পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ88 প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড কাছেই এবার আমার আডড হয়েছে। রাস্তার উপরেই যে বোর্ডিংটা, তার পাশেই ছোট বাড়ীটাতে উঠেছি।” হিমানী বলিল, “একদিন এলেই ত পারেন, তা হ’লেই বাবার সঙ্গে আলাপ হ’য়ে যায় । খোকার সঙ্গে ত আলাপ আছেই, আসতে আর কি ?” কথাটা বলিয়া ফেলিয়াই তাহাব মনে হইল হয়ত অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানো হইতেছে । বিনয় কিছু ষদি মনে করে ? কিছু মনে করিবার কোনো লক্ষণ না দেখাইয়া বিনয় বলিল, “হ্যা, তাই যাব। মুঙ্গিল হয়েছে যে, সন্ধ্যার সময় ছাড়া আমার অবসর থাকে না, আর সেই সময় এমন বৃষ্টি নামে যে, ঘর থেকে বেরনো দায়। মাদ্রাজ থেকে কতগুলো অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিষ নিয়ে এসেছি, আপনাকে দেখাতে নিয়ে যাব । বিকেলে আপনি রোজই কি বাড়ী থাকেন ?” হিমানী হাসিয়া বলিল, “বাডী ছেড়ে আর যাব কোথায় ?” ইতিমধ্যে নিমন্ত্রণকারীর দল মহা কোলাহল করিয়া সকলকে বসিবার ঘরে বসিতে লইয়া চলিল । অনিচ্ছাসত্ত্বেও অগত্যা এই দু'টি মানুষ পরস্পরের লোভনীয় সঙ্গ ত্যাগ করিয়া লোকের ভিড়ের মধ্যে গিয়া বসিল । মৃণালের স্বামী তখন তাহার বন্ধুর দলকে এক এক করিয়া আনিয়া নিজের স্ত্রীর সহিত পরিচয় করাইয়া দিতেছিল । তাহার সঙ্গিনীর দল অল্প একটু দূরে বসিয়া তাহাদের সমালোচনা করিতেছিল। হিমানী আসিয়া তাহীদেরই মধ্যে একটু জায়গা করিয়া বসিয়া পড়িল। মুকুল একটু ঠাট্টার স্বরে বলিল, “কি গো ! আসতে পারলে ? আমি ভাবলাম তোমার বুঝি শিকড় গজিয়ে গেল, আর ওখান থেকে নড়তে পারবে না ।” হিমানী মনে-মনে ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “ওসব শিকড়টিকড় গজানো তোমাদের জন্য ভাই, আমরা গরীব যান্থব, আমাদের পাগুলোকে সচলই রাখতে হয়।” ভাগ্যক্রম আর একটি মহিলা আবার মৃণালের নেৰূলেসের কথা তুলিয়া এই অগ্ৰীতিকর প্রসঙ্গ চাপ দি ফেলিলেন। মুকুল বলিল, “প্যাকাটার মৃণালকে কিছু কমিশন দেওয়া উচিত, ওর খুব বিজ্ঞাপন হ’য়ে গেল।” অতঃপর খাওয়ার ডাক আসিল । খাওয়া চুকিয়া যাইবার পর নিমন্ত্রিতের দল আর এক-জায়গায় আসিয়া বসিতে রাজী হইল না । কেহ বা বিদায়-গ্রহণের জোগাড় করিতে লাগিল, কেহ বসিবার ঘরে গান-বাজনার দলে ভিড়িয়া গেল, কেহ ভিজা মাটি এবং ঘাসের ত্রুটিটুকু উপেক্ষা করিয়া বাড়ীর সামনের ছোট লনটিতে বাহির হইয়া পড়িল । ‘লনের এককোণে একটি হাস্নাহানা ফুলের ঝাড় ফুলে-ফুলে ভরিয়া উঠিয়া তীব্র সৌরভে বাতাসকে ভারাক্রান্ত করিয়া তুলিয়াছিল । হিমানী কমলের ছোট মেয়েটিকে সামনে পাইয়া বলিল, “খুকু, গাছটায় কেমন ফুল ফুটেছে দেখেছ ? ওটা না তোমার গাছ ?” “হঁ্য আমার, চল তোমায় ফুল দেব।” বলিয়া খুকী তাহাকে টানিয়া লইয়া চলিল । হিমানীর যাইতে কোনও আপত্তি ছিল না, কারণ লিনে যাহারা ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল তাহদের মধ্যে এই অন্ধকারেই সে বিনয়ের মূৰ্ত্তি বেশ ভাল কবিয়াই চিনিতে পারিয়াছিল । ফুলের ঝাড়ের কাছে আসিয়া খুকী এক গোছা ফুল ছিড়িয়৷ হিমানীর হাতে গুজিয়া দিল। হিমানী বলিল, “এস খুকু, তোমার মাথায় পরিয়ে দিই ।” খুকু মাথা নাড়িয়া বলিল, “ন, আমাকে না, তুমি পর, তোমার যে মস্ত বড় খোপা ?” g হিমানী হাসিয়া বলিল, “খোপা না থাকলে বুঝি পৰ্বতে নেই ? আমি যে বুড়ো হ’য়ে গিয়েছি, আমাকে ফুল পরতে দেখলে সবাই হাসবে।” খুকু বলিল,"আচ্ছ, তবে ডলীকে ডেকে আনি, তার চুল বেশ এমনি এমনি !” সে নিজের ছোট চাপার কলির মত আঙল ঘুরাইয়া ডলীর চুলের ধরণ দেখাইয়া দিল। তার পর তাহাকে ডাকিবার জন্য বাড়ীর দিকে দৌড় দিল । ● খুকী চলিয়া যাইতেই পিছন ফিরিয়া হিমানী দেখিল,