পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] কাশিতে খানিকট রক্ত মুখ দিয়া উঠিল, কিছুক্ষণ বসিয়া মৃদ্ধ আৰ্ত্তনাদ করিয়া প্রান্ত হইয়া চোখ বুজিয়া শুইয়া পড়িল । তাহার হাতে-বোনা রেশমের মোজা-পর থোকার কচি পা-দুটি মুদিত নয়নের অন্ধকার-পটে বারবার ভাসিয়া উঠিতে লাগিল। সেই জুতোমোজা পরিয়া খোকা যেন দস্ত্যিপনা করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, তাহার দুরন্ত পায়ের শব্দের মত সাগরের তরঙ্গধ্বনি তাহার কাণে আসিয়া বাজিতে লাগিল । WO গভীর রাতে স্থধা ঘুমাইয় পড়িয়াছে ভাবিয়া দাদা মশাই নিঃশব চরণে তাহার ঘরে ঢুকিয় তাহার শয্যার, পাশে বসিলেন । স্বধা কিন্তু জাগিয়াছিল, সে ধীরে বলিয়া উঠিল কে, দাদামশাই ? তোমায় আজ সারাদিন দেখিনি কেন ? দাদামশাই শিহরিয়া উঠিলেন, তাহার চোখ দিয়া যে টস্টস করিয়া জল পড়িতেছে তাহা স্বধা অন্ধকারে বুঝিতে পারিল না। আচ্ছা, দাজু কাল ত সকালে ওরা আসবে, দেখ, আমি ভোরে প্রায়ই ঘুমিয়ে পড়ি, আমায় কিন্তু কাল ভোরে জাগিয়ে দিও, ভোরবেলাইত ট্রেন আসে– দাদামশাই গভীর নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন—ম গো ! তাহার স্বামী ও পুত্র কাল সকালে আসিবে এই স্বপ্নমাধুরীতে স্বধা নিমগ্ন ছিল, স্নেহত্ত্বধায় তাহার হৃদয় কানায়-কানায় ভরা। ধীরে সে বলিল—আচ্ছা, আজ কোন চিঠি আসেনি ? চিঠি সত্যই সেদিন একখানা আসিয়াছিল। সেট। মুধার স্বামী লেখে নাই, তাহার দেবর দাদামশাইকে লিখিয়াছে। সে লিখিয়াছে, থোকার কয়েকদিন হইতে খুব জম, বৌদির জন্ত ভয়ঙ্কর কাদে । দাদা খোকার কান্নার জন্য বিরক্ত হইয়া আর রাতে বাড়ীই আসেন না, তিনি আগে মাঝ রাষ্ট্ৰত বাড়ী ফিরিতেন, এখন সমস্ত রাতই বাহিরে থাকেন। বৌদিকে দেখিবার জন্ত তাহার ভয়ঙ্কর ইচ্ছা করে, কিন্তু তাহার মা শাসাইয়াছেন, যে, সে যদি দেখতে আসে তবে তাহাকে আর বাড়ী ঢুকিতে দিবেন না। এদিকে খোকার চিকিৎসার কিছুই হই কাকি W2XS) তেছে না, সে যে কি করিবে কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছে না। বৌদি কেমন আছেন তা যেন তাহাকে নিশ্চয় জানানো হয়। তরুণমনের অনেক ব্যথার কথাই সে লিথিয়াছে। তাহার চিঠিখানি পাইয়া দাদামশাই আজ দিশাহারা হইয়া গিয়াছেন । মৃধা বলিল, মোজাটা কিন্তু একটু বোন বাকী আছে, তা তার জন্তে থোকা রাগ করবে না, কালই আমি শেষ করে দেবেী—কিন্তু তুমি এলে, আর মনটা কেমন হু হু করছে—এতক্ষণ আমি আকাশের দিকে চেয়ে যেন থোকার মুখ দেখছিলুম—তারাগুলো যেন তার স্বন্দর চাউনি—না, আমার কেমন ভাল লাগছে না-মনে হচ্ছে, থোকার যেন ভয়ঙ্কর অস্বথ করেছে, সে মা, মা, বলে কাদছে— অন্ধকাবে হাৎড়ে বেড়াচ্ছে, আমাকে খুঁজে পাচ্ছে না— দাদামশাই ! - দাদামশাই আর আপনাকে দমন করিয়া রাখিতে ; পারিলেন না, এ মিথ্যার মায়া-জালে ভারাক্রান্ত হইয়া ছট্‌ফট্‌ করার চেয়ে সত্যে মুক্তি ভাল,—সে মুক্তি যতই নিৰ্ম্মম ক্রর বেদনাময় হোক! তিনি ভাঙা-গলায় বলিয়া উঠিলেন—ওরে সব ফাকি, তোকে সব মিথ্যা— সহসা তিনি থামিয়া গেলেন। স্বধার কাশির বেগ আসিয়াছে । কাশিতে কাশিতে সে উঠিয়া বসিল, ঝড়ে, দোল লতার মত কঁাপিতে লাগিল, বিছানা রক্তে ভাসিয়া গেল । কাশি থামিয়া গেলে, স্বধ। যখন একটু শাস্ত হইল, দাদামশাই আর তাহাকে কিছু বলিতে পারিলেন না । অশ্রুসিক্তকণ্ঠে ডাকিলেন, মা ! না, দাদু, কষ্ট না, কিছু কষ্ট না, আমি এখন একটু ঘুমোতে চেষ্টা করি, আমায় কিন্তু ভোরে জাগিয়ে দিও। 8 পরদিন বিকেল-বেলায় সমুদ্রতীরের সম্মুখে বারান্দায় বসিয়া স্বধা তাহার খোকার ফোটোটি দেখিতেছিল। এফোটোটি তাহার দেবরের এক বন্ধু তুলিয়া দিয়াছিল। খুব ভালো ওঠে নাই, তবু এই অস্পষ্ট ছবিখানি সে খোকার রূপমাধুরী দিয়া ভরিয়া দুই চোখ দিয়া পান করিতেছিল।