পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©Ꮼ8 প্রতি অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের ভাব আসিতে পারে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ লোক দরিদ্র ; স্ত্রীলোকের অধিকাংশ “অশিক্ষিত” । দেশের লজ্জারক্ষার এই উপায়টির প্রতি তাহাদের অবজ্ঞা না হইতে পারে। সত্য বটে, হাতে সুতা কাটিলে প্রভূত পরিশ্রমে. রোজগার অল্পই হয়। কিন্তু অধিকতর লাভজনক কাজ হইতে দেশের অধিকাংশ লোককে টানিয়া আনিয়া এই কাজে লাগান হইতেছে না। বৎসরের অনেক সময় দেশের অধিকাংশ পুরুষ ও নারীর কোন রোজগারের উপায় থাকে না। তখন সামান্য রোজগারও যাহা হয়, তাহাই লাভ। নিজের গ্রামে নিজের বাড়ীতে থাকিয়া সামান্য মূলধন খাটাইয়া রোজগার কিসে হয়, তাহার উপায় আমাদিগকে খুজিতে হইবে। আমরা ত চরকায় স্থত কাটা অপেক্ষ সহজে অবলম্বনীয় এরূপ কোন কাজের বিষয় অবগত নহি । হাতে স্থত কাটা ও হাতের র্তাতে কাপড় বোনার আর-একটি সুবিধা এই, যে, খাদ্যের পরেই মানুষের বস্ত্রের প্রয়োজন বেশী ; সুতরাং কাপড়ের কাটতি বেশী। এরূপ কাপড় মিলের কাপড়ের সঙ্গে দামে টক্কর দিতে পারে না, জানি। কিন্তু যাহারা নিজে স্থত কাটিয়া কাপড় বুনিবে বা বুনাইবে, তাহাদের নগদ খরচ মিলের কাপড়ের দাম অপেক্ষাও কম পড়িবে—বিশেষতঃ যাহারা নিজের বাড়ীতে উৎপন্ন কাপাস হইতে স্থত কাটিবে। সেইজন্য ঘরে ঘরে কাপাসের চাষের বিস্তারও খুব দরকার। যাহাদিগকে কাপড় কিনিয়া পরিতে হয়, তাহাদের মধ্যে ধনী ও সচ্ছল অবস্থার লোকদের খদ্দর ক্রয় ও পরিধান অবশ্যকৰ্ত্তব্য । ইহার দ্বারা গ্রামবাসী ও দরিদ্র লোকদের সহিত সহানুভূতির বন্ধন দৃঢ় হয়। খদ্ধর মাত্রেই মোট ও ভারী নয়। মিহি অথচ খাটি খন্দরও দেখিয়াছি । আমরা এরূপ বলিতেছি না, যে, চরকায় স্থত কাটা - ভিন্ন জাতীয় ঐক্য-বিধানের অন্য উপায় নাই, বা র্যাহার স্থত কাটেন না, তাহাদের স্বজাতিপ্রেম নাই ; আমরা সহজসাধ্য একটি উপায়ের কথাই বলিতেছি। আমরা নিজে স্থত কাটিতে পারি না ; আমাদের কংগ্রেসের সভ্য না হইবার এবং সভ্যরূপে অপরকে সূতা কাটিবার উপদেশ না দিবার ইহা একটি কারণ। তথাপি, এবিষয়ের প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড আলোচনা এইজন্ত করিতেছি, যে, আরও বিস্তর এমন অনেক ভাল কাজের আলোচনা করি, যাহা আমরা নিজে করি না, করিবার সাধ্য, সুযোগ ও অবসর নাই। অবসর সময়ে চরকা চালানর আর-একটি গুণ এই, যে, ইহার দ্বারা মানুষ নিয়মিত শ্রমে অভ্যস্ত হয় এবং আলস্য ও তাহার নানা কুফল নিবারিত হয় । ইহা পরম লাভ । অলস জাতির দ্বারা স্বরাজ লাভ ও রক্ষণ হইতে পারে না। সমুদয় জাতিকে শ্রমশীল করিবার ইহা অপেক্ষ সোজা উপায় যদি কেহ জানেন, ত তাহ নিশ্চয়ই বিবেচ্য। স্বরাজট কেবল রাজনৈতিক ব্যাপার নহে। নিজেদের সর্ববিধ প্রয়োজন নিজেদের চেষ্টায় সিদ্ধ করিবার ক্ষমতার নাম স্বরাজ । কাপাসের জন্ম ভারতে । অথচ ভারতীয়েরা লজ্জা রক্ষার জন্য অপরের উপর নির্ভর করিবে, ইহা স্বরাজ নহে। ভারত নিজের সস্তানদের খাদ্য নিজে উৎপাদন করেন। বস্ত্রও এখানে উৎপন্ন করা চাই। চর্কা ও হাতের তাত দ্বারা এই উদ্দেশ্য যত অল্প টাকায় ও বিদেশীর বিন সাহায্যে সিদ্ধ হইতে পারে, অন্য কোন উপায়ে তাহা হইবে না। মিল স্থাপনের ব্যয় অধিক, তাহাতে বিস্তর মজুর ও মজুরানীকে গ্রাম ছাড়িয়া নৈতিক ও দৈহিক অস্বস্থতাজনক অবস্থায় থাকিতে হয়, এবং তাহারা কাৰ্য্যতঃ অনেকটা মূলধনীদের দাস হইয় পড়ে। পারিবারিক জীবনের ও গ্রাম্য জীবনের গুণ ও সুবিধা এবং শ্রমসম্বন্ধীয় স্বাধীনতা রক্ষা করিয়া বস্ত্রসমস্তার সমাধান একমাত্র চরকা ও হাতের তাতের দ্বারা হইতে পারে। রোমান ক্যাথলিক পাস্ত্রীরা তাহাদের অনেক গ্রাম্য ও অন্ত বিদ্যালয়ে চরকা ও তাত প্রবর্তন করিয়! স্বফল পাইয়াছেন । মানুষ একদিকে স্বাবলম্বী এবং নিজের অভাব নিজেই মোচনে ও নিজের কাজ নিজেই সম্পাদনে সমর্থ হইলে, অন্য দিকেও তাহ! সহজে হইতে পারিবে । - এবম্বিধ নানা কারণে চরকার সমর্থন করিতেছি । কিন্তু সকল দিক্ বিবেচনা করিয়া ইহা অপেক্ষা প্রকৃষ্টতর কোন উপায় নির্দেশিত হইলে চবৃক আকৃড়াইয়া থাকা কুসংস্কার ও গোড়ামি হইবে।