পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ8∞ দিয়া হিমানী জিজ্ঞাসা করিল, “আমার কোন বন্ধুর সেবায় জাবার তোমার টাকা গেল ?” 導 অমিয় বলিল, “বিনয়-বাবু! আবার কে? সেদিন রাস্তা দিয়ে আসতে আসতে দেখলাম, যে, র্যাপার মুড়ি দিয়ে শুকনো মুখ করে দোতলার বারাণ্ডায় দাড়িয়ে আছেন। জিগগেধ করাতে বললেন, জর হয়েছে একটু। কাল খবর নিতে গিয়ে দেখলাম, একটু নয়, বেশ বেশীই জর হুয়েছে, এবং তার গুণবান চাকরটি সময় বুঝে” চম্পট দিয়েছেন। একটু চা করে দেব ভেবে ভাড়ারের সন্ধানে গিয়ে দেখলাম, এক হাড়ি চাল ছাড়া আর কোথাও কিছু মেই। চা, চিনি, দুধ এই-সব জোগাড় করতে টাকাটা খরচ হয়ে গেল।” হিমানীর মন আশঙ্কা কালো হইয়া উঠিল। সেই নিমন্ত্রণের ব্যাপারের পর বিনয় বার-দুই তাহদের বাড়ী জাসিয়াছিল। তাঁহার পর কি একটা কাজে সে কলিকাতার ৰাহিরে দিন করেকের জন্ত যাইতেছে বলিয়া যায়। ইহার পর নিয়ের আর কোনো খোজ খবর সে পায় নাই। হঠাৎ এমন সংবাদ শুনিয়া ভয়ে তাহার বুকের ভিতর কেমন যেন করিয়া উঠিল। $ , অত্যন্ত উদ্বিগ্নমুখে সে জিজ্ঞাসা করিল, “আমাকে জাখি বলিস্নি কেন ? ভদ্রলোক একলা অম্বথে পড়ে কি করছেন, তার ঠিক নেই। আজ খোজ নিয়েছিলি ?” * 零 অমিয় বলিল, “বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। পাশের বাড়ীর মেসের একজন ছেলেকে বলে এসেছি, তারাই দেখছে বোধ হয়। টাকা দিতে পারবে এখন ?” অন্তদিন হইলে এত সহজে অমিয়ের আবেদন গ্রাহ হইত না। আজ হিমানীর যেন কথা বলিবারও ক্ষমতা ছিল না। সে যন্ত্র-চালিতের মত টাকা বাহির করিয়া দিল। অমিয় খুসি হইয়া ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গৈল । বিনয় একৃলা অমুখে পড়িয়া, কেহ তাহাকে দেখিবার নাই, চাক্ষরটা-শুদ্ধ সরিয়া পড়িয়াছে ; এই কথাগুলা ক্রমাগত তাহার মনে ঘুরপাক খাইতে লাগিল। তাহার মনের আঁধার ক্রমেই নিবিড় হইতেনিধিড়তরহইয়াউঠতে গ্লাগিল। কি"র কিছুতেই সে যেন ভাবিয়া ঠিক প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড পারিতেছিল না, অথচ কিছু না করাও যেন অস্তব মনে হইতেছিল। বৃষ্টি পড়িতে আরম্ভ করিল। সাবিত্রী : ভিতর হইতে ডাকিয়া বলিলেন, "হিমু, ভিজ ছিস্ কেন সন্ধ্যে-বেলাটা। জরজারির দিন, একটা অস্থখ-বিমুখ হ’য়ে পড়লে তখন বিপদ হৰে।" - হিমানী নিশ্বাস ফেলিয়া ঘরের ভিতর উঠিয়া আসিল । ভিতরটা অন্ধকার, টেবিলের উপর হারিকেন ল্যাম্পট ঝি রাখিয়া গিয়াছে, সেটা জালিবার কথা এখন পর্য্যস্ত কাহারও মনে হয় নাই। হিমানী একবার দেশলাইয়ের বাক্স হাতে বরিয়া সেটা জালিতে গেল, পরমুহূর্তেই দেশলাই ফেলিয়া দিয়া বিছানায় লুটাইয়া পড়িয়া কাদিতে আরম্ভ করিল। বর্ষা-রজনী তাহার বিপুল অন্ধকারের পূসরা লইয়া ধীরে ধীরে ধরণীর বুকে নামিয়া আসিল । নীচে দরজার কপাটের শব্দ শুনিয়া সাবিত্ৰী জিজ্ঞাসা করিলেন, “খোকা এলি নাকি রে ? দরজাটা দিয়ে আসিস ভাল করে, তা না হ’লে ভিতরে এক হাটু জল দাড়িয়ে যাবে এখন” বলিয়া তিনি আবার অসমাপ্ত রন্ধনকার্ষ্যে মন দিলেন । g জরের যন্ত্রণায় সারাদিন ছট্‌ফট্‌ করিয়া সন্ধ্যার দিকে বিনয় ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। চোখে আলোর স্পর্শ অহুভব করিয়া সে চোখ খুলিল। চাহিয়াই তাহার মনে হইল এখনও তাহার ঘুম ভাঙে নাই, যে স্বপ্নলোকে পরম প্রিয় সার্থীটির সঙ্গে সে এতক্ষণ ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল, এখনও সেখানেই সে আছে। কিন্তু এ ধারণা তাহার বেশীক্ষণ রহিল না, অত্যন্ত বিস্থিত হইয়া যে বলিল, “আপনি এখানে এলেম কি করে? বেশ খানিকটা ভিজেও এসেছেন দেখছি।” * বিনয় তাহাকে দেখিয়া না জানি কি বলিৰে, এই আশঙ্কায় এতক্ষণ হিমানীর শুরু কঁাপিতেছিল। কিন্তু তাহার মুখের দিকে চাহিবামাজ ক্লিয়ের মুখে যে অনিৰ্ব্বচনীয় তৃপ্তির চিহ্ন ফুটিয়া উঠিল, ১tহাতে তাহার, সব ভয় দূর হইয়া গেল। সে হাসিয়া বলিল, “খোকার কাছে আপনার অশ্বখের কথা শুৱে খেতি এলাম।