করিতেছিলেন। তাহার মত এই যে, তাহারা সৰ্ব্বোচ্চ স্থানে উঠিয়াছিলেন, কিন্তু তাহার পর আর দিনের আলো না-থাকায়, নামিতে পারেন নাই। তখন হয় তাহারা ঝড়ে কোথাও পড়িয়া যান এবং তুষার-চাপা পড়িয়া প্রাণ হারান, কিংবা মানসিক ও শারীরিক অবসাদে এবং প্রচণ্ড শীতজনিত আড়ষ্টতা ও জড়তার আবেশে নিদ্রিত হইয়া পড়েন, ও সেই অবস্থাতেই তাহাদের মৃত্যু হয়। - এই দুইজন বীর ইংরেজের মধ্যে আর্তিনের বয়স মোটে ২১ বৎসর ছিল। সহজেই মনে হইতে পারে, এরূপ করিয়া প্রাণ দিয়া লাভ কি ? কিন্তু মানুষের মধ্যে একটা প্রবৃত্তি, একটা এবালা-গ্রাবণ, ১৩৩১ L ૨૪- ૭ાગ, ૧૫ ૧૭ প্রেরণা আছে, যাহা তাহাকে সৰ্ব্বপ্রকার বাধা-বিয়ের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত করে । যাহ কেহ এখনও জানিতে পারে নাই তাহা জানিব, যে-দেশ এখনও অজ্ঞাত তাহা আবিষ্কার করিব, যে তথ্য ও নিয়ম এখনও অজ্ঞাত তাহ আবিষ্কার করিব, এপর্য্যস্ত दाश অসাধ্য বা দুঃসাধ্য বিবেচিত হইয়া আসিতেছে, তাহা সাধন করিব,—মানুষের পৌরুষ তাহাকে এই প্রবৃত্তি দিতে থাকে। ইহার প্রভাবে লাভালাভের কথা তাহার মনে থাকে না । অসাধ্যসাধন বা দুঃসাধ্যসাধন হইয়া গেলে, ভবিষ্যতে হয়ত তাহা হইতে মাহুষের লাভ হয়, কিন্তু যাহারা প্রথমে রুতিত্ব প্রদর্শন করে, তাহারা লাভের আশায় করে না । এখন আমরা শুনিতেছি বটে, যে, উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে ভূগর্ভে অনেক মূল্যবান খনিজ আছে, এবং ভবিষ্যতে হয়ত ঐসকল ভূখণ্ডে মানুষ বাস করিবে। কিন্তু যাহারা স্বমেরু ও কুমেরুতে পৌছিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, এবং শেষে যাহাদের চেষ্টা সফল হইয়াছিল, র্তাঙ্গরা ধনরত্বের লোভে তথায় যান নাই। তাহারা অজ্ঞাতের মুখোস খুলিবার দুৰ্দ্দমনীয় কৌতুহল নিবৃত্ত করিবার জন্য, জ্ঞান-পিপাসা মিটাইবার জন্য গিয়াছিলেন । পৌরুষের তাড়নায় তাহারা অজেয়কে, দুর্জয়কে জয় করিতে বাহির হইয়াছিলেন । আকাশে উড়িবার চেষ্টাও এইপ্রকারে আরব্ধ হয় । কিন্তু সেইসকল চেষ্টা এখন কাজে লাগিতেছে । অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কারে এই জাতীয় সাহস ও পৌরুষের প্রয়োজন হয় না ; কিন্তু ক্ষতিলাভের গণনা না করিয়া অজ্ঞাতকে জানিবার, অন্ধকারের রাজ্যে আলোকের পতাকা গাড়িবার, সত্যের সন্ধানে প্রাণপণ করিবার প্রবৃত্তি এরূপ কার্য্যের মূলে বিদ্যমান থাকে। লাভালাভের কথা না ভাবিয়া শুধু সাহসের জন্যই সাহসের, পৌরুষের জন্যই পৌরুষের কাজ করা যৌবনের ধৰ্ম্ম । ব্যক্তির পক্ষে যাহা সত্য, জাতির পক্ষেও তাহা সত্য । বাৰ্দ্ধক্যগ্রস্ত জাতি সাহসের কাজ করে না ; যৌবনধৰ্ম্মী জাতি তাহা করে । পাশ্চাত্য জাতিসকলের প্রবৃত্তি ও তাহদের সভ্যতার প্রকৃতি তাহাদিগকে