পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WX8 প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩১ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ঘরের ভিতর দাদামশাইয়ের পায়ের শব্দ শুনিয়া সে ধীরে ভাকিল—দাদামশাই । অপরাধীর মত "দাদামশাই তাহার পাশে আসিয়া দাড়াইলেন । তোমায় এমুনি ডাক্লুম দাদামশাই, বোসো না চেয়াখটায়। দাদামশাই, তোমার পাকাচুলগুলো তুলি এস ত— ওরে আমার সব চুলই যে পাকা । দেখ ত কানে কি ময়লা—বলিয়া স্বধা আঁচল দিয়া কান পরিষ্কার করিয়া দিতে আরম্ভ করিল। কিন্তু একটা কান পরিষ্কার করিয়াই পরিষ্কার করিবার উৎসাহ চলিয়া । গেল। দাদামশাই তাহার মাথায় ধীরে হাত বুলাইয়া বলিলেন—কেমন আছিস, স্বধা ? মন্দ কি, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কি জান, আমি যেন নেই, আমি থাকা না-থাকার বাইরে গেছি—তুমি আমন করে’ চেও না—ই, আমার এখন কিরকম মনে হচ্ছে 'জান ?—আমরা সব ছায়, সব ফাকি, বাস্তব কিছু নেই— এই সাম্নে বালির পাড়, ওই যে সমুদুর ঠিক যেন ছবির মত আমার চোখে লাগছে, এই যে তুমি বসে আছ, ওই . যে লোকজন চলেছে, সব যেন ছবির মত ভেসে চলেছে— ওই ধে খোকার ফোটোটা আর এই যে বাইরের ঘর-বাড়ী , জিনিষ পত্তর লোকজন আমি কোন তফাৎ বুঝতে পারিনে—সব ছায়াবাজার মত মনে হয়—মাঝে মাঝে আমি নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখি সত্যি আমি আছি কি না—ফাকা সব ফাক, এই ঘর, এই মন, এই আকাশ, সব ফাক, তার মধ্যে সবাই ছায়ার মত ঘুরছি—তোমার কি এরকম মনে হয়— সত্যিইরে ফাকি সব ফাকি, আমি মিথ্যা দিয়ে একটু মুখস্বৰ্গ তোর জন্যে রচনা করছিলুম–কিন্তু ফাকি দিয়ে—ওরে— তুমি কেঁদোনা দাদামশাই, আমি জানি, আমি ঠাকুরপোর চিঠি পড়েছি! দাদামশাইয়ের সমস্ত দেহ রিমঝিম করিয়া উঠিল, তিনি চারিদিকে অন্ধকার দেখিলেন। দুই চোখ দিয়া টস্টস করিয়া জল পড়িতে লাগিল । তুমি কাছে, কিন্তু আমার চোখে ত জল আসে না দাদামশাই, আমার কাছে সব মায়া, মিথ্যা মনে হচ্ছে, কে এল কে না এল, কাকে দেখলুম, কাকে দেখলুম না, সব মিথ্য—এ-হাসি মিথ্যা, এ-কান্না মিথ্যা, ; এ-সুখ মিথ্যা, এ-বেদন মিথ্যা, সমস্ত সংসার যে ফাকি—তুমি কেঁদো না দাদু-ও !—উঃ — f স্বধার চোখে অশ্র উৎসারিত হইয়া উঠিল না বটে, কিন্তু কাশির বেগ আসিল এবং বুক হইতে চাপ-চাপ রক্ত উঠিতে লাগিল । সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনাইয়া আসিয়াছে, আকাশে কয়েকটি তারা ফুটিয়া উঠিয়াছে। স্বধা বারান্দা হইতে উঠিয়া ঘরে চুপ করিয়া বিছানায় শুইয়াছিল। সহসা সে বলিয়া উঠিল, দাদামশাই, তুমি ভেবে না, তারা আসবে, থোকার আসার সময় কাছে আসছে আমি বুঝতে পারছি, আসছে তারH– দাদামশাই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া চুপ করিয়া রছিলেন। আচ্ছ, সবই যদি মিথ্যা হয় ত ঠাকুরপোর ও-চিঠিও ত মিথ্যা, তবে খোকা আসবে না কেন ? মাঝে-মাঝে অন্ধকার দেওয়ালের গায়ে আমি কি দেখতে পাই জান ?—থোকার কাপড়, জামা, খেলনা, বাসন—তার ইঞ্জিন-গাড়ীটা একনিমিষের জন্য দেওয়ালের গা দিয়ে চলে কোথায় অন্ধকারে পাড়ি দিলে—ওই তার পদ্মকাটা রেকাৰখান, দেওয়াল দিয়ে গড়িয়ে পড়ল—তার দুধের বাটি তার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে—ওরে বাছা— স্বধী, চুপ কর । চুপ করব কি, আমি যে শুনতে পাচ্ছি, সে আসছে— উনিও আসছেন—আসবেন তিনি—তখন হয়ত আমার জ্ঞান থাকবে না, তখন হয়ত আমি তাকে চিনতে পারব না, কিন্তু তার পায়ের ধূলো একটু আমার মাথায় দিও। রাত্রি আরও গভীর হইয়াছে, আকাশ তারায়-তারায় ভরিয়া গিয়াছে ; মৃদ্ধ চাপা আৰ্ত্তনাদের মত সমুদ্রের ডাক বাতাসে ভাসিয়া আসিতেছে। না দাদামশাই, আমার কোন দুঃখ নেই, কারুর