পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] হোক আমি সেদিন তাই একটা দুঃসাহসিকের কাজ ক’রে ফেললুম, মুকুলিকা দেবীকে একখানি চিঠি লিখে ডাকে ফেলে দিলুম। ছোট্ট একটু চিঠি । চিঠিখানিতে বিশেষ কিছু ছিল না। শুধু ছিল এই যে, মুকুলিকা দেবীর কবিতা আমার বড় ভাল লাগে, এমন ভাল লাগে যে আমি এই কবিতাগুলির লেখিকার সাক্ষাৎ-পরিচয়ে আমার অন্তরের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবার জন্যে উৎম্বক, এবং আশা করি, আমার এ বেয়াদবি মার্জমা লাভ করবে। তিন দিনের দিন আমার চিঠির উত্তর পেলুম। ছোট্ট একটু চিঠি, কিন্তু তার ওজন আমার কাছে মনে হ’ল মহাকাব্যের চাইতেও বেশী । চিঠিখানি এই— “অশ্রীনিবাস’ বেলতলা রোড, ভবানীপুর। সবিনয় নিবেদন— আপনার ক্ষুদ্র চিঠিখানি পেয়ে যে কতদূর আনন্দিত হয়েছি তা বলতে পারিনে। আপনার লেখা আমি সাগ্রহে পড়ে থাকি । আপনার লেখার মধ্যে এমন একটা মিষ্ট ও সরস ভঙ্গী আছে যে, একবার পড়লে তা ভোলা যায় না + আপনার সাক্ষাৎ-পরিচয় লাভের জন্যে আমিও উংস্থক । আগামী শনিবার বিকেল পাচটা ও ছয়টার মধ্যে যদি আপনার দর্শন পাই, তবে কৃতার্থ হ’ব । ইতি শ্ৰী মুকুলিকা দেবী। চিঠি পেয়ে আমার অন্তর এতখানি হৃষ্ট হ’য়ে উঠল যে, বুঝলুম যে আমার লেখা চিঠির উত্তর পাবার আশার চাইতে না-পাবার আশঙ্কাই আমার মনে বেশী ছিল। @ 豪 豪 毒 覺 রসা রোডের ট্রাম্ থেকে যখন নামূলুম তখন পাচটা বেজে তের মিনিট । বেলতলা রোডে “অশ্র-নিবাস” খুজে বের করতে আমার বিশেষ বেগ পেতে হ’ল না। একখানি মাঝার্টি-রকমের একতলা লাল রঙের বাড়ী গজ দূরে দাড়িয়ে। রাস্তার উপরেই ফটক। ফটক খুলে ভিতরে ঢুকে দেখি, একটি পরিপ:ট ফুলের বাগান। সেই বাগানের মাঝ দিয়ে রোমান্স ৬e৫

একটা সরু লাল কাকর-বিছান রাস্তা সোজা দালান পর্য্যন্ত গিয়েছে। রাস্তার দু-কিনারে চন্দ্রমল্লিকার ঝাড়, তাতে পাতা নেই বলেই হঠাৎ অনুমান হয় এমুনি তাতে ফুল ফুটেছে। দালানের সামনের দিকে একটি বারান্দা। আমি সব রাস্তাটি বেয়ে সরাসর বারান্দায় গিয়ে উঠলুম। সেখানে গিয়ে দেখি একটি গোল টেবিলের উপর একটি টিয়ে-পার্থী আর সেই টেবিলের পাশে দাড়িয়ে একটি মহিলা টিয়েপাখীটাকে এক-একটি করে’ বাদাম তুলে দিচ্ছেন আর পার্থীটি মহা আনন্দে তাই গলাধঃকরণ করছে। আমি কোনরূপ ভনিত টনিতা না করে’ই একেবারেই জিজ্ঞাসা কবুলুম—“মুকুলিকা দেবী এখানে থাকেন ?” মহিলাটি উত্তর করলেন—“আমারই নাম মুকুলিকা দেবী ।” এই উত্তরের সঙ্গে-সঙ্গে আমার মনে হ’ল যেন হঠাৎ কোন অদৃশ্ব শক্তি আমাকে উদ্ভিদে পরিণত করে ফেললে, আর এক নিমেষে আমার দু’পা থেকে সহস্র শিকড় গজিষ্ট্রে সিমেন্ট. ভেদ করে তাই পৃথিবীর বুকে চালিয়ে দিয়ে আমাকে সেখানে বজমুষ্টিতে ধরে রাখলে। দেখলুম আমার সামনে মুকুলিকা দেবী। যেমন লম্বা তেমুনি মোট । গায়ের রং আবলুস কাঠের মতে, নাসারন্ধের নীচ দিয়ে একটি স্বক্ষ গোফের রেখা, বয়েস চল্লিশও হ’তে পারে পঞ্চাশও হ’তে পারে । প্রায় আধ মিনিটের মধ্যে আমার উদ্ভিদ অবস্থা কেটে গেল। সেই সঙ্গে আমার শিরায় শোণিতপ্রবাহ আবার গতিশীল হ’য়ে উঠল আর তারই সাথে সাথে আমার সর্বা বেয়ে সহস্র ধারা হয়ে ঘাম ঝরতে লাগল। এম্নি একট অসোয়াস্তিতে আমার সারা অন্তর ভরে উঠল যে তা তুলনা মেলে না। মুকুলিকা দেবীর সঙ্গে কথোপকথনে একটা ধারা কল্পনায় হাজার বার গড়ে তুলেছি ভার খেই যে কোথায় হারিয়ে গেল, কেবল তাই নয়, সে-সমঃ আমার চোখ দুটির দৃষ্টি যে কোথায় স্থাপন করব, শু তাই একটা বিষম সমস্ত হ’য়ে উঠল । মনে হ’ল । মুকুলিক দেবীর দিকে তাকিয়ে দেখাই তার প্রতি এক বিশ্বাসঘাতকতা করা । সেখানে আর এক-মুহূৰ্ত্ত থা