পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] এবং ফলে পুরাতন সব ধনিকের অত্যাচার-কাহিনী এখনও পাশ্চাত্য শ্রমিকরা উপকথার মতই শিশুকাল হইতে শুনিতে শুনিতে বাড়িয়া উঠে । ঝগড়ার ধাক্কায় পাশ্চাত্য অর্থনীতি বিজ্ঞাপনী-সাহিত্যের নীতি অনুসরণ করিতেছে । ধনিকের বন্ধু বলিতেছে, শ্রমিক আরামে বসিয়া, কুঁড়েমী করিয়া সমাজের সর্বনাশ করিতে চায় ; শ্রমিকের বন্ধু বলিতেছে, ধনিক বসিয়া সকলের রক্ত শুষিয়া অকারণ উৎপীড়নের কেন্দ্ররূপে জোকের মত ফুলিয়া উঠিতেছে। আসলে উভয়েই করিয়াছে ভুল। সামাজিক অর্থনীতির দিক্ দিয়া ধনিক ও শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবী দুইএরই প্রয়োজন আছে। প্রথম দ্বিতীয়কে বঞ্চিত করিলেও তাহ দোষ এবং দ্বিতীয় প্রথমকে বঞ্চিত করিলেও তাহা দোষ । কিন্তু ঝগড়ার খাতিরে শ্রমিকবন্ধু অর্থনৈতিক বিপ্লববাদী ক্রমাগত চীৎকার করিয়া বলিতেছে, “ধনিক আমাদের ও সমাজের শক্র—তাহাকে দূর করিয়া HfS.” ইহার মূলে অবশ্ব রহিয়াছে ধনিকের অত্যাচার , কিন্তু রোগীকে হত্যা করা রোগের প্রতিকার নয়। যদি ধনিকগণ দুষ্টই হয়, তাঙ্গ হইলে তাহাদের দোষ নষ্ট করাই প্রয়োজন, তাহাদের সমাজ হইতে নিঃশেষে দূর করিলে লাভ ত নাইই, বরং সমাজ চলা দুষ্কর হইয়। উঠিবে। পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই এখনও ধনিকবংশ-নির্বংশবাদ একটা ধৰ্ম্মের মতই প্রায় শ্রমিকজগতে জাগ্রত হইয়া রহিয়াছে—কিন্তু অল্পে অল্পে সকলেই ইহার নির্ব দ্ধিতা বুঝিতে পারিয়া শাস্ত হইয়া আসিতেছে । রুশিয়া নিজের ভুল বুঝিয়। ক্রমশঃ তাহ সংশোধন করিতেছে। বৰ্ত্তমানকালে পাশ্চাত্যের কোন চিন্তাশীল ব্যক্তিই ভাবেন না, যে, সমাজের সকল ব্যক্তিকে ধরিয়া জোর করিয়া ইট বহান অথবা হাতুড়ি পিটানর কাজ করাষ্টয়া লইলেই সমাজের অনন্ত উন্নতি হুইবে । ইহাও কেই ভাবেন না, ধে, সামাজিক স্বথ-স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির উপায় সকল ব্যক্তিকে এক ছাচে ঢালিয়৷ তথা কথিত সাম্যনীতির প্রতিষ্ঠা অথবা সকল পাকস্থলীর অথবা স্বায়ুর অবস্থা-নির্বিশেষে সৰ্ব্বজনের একই খাদ্য, বস্ত্র, ও জীবনযাত্রা-প্রণালী নিৰ্দ্ধারণ করা । আজকাল ' আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের ঢেউ আসিয়াছে, তাহা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি। তাহার মাথায় পাগড়ি থাকিলেও আমরা ত:হার পাশ্চাত্য রূপ ধরিয়া ফেলিয়াছি। ধনিক-শ্রমিক-সংঘাতের ক্ষেত্রেও দেখিতেছি, ভারতবর্ষে পাশ্চাত্যর পুরাতন কথাগুলি নূতন উচ্ছ্বাস ও উৎসাহের সাজ পরিয়া আসিয়াছে। ভারতে শ্রমিক বড়ই উৎপীড়িত-কে নয় ? শ্রমিকের উন্নতি হয়, আমরা সকলেই চাই । কিন্তু তাই বলিয়া অর্থনীতি ও সমাজনীতির শ্রাদ্ধ আমাদের বিবিধ প্রসঙ্গ—বিপ্লবের ভূলমন্ত্র ᏄᎼᎼ চোখের সম্মুখে সম্পন্ন হয়, ইহা ত চাই না । শ্রমিককে উন্নত করিতে হইবে বলিয়া সকল মিথ্যা ও অৰ্দ্ধ-সত্যকে মানিয়া লইতে হইবে, তাহ নয়। ভারতবর্ষে পাশ্চাত্যের অনুকরণে অর্থনীতি ও সমাজনীতি-জ্ঞানহীন একদল লোক নানাপ্রকার আজগুবি কথা বলিতে স্বরু করিয়াছে। তাছাদের মতে, ১ । ইতিহাস শুধু অর্থনৈতিক কারণেরই ফল, ২ । সকল দুঃখের শেষ হইবে যদি সমাজে অর্থনৈতিক সাম্যবাদ আনয়ন করা যায়, ও ৩। সকল অর্থ ও ঐশ্বর্ঘ্যের মূলে আছে শুধু শ্ৰমিকের শ্রম । আমাদের সম্মুখে একথানা এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিক রহিয়াছে। তাহাতে দেখিতেছি, ইয়োরোপীয় ঐ চিরপুরাতন তিনটি ভুল ভাল করিয়া প্রচার করিবার চেষ্টা হইয়াছে। দেখিতেছি, “এই যে দেশব্যাপী বিরাট, অসন্তোষ, এই যে দরিদ্র্যের মর্শ্বস্তুদ জালা”, ইঙ্গর মূলে না কি “ধনী সম্প্রদায়ের বাড়ী, গাড়ী, বিলাস, ব্যসন,” ইত্যাদি । আমাদের ত মনে হয়, দেশব্যাপী অসন্তোষের মূলে রহিয়াছে, ননি। লোকের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অত্যাচার, অপমান, ভয়, হিংসা, ধৰ্ম্ম, আত্মশ্লাঘা ও আরও অনেক কিছু ! গাড়ী, বাড়ী, বিলাস, ব্যসন লইয়। এই যে ধনীর রহিয়াছে, ইহারা কি সকলেই পরম সস্তোষে দিন কাটইতেছে ? ইতিহাসের ঘটনাচক্র শুধু অর্থনীতির ধাক্কাতেই নড়ে, এ ভুলটা ভারতবর্ষ প্রথম করে নাই ; তার আগে করিয়াছিলেন কাল্ মার্কস্ ; তাহারই ধাক্কা আজ এদেশে পৌছিয়াছে । ঘরে আছে শুধু চার মুঠ চাল, খাবার লোক চার জন । সকলের মধ্যে চালটুকু সমবিভাগ করিলেই কি তাহ। পরিমাণে বাড়িয়া যাইবে ? আমাদের সম্মুখের এক পয়সার সাপ্তাহিকখানার মতে সাম্যনীতি প্রতিষ্ঠিত হষ্টলেই কোন অর্থনৈতিক জাদুর সাহাধ্যে সামাজিক স্থখ-স্বাচ্ছন্দ্য হঠাৎ খুব বাড়িয়া যাইবে । ধরা যাক ভারতবর্ষের লোকের আয় লোক-প্রতি বৎসরিক ৩০২ ৷ ইহার অর্থ এক্ট, যে, কাহারও কাহারও আয় ইহা অপেক্ষ। অনেক বেশী, কাহারও অনেক কম । কিন্তু সকলের আয় একত্র করিয়া সমবিভাগ করিলে প্রত্যেকে মাত্র বাংসরিক ৩০২ পাইবে । আশার কথা সন্দেহ নাই ! তাহাতে সকলে পরম সুথে কাল কাটাইবে । সাম্য হইতে স্বাচ্ছন্দ পাইতে হইলে সৰ্ব্বাগ্রে যাহা বণ্টন কপিয়া সাম্যনীতি প্রতিষ্ঠ করা হইবে, তাহার পরিমাণ বৰ্দ্ধন প্রয়োজন। শুধু সাম্য হইলেই স্বাচ্ছন্দ্য লাভ হইবে না। বরং অকালে সাম্য আসিলে সামাজিক সঞ্চয়ে বাধা পড়িয়া সমাজের ভবিষ্যৎ উৎপাদনী শক্তি