পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] বইখানির ভাষা সরল, স্পষ্ট, কোথাও পেচ নাই, খুন্সী নাই। বিশেষ গণ, কেন নাই। কিন্তু জায়গায় জায়গায় হঠাৎ আর্ব বা ফার্স শব্দ থাকাতে আমার বুঝা মুস্কিল হইয়াছে। এক এক শাস্ত্রের, এক এক বিদ্যার এক এক পরিভাষা আছে । সাবধান লেখক সে সে শাস্ত্র ও বিদ্যা ব্যাখ্যা করিবার সময় পরিভাষাও সাধারণের বোধ্য ভাষায় বুঝাইয়া দিয়া থাকেন। আমার বোধ হয় না, এই পুস্তকে ব্যবহৃত আবী ফাসী শব্দ সেইর প পরিভাষা । স্তু মোট কথা বুঝিতে কষ্ট নাই। বতর্মান বাঙ্গাল ভাষা ও বঙ্গালা সাহিত্য দ্বারা বাঙ্গালী দেশের মুসলমানের কি ক্ষতি-বুদ্ধি হইতেছে, বইখানিতে তাহা দেখান হইয়াছে ; কিন্তু, গোড় হইতে আগ পর্য্যস্ত এক অসন্তোষের সুর বরাবর বাজিতেছে। গ্রন্থকার বাঙ্গালী ভাষা চান, কারণ, বাঙ্গালী ভাষা তাহার মাতৃ-ভাষা। কিন্তু,সে ভাষায় তাহঁর জানা ও অভ্যস্ত শব্দ সব নাই । তিনি বাঙ্গালী সাহিত্য চান, কারণ “জাতীয় জীবনের সহিত সাহিত্যের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ।" কিন্তু বতর্মান বাঙ্গালা সাহিত্য হিন্দু-ভাবে ভরা। আমি তাহঁর অসন্তোষের নিন্দ করিতেছি না ; তাহার তুল্য আরও অনেক মুসলমানের সে অসন্তোষ থাকাও স্বাভাবিক । তাহার নিবেদনে কথাটা অারও স্পষ্ট আছে । তিনি লিখিয়াছেন— “সত্য বলিবে, প্রিয় বলিবে, কিন্তু অপ্রিয় সত্য বলিবে না। এই কথাটি ব্যক্তিগতভাবে খাটিতে পারে। কিন্তু সমাজ ও দেশ হিসাবে খাটিবে না। আমার কোন কোন লেখা কাহারও নিকট সঙ্কীর্ণ stĒRTS! Communal patriotism fini ftofsē sērs পারে, কিন্তু আমি যাহা সত্য বলিয়া বুঝিয়াছি, তাহ৷ অপ্রিয় হইলেও প্রকাশ করিতে দ্বিধ বোধ করি নাই । মেলেরিয়ায় ধরিলে কুইনাইন তিক্ত হইলেও সেবন করিতে হয়।” ইহার পরেই লিখিয়াছেন, "সভা-সমিতির মিষ্ট কথার লেপনে, মৌখিক ভ্রাতৃত্ব ও গরজের বন্ধুত্বে হিন্দু-মুসলমানের মিলন স্থায়ী হইবে না। আমাদের সাহিত্য হইতুে হিংসা-বিদ্বেষের গলিত অংশ চিবাইয়৷ [ ? ] বাহির করিয়া উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্বন্ধ স্থাপন করিতে হইবে।” অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ স্বীকার করিয়া মিলনের পথ খুজিতেছেন। এই ভাব লইয়া বইখানি সমাপ্ত করিয়াছেন। "আজ আমাদের সকলেরই এক আসন । আজ হিন্দু-মুসলমানের গৌরব-গাথা অতীতের বিস্মৃতি-সাগরে বিলীন হইয়া গিয়াছে। তবে কেন আমরা অবোধ শিশুর হ্যায় পরেব কথায় পরস্পরের মধ্যে বে-ফায়দা ঝগড়া করিয়া নিজের অনিষ্ট সাধন করিতেছি। অতএব আস্বন, আমরা মনের কালুম দূৰ করিয়া পরস্পর পরস্পরকে প্রেমালিঙ্গন করি ” কিন্তু নিবেদনে তিনিই বলিয়াছেন মৌখিক ভ্রাতৃত্ব ও পরস্পর বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় যেহেতু আজ ধরাতলে আমাদের সকলের আসন এক, অতএব এস আমরা ভাই হুইয়। যাই । এ-কথা তিনি অস্বীকার করিয়াছেন । অথচ ইহা ব্যতীত তাহার অন্ত উপদেশ নাই । অতএব সাহিত্য-প্রসঙ্গের মধ্য দিয়া এমন প্রসঙ্গ উঠিয়াছে, যাহা গীজ কল খুব বড় প্রসঙ্গ হইয়াছে। মহাত্মা গন্ধী আদি শত শত হিতকামী দেশচিন্তক এই কথা ভাবিতেছেন। তাইরা যে কলহের নিবারণ-চিত্ত৷ করিতেছেন, দুই দশটা সরকারী চাকরী, দুই দশটা পদ, কিংবা মসজিদের কাছে বাজন, অথবা হিন্দু পাড়ার মধ্যে গো-হত্যা—এইরপ বিষয়ের নিম্পত্তি হইয়া গেলেই সে কলহ চুকিয় যাইবে না। এক এক রোগের নান। উপসর্গ থাকে ; আমাদের দেশকে যে রোগে ধরিয়াছে, সে রোগের

  • 載ー>\。

বাঙ্গালা সাহিত্য-প্রসঙ্গ ৬৭৩ এ-সব মাত্র কয়েকটা উপসর্গ। আসল রোগ, ভিতরে ; মনের অসন্তোষে । এই অসন্তোষের বীজ ধরিতে না পারিলে নিত্য নুতন উপসর্গের শাস্তি খুজিতে হুইবে । আকাঙ্ক তৃপ্ত ন হইলে অসন্তোষ জন্মে। এক বিরোধী আকাঙ্গ জুটিয়া প্রথমটাকে তৃপ্ত হইতে দেয় না। মনের এইরপ দুই বিপরীত ইচ্ছার অস্তিত্ব আমরা সব সময় বুঝিতে পারি না। কিন্ত বুঝি মন যেন বেস্থর বাজিতেছে—একটা তার যে স্বরে, অষ্ঠটা সে স্বরে নয়। এই লয়ের অভাবে মনে করি, বুঝি এইটা পাইলে অসন্তোষ চলিয়া যাইবে। আমার মনে হয়, গ্রন্থকার চৌধুরী সাহেব দো-টানা মনের দ্বন্ধে পড়িয়াছেন। আমি যে, সে দ্বন্দ্ব দেখাইতে পারব, কিম্ব তাইকে মানাইতে পারিব, সে আশা করি না। কারণ জামায় কাছে যেটা সত্য, তাহার কাছে সেটা সত্য নয়। আরও বাধা, আমি যে হিন্দু, একথা তিনি কদাপি ভুলিতে পারবেন না। সম্প্রতি তাহার মনের অ-স্বথ অন্বেষণ না করিয়া ভাইর সত্যের বিশ্লেষণ করি। প্রথমেই দেখিতেছি, ভাষা ও সাহিত্য যে দুই পৃথক বস্ত. তাহা তিনি বহ, স্থলে ভুলিয়া গিয়াছেন। আমি সাহিত্য-পদে বুঝি, মানব-মনোজগতের বাহ প্রকাশ-বিশেষ । চিত্রে এই প্রকাশ দেখি, সেটা চক্ষুর গ্রাহ্য। কানে যখন শুনি, তখন সেটা ধ্বনিময় । বখন সে ধ্বনির উৎপত্তি চিন্তা করি, তখন বলি বাকৃময়। যখন সে বাকের মূর্তি কল্পনা করি, তখন তাহ অক্ষরময়। এই বিশ্লেষণ হইতে বুঝি, মানব-মনের প্রথম প্রকাশ চিত্রে ও গানে হইয়াছিল। পরে সাহিত্যে সম্পূর্ণ বাক্ময় হইয়াছে। ভাষা সেই বাক-সাহিত্যের আশ্রয় ও বাহন। আরও পরে ভাষার ধ্বনি বিশ্লেষণ করিয়া, কৈমিতিকের মূল পদার্থের মত, ভাষার বর্ণ আবিষ্কার করিয়াছি। সঙ্গে সঙ্গে এক এক বর্ণের এক এক রপ কল্পনা করিয়া অক্ষররপ চিত্র দ্বারা ভাষার ধ্বনিকে ৰাখির ফেলিয়াছি। এখন চিত্র দেখিবামাত্র কানে ধ্বনি শনি, আর মনে সে ধ্বনি বা শব্দের অর্থ উদয় হয়। কিন্তু, এই যে বাৰু, তাহ সমাজভেদে ভিন্ন ভিন্ন। জীবন-ধারণে ও স্বথ-ভোগে সুবিধা হয় দেখিয়া আমরা দল বাধিয়া সমাজ গড়িয়াছি, তেমনই বহ বিষয়ে নিজের পীয়ে বেড়াও পরিয়াছি। কেহ সে বেড়ী ভাঙ্গিলে তাহার কৈফিয়ৎ চাই, তাহাকে এক-ঘর্যে করি, সমাজ হইতে তাড়াইয়া দিই। কারণ সে সমাজের শৃঙ্খলকে বিশৃঙ্খল করে । অবশ্ব সমাজের শৃঙ্খলের পরিবতন হয়, সকলে পরিবতন গ্রহণ করে, মানে । কিন্ত, পরিবতন দ্বারা আমাদের দুঃখের মাত্র হ্রাস, স্বথের মাত্রা বৃদ্ধি দেখিতে না পাইলে মানে না। ভাষার শব্দের বানান ( মূলধ্বনি ) সকলের কানে সমান নয়, মুখেও সমান নয়। কিন্তু শব্দের চিত্র, যে সঙ্কেত শিথিয়াছে, সে দেখিবামাত্র অর্থ গ্রহণ করে। এখানে আমার নিজের কথা বলিতে হইতেছে। কেহ কেহ মনে করেন, আমি বানান বদলাইতেছি। কথাটা কিন্তু, ঠিক নহে ; আমি বানান ঠিক রাখিতেছি, অনেক অসাবধান ও অলস লেখক ঠিক বানান লেখেন না দেখিয় দুঃথিত হই । আমি কোন-কোনও বর্ণের চিত্র বা দ্যোতক পরিবতনের পক্ষপাতী। এই দুয়ের মধ্যে আস্মান জমিন ফরক। কোন কোন মুসলমান লেখক, বাঙ্গালা ভাষায় উত্তম জ্ঞান থাকিতেও, বানান বদলাইতেছেন। তহঁর বাজাল অক্ষরের ধ্বনি জানেন না, বলিতে পারি না । আমি আবাঁ ফাদা জানি না। কিন্তু, মৌলবীর মুখে আবী ‘সিন’ আমার কানে স' ধ্বনি বোধ হইয়াছে। উহা যে ছ’ ধ্বনির তুল্য নহে, তাহা আমি কেন পূব বঙ্গের দুই-এক স্থান ছাড়া অপর সকল বাঙ্গালীর কানে ধরা পড়িবে। একথা লেখাও বাহ,ল্য হইবে না যে, পশ্চিম বঙ্গের এমন কি খালু কলিকাতার বহু, বহু, বাঙ্গালীর মুখে ‘স ভিন্ন অঙ্ক ধ্বনি বাহির হয় না ? দুঃখের বিষয়, বাঙ্গালা যপমালা শেখানা