পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা டகி. হইতে যদি কেহ তাহার কাতর ক্ৰন্দন শুনিতে পাইয়া বাতি-হস্তে তাহাকে উদ্ধার করিতে আসে । মাহির মনে হইল, এই যে স্বদেশী বাণী আজ কোন একটা অমঙ্গলের আশু সম্ভাবন উচ্চরবে সকলকে জানাইয়া সতর্ক করিয়া দিল, সে আর কিছু নয়, সে তাহারই জীবন্ত সমাধির বার্তা । মিনিট পাচেক পরেই সেই জমাট অন্ধকারের বুকে একটুখানি আলোর রশ্মি ফুটিয়া উঠিল। আকুল আগ্রহে মাহি বিস্ফারিত নয়নে সেই দিকে চাহিয়া রহিল। সেই ক্ষীণ আলোক-রশ্মির প্রত্যেক কম্পমটি মাহির হৃদয় আশায় ভরিয়া দিতে লাগিল । সেই দিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে তাহার চোখ দুইটা বেদনায় টনটন করিয়া উঠিল ; তথাপি সেই আলোক-ধারীর দেখা নাই। চোখ দুইট। দুই হাতে একবার ঝগড়াইয়া লইয়া সে সেই কাজল-কাল আঁধারেই হাতড়াইতে হাতড়াইতে একটু অগ্রসর হইয়া আসিল । একটু পরেই সে একটা মানুষকে তাহার দিকে একটা ডিবিয়া হাতে অগ্রসর হইতে দেখিতে পাইল । তখনও মানুষটা বহুদুরে ; একটা ছায়ামূৰ্ত্তির মতই মাহি তাহাকে দেখিতে পাইল । অন্ত সময় এইরূপ অন্ধকারময় খাদের দূরতম প্রান্তে মাহির সম্মুখে এরূপ একটি ছায়ামূৰ্ত্তির আবির্ভাব হইলে, সে হয়ত ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া উঠিত। কারণ, খাদের ভিতর অপঘাতে যাহাদের অপূর্ণ আশা ও আকাঙ্ক্ষসমেত তরুণ জীবনটা পরের জন্ত চির-সমাধিস্থ রাখিতে হয়, তাহারা নাকি অপদেবতা হইয়া মাঝে মাঝে কাহারও কাহারও সম্মুখে মূৰ্ত্তি ধরিয়া আসিয়া উপস্থিত হয়, এবং স্বযোগ ও স্ববিধ পাইলে টুটি টিপিয়া তাহাকে নিজেদের দলে টানিয়া লয়! এখন মাহির কিন্তু এরূপ কোন ভয়ই হইল না। সে এই ছায়ামূৰ্ত্তিটিকে তাহার ত্রাণকৰ্ত্তা ভাবিয়া লইয়া একটা পরম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিল । ধীরে ধীরে মহাটি, মাহি যে গ্যালারীতে ছিল, তাহারই কাছে আসিয়া দাড়াইল । মাহি ভাল করিয়া তাহাকে দেখিবার চেষ্টা করিয়াও চিনিতে পারিল না।একটু চুপ করিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল,—তুই কে বটিস্ রে । স্বদেশী বাণী ዓ¢ጫ মানুষটি হাতের আলোটি মাহির দিকে ফিরাইল ; তার পর একটা বিকট হাস্তে সমস্ত খাদট। কম্পিত করিয়া তুলিয়া বলিল,—এই যে, তুই এঠনে বসে রাইছিল ? বাঃ —তাহার চোখ দুটা সেই অন্ধকাৰে জলজল করিয়া জলিতে লাগিল । মাহির বুকের ভিতরটা ভয়ে চিপ টিপ করিতে লাগিল। সৰ্ব্বনাশ ! এ যে তাহদের চিরশত্রু বড় কা মাঝির কণ্ঠস্বর । বিবাহের দিনে স্বক্লার হাত হইতে তাহাকে ছিনাইয়া না লইতে পারার আক্রোশ জীবনে যে ভুলিতে পারে নাই, সেই তাহাদের ভাগ্য-গগনের চিররাহুর আজ এমন সময়ে কেন প্রকাশ ? এই তার মৃত্যুদূতের আগমনীই কি তবে আজ বঁাশীর কণ্ঠে বাজিয়াছিল ? ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া মাহি সেইখানেই শক্ত হইয়া বসিয়া রহিল। বড় কা মহানন্দে গ্যালারীর দিকে অগ্রসর श्ल । ( २ ) তখন নন-কো-অপারেশনের ঢেউ কয়লা-কুঠার অন্ধকার নিরাল খাদের ভিতর কুলী-কামিনগণের হৃদয়েও বেশ একটা চাঞ্চল্যের সাড়া আনিয়াছিল। মহাত্মার শিষ্যগণের বক্তৃতার জোরে তাহাদের অশিক্ষিত হদয়ও এটা বেশ বুঝিতে পারিয়াছিল, যে, খাদের ভিতর তাহারা যে অবিশ্রান্তভাবে খাটিতেছে, তাহার উপযুক্ত পারিশ্রমিক তাহারা পায় না। তাহার এই যে দিনের পর দিন পৃথিবী-গর্তে নিজেদের রক্ত ঢালিয়া দিতেছে, তাহা দেশের জন্তও নয়, দশের জন্যও নয়, প্রাণপাত পরিশ্রম করিয়া তাহারা খাদের মালিকগণের লোহার সিন্ধুক ভঞ্চিয়৷ দিবার সহায়তা করিতেছে মাত্র । এতদিনের গোপন-সত্যটি এখন কুলীকামিনরা দেখিতে পাইয়াছে বুঝিতে পারিয়া খাদের মালিকগণ বড় দুর্ভাবনায় পড়িলেন ; অনেক চিন্তার পর তাহাঁরা টাকার তলে এই সত্যটি গোপন রাখিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন ;–দেখিতে দেখিতে খাদের কুলীগণের রেট, বাড়িয়া গেল। অশিক্ষিত কুলীগণে মদের টাকা হইলেই যথেষ্ট । স্বতরাং খাদের মালিকগণের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইল না । যেমন হঠাৎ নন-কো-অপারে