পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Фh> о প্রবাসী—ভ মেরুদণ্ড কিছুতেহ নত হয় নাই, সেলাণ করার অভ্যাস তাহার জন্মে নাই ; তিনি ভগ্নও হন নাই । র্তাহার মনের . জোর কিরূপ ছিল, তাহ। তাহার কারাগারে রচিত পুস্তক হইতে প্রমাণিত হয়। তাহা তাহার পাণ্ডিত্যের প্রমাণও বটে। যেরূপ পুস্তক কেহ স্বচ্ছন্দচিত্তে স্বগৃহে প্রয়োজনীয় পুস্তকরাজিপরিবৃত হইয়া রচনা করিলে প্রশংসাভাজন হন, তিনি তাহা কারাগারের নানা কষ্ট, অস্ববিধা ও মানসিক অশান্তির কারণ সত্ত্বেও রচনা করিয়া দেশবিদেশের পণ্ডিতমণ্ডলীর বিস্ময় উৎপাদন করিয়াছিলেন । র্তাহার গীতাভাষ্য র্তাহার শাস্ত্রজ্ঞতা ও ধৰ্ম্মপ্রাণতার পরিচায়ক । শিক্ষার অভাব এবং দারিদ্র্য বশত: ভারতবর্ষের অধিকাংশ লোকের দেশহিতকর প্রচেষ্ট। সকলের সহিত এখনও যথেষ্ট যোগ নাই । টিলক যখন কাৰ্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন, তখন এ বিষয়ে দেশের অবস্থা আরও খারাপ ছিল । তিনি শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সহিত অশিক্ষিত সম্প্রদায়ের যোগ স্থাপন, এবং দেশহিতকর প্রচেষ্টাসকলে সৰ্ব্বসাধারণের আগ্রহ উৎপাদন করিবার জন্য দেশী গণপতি-মেলা ও শিবাজী-উংসব তাহার দ্বারাই মহারাষ্ট্রে প্রবর্কিত হয়। এই উৎসব দুটিকে গবর্ণমেণ্ট দু' চক্ষে দেখিতে পারিতেন না, এবং উহাদের উচ্ছেদ সাধনার্থ যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছিলেন।” শিক্ষা বিস্তারের, ও তন্মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষণ বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা টিলক মহাশয় সম্যকরূপে উপলব্ধি করিয়াছিলেন। সেইজন্য তিনি যৌবনে কয়েকজন বন্ধুর সহিত মিলিয়া দাক্ষিণাত্য-শিক্ষাসমিতি ও তাহার তত্ত্ব।বধানে এক উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন । ইহা পরে ফাগুসন কলেজ নামে পরিচিত হয় । এই সমিতির সভোরা সামান্য গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যয় মাত্র লক্টয়া শিক্ষকতা করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন । টিলকও অনেক বৎসর এই সৰ্ত্তে শিক্ষকত। করিয়াছিলেন । পরে তাহার সঙ্গীদের সহিত ৭ে নে কোন বিষয়ে মতভেদ হওয়ায় তিনি সমিতি ও কলেজের সংশ্রব ত্যাগ করেন। রীতি অবলম্বন করেন । 9 ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ওকালতী করিয়া প্রভূত অর্থ-উপার্জন করিবার মত শিক্ষণ উপাধি ও যোগ্যতা টিলকের ছিল । তিনি fমঞ্জের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের মোকদ্দমায় যেরূপ দক্ষতা এবং মানসিক স্থৈধ্য ও দৃঢ়তার সহিত আত্মপক্ষ সমর্থন করিয়াছিলেন, তাহা অসামান্য । তাহা হইতেই বুঝা যায়, ধে, আইন ব্যবসার দ্বারা লভনীয় কোন ঐশ্বৰ্য্য সম্মান ও পদ তাহার সাধ্যাতীত ছিল না। কিন্তু তিনি তাহার শক্তি দেশের সেবায় নিয়োজিত করিয়াছিলেন । নিবাশ হইয়া তিনি তাহা করেন নাই, ইংরেজের উপর রাগ করিয়া করেন নাই, দলপতি হইবার জন্য করেন নাই, শিক্ষা সমাপনের লোকহিতব্ৰত গ্রহণ করিয়৷ তাহা করিয়াছিলেন । মহারাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার গৌরবময় স্বতি তাছাকে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল। - তিনি নিজে ভারতবষের সাধনের, যে পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন, ঃ কিন্তু তিনি ভাল করিয়া জানিতেন, ধে, পথ এক নহে, বহু । সেইজষ্ঠ তিনি মহাজনকে শ্রদ্ধা করিতে পারিতেন । তিনি নিজে শাস্ত্রনিৰ্দ্দিষ্ট আচার ও দেশাচার মানিয়া চলিতেন, রবীন্দ্রনাথ সকলস্থলে ভাই করেন না । তাহা সত্ত্বেও তিনি রবীন্দ্রনাথকে ইউরোপে ভারতবর্ষের কাজ কবিতে অতুরোধ করিয়া পঞ্চাশ গজার টাকা প্রেরণ কৰে ন । পর উন্নতি - iহা কখনও লোকহিতের, で পরিত্যাগ করেন নাই । ভিন্নপন্থাবলম্ব রবীন্দ্রনাথ তাহাকে জানান, যে, তিনি তাহার প্রণালী আকুপারে কাজ করিতে অসমর্থ । টিলক বলেন, যে, তাহা তিনি জানেন, এবং ইহাও বলেন, যে, রবীন্দ্রনাথ নিজের পন্থ। ত্যাগ করিয়া অন্য কোন পস্থা অবলম্বন করেন, ইহা তিনি চান না; বরং তিনি তাহা করিলে দুঃখিতই হইবেন —রবীন্দ্রনাথ নিজের প্রণালী ও মত অনুসারে ভারতবর্যের বাণী পাশ্চাত্য দেশসূকলে প্রচার করেন, ইহাই তাহার অভিপ্রায় । রবীন্দ্রনাথ এই টাকা হণ করেন নাই । কিন্তু ঘটনাটি হইতে টিলকের স্বদেশপ্রেমেখ, স্বক্ষদর্শিতার ও ঔদার্য্যের পরিচয় পাওয়া ঘাষ । প, প্রণালী, ও পদ্ধতির ঝগড়ায় যাহ্বার লক্ষ্যের ও উদ্দেশ্বের একই ভুলিয়া যান, টিলকের দৃষ্টান্ত হইতে তাহারা শিক্ষা লাভ করিলে দেশের কল্যাণ হয় ।