পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6:boo ভয় ও ভৈরব কি তাহ অনুভব করিতে পারিব । এইরূপ চিন্তা করিয়া আমি এইরূপ স্থানে গমন করিতাম। যদি মৃগ বিচরণ করিত, পক্ষী যদি বৃক্ষশাখায় উপবেশন করিত এবং তজ্জন্য বৃক্ষ হইতে কাষ্ঠ নিপতিত হইত, কিংব। যদি বায়ুপ্রবাহে শুষ্কপত্র সঞ্চালিত হইত,—এইসমুদায় শব্দ শ্রবণ করিয়া আমার মনে হইত, এই ভয়ভৈরব আসিতেছে । তখন মনে করিতাম—আমি কেন ভয়ের আক্রমণ প্রতীক্ষা করিয়া থাকিব ? যে-ভাবে ইহা আগমন করিবে, আমি সেইভাবেই ইহাকে পরাভব করিব ; আমার যে-অবস্থাতে এই ভয়-ভৈরব উপস্থিত হইবে, আমি সেই অবস্থাতে থাকিয়াই ইহাকে জয় করিব। যখন বিচরণ করিতাম, সেই সময়ে যদি ভয়ভৈরব আগমন করিত, তখন আমি দণ্ডায়মান হইতাম না, বা উপবেশন করিতাম না, বা শয়ন করিতাম না, বিচরণ করিতে করিতেই সেই ভয়-ভৈরবকে পরাভূত -করিতাম । যখন দণ্ডায়মান থাকিতাম, তখন যদি ভয়ভৈরব আসিয়া উপস্থিত হইত, তখন সেই অবস্থাতেই থাকিতাম, বিচরণ উপবেশন বা শয়ন করিতাম না ; বিচরণ করিতে করিতেই ভয়-ভৈরবকে পরাভূত করিতাম । এইরূপ যখন উপবিষ্ট থাকিতাম বা শয়ন করিয়া থাকিতাম, তখন যদি ভয়-ভৈরব উপস্থিত হইত, আমি সেই-সেই অবস্থাতে থাকিয়াই ভয়-ভৈরবকে পরাভূত করিতাম” ( মজঝিমনিকায়, ভয়-ভেরব স্বত্ত ) ৷ ভয়কে অতিক্রম করিবার জন্য অল্পলোকই সাধনা করিয়া থাকেন। ইহা যে আবশ্যক, ইহার যে উপকারিতা আছে, এপ্রকার চিস্তা অল্পলোকের প্রাণেই উদিত হয়। এমন অনেক লোক আছেন, যাহারা স্বভাবতঃই সাহসী । কিন্তু ইহারাও সম্পূর্ণরূপে ভয়কে অতিক্রম করিতে পারেন না। মনে কর, একজন সাহসী ব্যক্তি বনভূমিতে রাত্রিকালে অন্ধকারে অবস্থিতি করিতেছেন। হঠাৎ এক বিকট ভীষণ, অশ্রুতপূৰ্ব্ব ও অস্বাভাবিক শব্দ শ্রবণ করিলেন। তখন কি তাহার দেহমন আচঞ্চল ও নিৰ্ব্বিকার থাকিবে ? মনস্তত্ববিৎ ও প্রাণতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ বলেন, পূৰ্ব্বোক্ত ঘটনাতে সেই সাহসী ব্যক্তির প্রাণও প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩১ Y. [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড همتجعییم. অজ্ঞাতসারে ভয়াওঁ হইবে, তাহার দেহমন কম্পিত ও রোমাঞ্চিত হইবে। ইহাই সাধারণ নিয়ম। এপ্রকার হয় কেন ? ইহার কারণ এই যে, মানব কেবল মানব নহে, মানব একাধারে পশু ও মানব। . পশু চায় আত্মরক্ষা করিতে, ভয় সেই আত্মরক্ষার এক প্রধান উপায় । ভয় না থাকিলে পশুগণ জীবনরক্ষার জন্য সংগ্রামও করিত না কিংবা পলায়নও করিত না । মানুষ যে অনেক সময়ে রোমাঞ্চিত ও কম্পিত হয়— তাহার মূলে প্ৰাণ-ভয় । ভয় একটি পশিব সংস্কার ; চিন্তা আসিবার পূৰ্ব্বেই মানুষ এই সংস্কার-দ্বারা চালিত হইয়া প্রাণ-রক্ষার জন্য ব্যস্ত হয় । মানুষ এস্থলে পশু, সংস্কারের অধীন । এই মানুষের স্বাধীনতা কোথায়, কোঁথায় তাহার স্বতন্ত্রতা ? মহাত্মা গোতম এই পশু-প্রকৃতিকে অতিক্রম করিবার জন্য সাধন করিয়াছিলেন এবং সেই সাধনায় সিদ্ধও হইয়াছিলেন। তিনি ভয়-ভৈরবকে পরাজয় করিয়াছিলেন এবং দেহ-মনকে সম্পূর্ণরূপে আত্মবশে রাখিয়াছিলেন। এ-বিষয়ে তাহার উক্তি এই –“আমি আরব্ধবীৰ্য্য ছিলাম ; আমি কখন ভয়ে ভীত হইতাম না ; আমার স্মৃতি সৰ্ব্বদা স্থপ্রতিষ্ঠিত থাকিত ; কখনও অপ্রতিষ্ঠ হইত না। দেহ প্রস্তব্ধ থাকিত, কখনও চঞ্চল হইত না । চিত্ত সমাহিত ও একাগ্ৰ থাকিত । ( মজঝিম, ভয়-ভেরব স্বত্ত ) ৷ দ্বেধা-বিতর্ক বুদ্ধত্ব লাভ করিবার পূর্বে গোতম পাপ তাপ দুর করিবার জন্য কি কি উপায় অবলম্বন করিয়াছিলেন, তাহা তিনি নিজেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বর্ণনা করিয়াছেন । কাম, ব্যাপাদ, হিংসা দ্বেধা-বিতৰ্ক-স্বত্তে লিখিত আছে, যে, গোতম এক সময়ে ভিক্ষুগণকে সম্বোধন করিয়া এই-প্রকার বলিয়াছিলেন :– "হে ভিক্ষুগণ! যখন আমি বুদ্ধত্ব লাভ করি নাই, যখন আমি কেবল বোধিসত্ত্ব ছিলাম, তখন আমার মনে এই-প্রকার ভাব হইয়াছিল—যখন আমার প্রাণে নানা