পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] রাজপথ తు) বিস্মিত বিমুগ্ধনেত্রে মাধবীর দিকে চাহিয়া বিমানবিহারী দেখিল, নিৰ্ব্বিকল্পমূখে মাধবী মৃদু-মৃদু হাস্ত করিতেছে। তাহার মুখে লজ্জা অথবা সঙ্কোচের এমন একটি রেখা পৰ্য্যস্ত ছিল না যদ্বারা ব্যক্ত হয় যে, এই আহারসংক্রান্ত ব্যাপারে সে যাহ বিয়াছে অথবা করিয়াছে তাহার মধ্যে অসাধারণ কিছু ছিল বলিয়া সে একবারও বিবেচনা করে । নিঃশব্দ প্রশংসায় বিমান মাধবীর নিৰ্ব্বিকার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। “জেলখানার কয়েদীদের কি বিছানা দেয় জান বিমান ?” এ-বিষয়ে বিমানবিহারীর সম্যক্ জ্ঞান ছিল না ; বলিল, “না, ঠিক জানিনে ।” তারাস্বন্দরী কহিলেন, “আমিও ঠিক জানিনে ; কিন্তু একখানা কম্বল আর একটা ইট দিয়ে মাধবী যে নিজের বিছানা করেছে, জেলখানায় তার চেয়ে ভাল বিছানা দেয় বলে’ আমার মনে হয় ।” মাধবী বলিল, “আমার ত তবু একটা ইট আছে, তোমার যে তাও নেই মা !” তারাস্বন্দরীর শান্ত-শুভ্র মুখ আরক্ত হইয়া উঠিল ; বলিলেনু, “সে ত আর আজকের কথা নয়, সে এখন বুঝতেও পারিনে। এ ত অভ্যাস হ’ম্বে গেছে। কিন্তু ইটে মাথা দিয়ে শোওয়ার চেয়ে শুধু-মাথায় শোওয়া ভাল।” বৈধব্যের পর তারাসুন্দরী বহুবিধ দ্রব্যের সহিত উপাধানও পরিত্যাগ করিয়াছিলেন । সে কথা বুঝিতে পারিয়া বিমানের মনে তারামুন্দরীর প্রতি শ্রদ্ধার সঞ্চার হইলেও উপস্থিত তজ্জন্য বিশেষ কিছু কষ্টবোধ হইল না । কিন্তু মাধবীর কঠিন শয্যার কথা শুনিয়া সে বাস্তবিকই ব্যথিত হইল ; দুঃখিতস্বরে বলিল, “এ কষ্টটা না করলেই হ’ত ! এ যে কঠোর তপস্তার মত কঠিন!” বিমানের কথা শুনিয়া মাধবী হাসিয়া ফেলিল ; বলিল, “তপস্তাকে অত ছোট করে দেবেন না! ইট যত শক্ত, ইটে মাথা দিয়ে শোওয়া তত শক্ত নয়,বিশেষতঃ কম্বল দিয়ে ঢেকে নিলে । C - z " বিমান স্মিতমুখে বলিল, “কম্বল দিয়ে ঢেকে নিলে, কি কথা দিয়ে ঢেকে নিলে তা ত ঠিক বুঝতে পারছিনে ৷” SAASA SAASAASAASAASAASAASAAAS A SAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAAAASAASAASAASAA AAAS বিমানের পরিহাসে তারামুন্দরী এবং মাধবী উভয়েই হাসিয়া উঠিলেন। প্রস্থানোদ্যত হইয়া ফিরিয়া দাড়াইয়া মাধবীর দিকে চাহিয়া বিমান আরক্তমুখে বলিল, “সেদিনকার সেই স্বতো-পোড়ানোর অপরাধের জন্যে আজ সৰ্ব্বাস্ত:করণে ক্ষমা চাচ্ছি। আজ ঠিক বুঝতে পারছি যে, সেদিন দেবালয়ে পশুহত্যা করে গিয়েছিলাম !” ব্যস্ত হইয়া কুষ্ঠিতস্বরে মাধবী বলিল, “ন, ন, ও-সব কথা আবার কেন বলছেন ? ও-সব কথা ত সেই দিনই শেষ হ’য়ে গিয়েছে!” r তারাসুন্দরী কিছু বুঝিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি কথা ?” মৃদু হাসিয়া বিমান বলিল, “সে একটা অত্যন্ত অন্যায় কথা মা ! সে বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে।” মাধবীর প্রতি চাহিয়া বলিল, “অপনি সময়-মত মাকে কথাটা শুনিয়ে দেবেন।” তাহার পর এক মুহূৰ্ত্ত চিন্তা করিয়া মুখ তুলিয়া স্মিতমুখে বলিল, “আপনারা ত প্রায়শ্চিত্ত করেইছিলেন, আমিও করেছিলাম ; ইচ্ছায় নয়, বাধ্য হয়ে পরদিন যখন মনে পড়ল যে আমার অপরাধের জন্য আপনি আর সুরেশ্বর প্রায়শ্চিত্ত কবৃছেন, তখন আমার গলাটা একেবারে যেন চেপে গেল ! সমস্ত দিন আর জল পৰ্য্যন্ত খাবার শক্তি ছিল না।” কাতরমুখে মাধবী বলিল, “দেখুন দেখি কি অন্যায় !” “কার অন্যায় তা মা’র দ্বারা বিচার করিয়ে নেবেন।” বলিয়া হাসিতে-হাসিতে বিমান প্রস্থান করিল। পথে বাহির হইয় তাহার মনে হইল যেন কোনও দেবালয় হইতে সে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছে। লঘু পদক্ষেপে এবং লঘুতর চিত্তে সে গৃহাভিমুখে চলিতে লাগিল। আসিবার সময়ে সে মনে করিয়া আসিয়াছিল, সে প্রত্যাবর্তনের সময়ে স্বমিত্রাকে জানাইয়৷ যাইবে যে, স্বরেশ্বরের গৃহে গিয়া সে মাধবীদের সংবাদ লইয়াছে। কিন্তু এখন আর তাহার কোনও প্রয়োজন আছে বলিয়া মনে হইল না। মনে হইল, সেকথা সুমিত্রা জানিলেই বা কি.আর না জানিলেই বা কি ? মাধবীদের গৃহে আসিয়া ঘনিষ্ঠ হইলেই বা কি আর না হইলেই বা কি ? -