পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] গোতমের সাধনা ও সিদ্ধি ৫৮৫

(গ) চিত্ত-বিষয়ক সমুদায় অবস্থা—যেমন রাগ, দ্বেষ, মোহ । (ঘ) (১) পঞ্চ নীবরণ (কাম, ব্যাপাদস্ত্যানমিদ্ধ অর্থাৎ দেহমনের জাড্যদোষ, ঔদ্ধতা-কৌকৃত্য অর্থাৎ উদ্ধতভাব ও কুকৰ্ম্ম-পরায়ণতা, এবং বিচিকিৎসা ) ; (২) রূপ, বেদন, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান এই পঞ্চ স্কন্ধ ; (৩) চক্ষু, শ্রোত্র, ভ্রাণ, জিহবা, কায় ও মন এই ছয়টি আয়তন ; (৪) স্মৃতি, ধৰ্ম্মামুসন্ধান, বীৰ্য্য, গীতি, প্রশান্তভাব, সমাধি, উপেক্ষা এই সপ্ত বোধ্যঙ্গ এবং (৫) দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখের নিরোধ এবং দুঃখ-নিরোধের উপায়। এইসমুদায় বিষয়ে সৰ্ব্বদা স্মৃতিমান থাকাই সম্যক স্মৃতি । ৮ । সম্যকৃ সমাধি চারিটি ধ্যানকে সম্যক সমাধি বলা হইয়াছে। গোতম যে-ভাবে ধানে মগ্ন হইতেন তাহা তিনি নিজেই ব্যক্ত করিয়াছেন । ক । প্রথম ধ্যান গোতম বলিয়াছেন--- আমি কাম-ত্যাগ করিয়া অকুশল-ধৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়া বিতর্কপূর্ণ, বিচারপূর্ণ, বিবেকজ (-নির্জনতা-মূলক ; অসঙ্গ-জনিত) এবং প্রতিস্থখপূর্ণ প্রথম ধ্যানে নিমগ্ন হইতাম । খ। দ্বিতীয় ধ্যান & তাহার পরে বিতর্ক ও বিচার অতিক্রম করিয়া, অধ্যাত্ম সম্প্রসাদ লাভ করিয়া, চিত্তের একাগ্রতা সংসাধন করিয়া, বিতর্কবিহীন, বিচারবিহীন সমাধিজ, প্রতিস্থপূর্ণ দ্বিতীয় ধ্যানে বিহার করিতাম । গ। তৃতীয় ধ্যান তাহার পরে প্রীতির অতীত হইয়া, উপেক্ষা-ভাৰ লাভ করিয়া স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞ হইয়া তৃতীয় ধ্যানে বিহার করিতাম। আর্য্যগণ এই অবস্থার বিষয়ে বলিয়া থাকেন—“যাহারা স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞ—র্তাহারা সুখ-বিহারী ।” ঘ। চতুর্থ ধ্যান ইতার পরে মুখের অতীত হইয়া দুঃখের অতীত হইয়া ( সৌমনস্ত ও দৌমনস্ত ) অতিক্রম করিয়া, দুঃখরহিত, স্বখরহিত, এবং উপেক্ষা ও স্থতিদ্বারা পরিশুদ্ধ চতুর্থ ধানে বিহার করিতাম।” (মজঝিম ভয় ভেরবস্তুত্ত, দ্বেধা-বিতৰ্কস্বত্ত অঙ্গুত্তরনিকায়, মহাবগগ, ৩।৬৩।৫ ইত্যাদি ) এই চারিটি ধ্যানের নাম সম্যকৃ সমাধি । অনুকূল উপায় সমাধি অষ্টাঙ্গিক মার্গের শেষ সোপান । এই সোপানে অধিরোহণ করিতে হইলে, প্রথম সাতটি সোপান অতিক্রম করিতে হয়। এই সাতটি উপায় সমাধির সহায় ; অর্থ বুঝাইবার জন্য এসমুদায়কে সপ্ত-সমাধি-পরিকৃখার’ (সপ্ত-সমাধি-পরিষ্কার ) বলা হইয়াছে (দীঘ, ১৮|১২৭ ; মজ ঝিম, ১১৭ )। বহুস্থলে বলা হইয়াছে, যে, ধ্যানে মগ্ন হইতে হইলে ‘পঞ্চনীবরণ বিদূরিত করিতে হয় । দীঘ, ২৭৪, ২৫।১৭ ; মজ ঝিম ৫১, ৬০, ৭৬ ইত্যাদি ) । পঞ্চনীবরণাদি ক্ষীণ না হইলে ধ্যান সম্ভব হয় না ; আবার ধ্যান সাধন না করিলেও এসমুদায় নিৰ্ম্মল হয় না। প্রথমে হিংসা বিদ্বেষাদি ক্ষীণ করিয়া ধ্যানে প্রবৃত্ত হইতে হয়, তাহার পরে ধ্যান-সাধনের সঙ্গে সঙ্গে এসমুদায় ক্ষীণতর হইবে এবং সৰ্ব্বশেষে সমুলে বিনাশপ্রাপ্ত হইবে । পথ ও লক্ষ্য কেহ-কেহ মনে করেন ধ্যানই যেন উদ্দেশ্য ; কিন্তু তাহা নহে, ধ্যান লক্ষ্য নহে ; ধ্যান একটি পথ । ইহার লক্ষ্য “একান্ত নিৰ্ব্বেদ, বৈরাগ্য, নিরোধ, শাস্তি, অভিজ্ঞ, সম্বোধ, এবং নিৰ্ব্বাণ” ( দীঘ, ২৯২৪ ) । এইসমুদায় লাভই ধ্যানের উদ্দেশ্য । ধ্যান ও উদ্যমশীলতা অনেকে মনে করেন ধ্যানের সময়ে অস্তরে কোনপ্রকার উদ্যম থাকে না। কিন্তু এ-বিশ্বাস ভ্রমপূর্ণ। বুদ্ধ স্বয়ং বলিয়াছেন, যে, চতুর্থ ধ্যানে চিত্ত সমাহিত হয়, পরিশুদ্ধ ও স্বচ্ছ হয়, নির্দোষ ও নিষ্পাপ হয়, মৃদুতা ( অর্থাৎ কোমলতা ) প্রাপ্ত হয়, কৰ্ম্মণ্য (কন্মনীয় ) হয়,