পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\\3o প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩১ [.২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড তারাস্কন্দরী বলিলেন, “সকাল-বেলার কাজ কৰ্ম্ম মানে ত’ তিনটি প্রাণীর আহারের ব্যবস্থা ? তাতে কতই বা সময় লাগে, আর দুই-এক ঘণ্টা দেরী হ’লেই স্বা কি আসে যায় ? তোমারই বরং কাছারীর কাজের ক্ষতি হচ্ছে।” তারাস্বন্দরীর কথা শুনিয়া আরক্তমুখে বিমানবিহারী বলিল, “একদিকে ক্ষতি-স্বীকার না করলে অন্যদিকে লাভ করা যায় না ।” মাধবী হাসিতে-হাসিতে বলিল, “কিন্তু বেশী ক্ষতি করে অল্প লাভ করা আবার ভাল নয়।” “লাভ-লোকৃসানের হিসাব স্কুলে যে-রকম করেছিলাম, জীবনে যদি সে-রকম করতাম তা’ হ’লে জীবনটা এ-রকম বে-হিসেবী হ’ত না।” বলিয়া বিমানবিহারী হাসিতে লাগিল । তারাস্কনার সহাস্যমুখে বলিলেন, “হিসেবটা জমাখরচের খাতাতেই ভাল, জীবনে বেশীরকম হিসেবী হ’লে জীবনের পথে এগোনোই যায় না ; পদে-পদে দ্বাড়িয়ে পড়তে হয়। তাই বলে যেন মনে কোরো না СК, གྷིifi་ তোমাদের বিবেচনাহীন হয়ে চলতে বলছি!” ৰলিয়া হাসিয়া উঠিলেন। বিমানবিহারীও হাসিতে হাসিতে উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল, “তা হ’লে মা, বিবেচনাহীন হয়ে আর আপনাদের সময় নষ্ট কবৃব:না ; এখন আমি চললাম। আমি আজ আপনাকে বলতে এসেছিলাম যে, স্বরেশ্বর যত দিন না ফিরে আসছে, ততদিন তার কৰ্ত্তব্যের কতকটা অংশ আমাকে বহন করতে দেবেন। মাঝে-মাঝে আমি এসে খবর নিয়ে ত যাবই ; কা ছাড়া যখন দরকার হবে, দিনে হোক, রাতেই হোক, সকালে হোক, সদ্ধা হোক, জামাকে খবর দিলেই আমি এসে হাজির । ङ्द '" বিমানবি কথা শুনিয়া তারাস্বন্দরীর চক্ষে অঞ্জ ভরিয়া জালিল। তিনি বলিলেন, “তুমি যে আমাদের পর নও তা বুঝতে পেরেছি। দরকার হ'লে কোনো কথাই তোমাকে বলতে আমি দ্বিধা করব না। যখনই তোমার সময় আর স্ববিধা হবে আমাদের খবর নিয়ে যেয়ো ।” তাহার পর মাধবীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, “মাধবী, কানাইকে দিয়ে বিমানের জন্তে কিছু মিষ্টি আনাও।” । বিমানবিহারী কিন্তু কিছুতেই তাহা করিতে দিল না ; বলিল, “মা আর ছেলের মধ্যে আমি কোনোরকম সামাজিকতার স্থান রাখতে দেবে না। যেদিন ক্ষিদে পাবে, নিজে চেয়ে খেয়ে যাব।” মাধবী তারাসুন্দরীর দিকে চাহিয়া মৃদুস্বরে কহিল, “ম, দাদা জেলে কি খাচ্ছেন, বিমান-বাবু বোধ হয় সে-খবর আনিয়ে দিতে পারেন।” তারাসুন্দরীর আমুরোধের জন্য অপেক্ষা না করিয়া বিমান কহিল, “আমি নিশ্চয়ই সে খবর আনিয়ে দেবো ; আর খুব সম্ভবতঃ তার খাওয়ার বিষয়ে একটু স্বব্যবস্থাও করিয়ে দিতে পারব।” তারাসুন্দরী কহিলেন, “আমি জানি তা তুমি পারবে, কিন্তু তার দরকার নেই বাবা । এ-রকম আব্দার-অনুরোধ করলে নিজেকে একটু খাট করতেই হয়। তা’ ছাড়া ব্যবস্থা করেই বা তুমি কি করবে ? আমি ত’ স্বরেশকে জানি, জেলের যা মামুলী বরাদ তার বেশী একটি কণাও সে স্পর্শ করবে না। স্পর্শ করা উচিতও নয়। নিজের অবস্থার অতিরিক্ত ব্যবস্থায় কখনই কারো মঙ্গল হয় না।” এরূপ স্বাধীন ও সবল যুক্তির দ্বার স্বীয় প্রস্তাব খণ্ডিত হওয়ায় মনে-মনে অপ্রতিভ হইয়া বিমানবিহারী বলিল, “তবে সুরেশ্বর জেলে কি খাচ্ছে জেনে কি হবে মা ?” মাধবীর দিকে একবার চকিত দৃষ্টিপাত করিয়া তারামুন্দরী স্মিতমুখে কহিলেন, “মাধবীর মতলব, যেরকম খাওয়া সুরেশ জেলে থাচ্ছে, যতটা সম্ভব সেইবুকম খাওয়া আমাদের বাড়ীতেও জারি করে । দেশের আর ঘরের স্ব-সস্তান যে খাওয়া খেয়ে জীবন ধারণ করছে, বাড়ীর অন্য লোকের তার চেয়ে ভাল খাওয়া উচিত নয় এই তার কল্পনা " জাহার পর হাসিতে হাসিতে বলিলেন, "তাই কি সে অপেক্ষা করে আছে ? আন্দাজি যতটা পারে এরি মধ্যে জেলের খাওয়া জারি করে দিয়েছে!” বলিয়ু হাসিতে লাগিলেন ।