পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্য। ] স্বদেশী-বাণী জগতে এই তাব শেষ কথা । এই খবরটাও ছড়াইতে ግ<»9 নিজের ধাওড়ার দিকে ছুটিল। গভীর বিস্ময়ে সেইস্থানে বেশী দেরী হইল না। মাহির কথা বড়কা যখন শুনিল, বসিয়া স্থকলা এদিক-ওদিক চাহিতে লাগিল। তাহার পা হইতে মাথা পৰ্য্যন্ত একবার শিহরিয়া উঠিল । সে গাইতি কাধে লইয়া খাদে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছিল ; ধপ করিয়া গ্ৰাইতিখানা মাটিতে ফেলিয়া দিয়া সে শুইয়া পড়িল । পরদিনই সকাল-বেলায় বড় কা নিকটস্থ জোড়ে शज्र भूक्ष ধুইতেছে, এমন সময় দেখিল, স্বকুলা শ্রান্তপদে এত দিন পরে কুঠীতে ফিরিতেছে। সে দাতনটা ফেলিয়া দি তাহার দিকে শূন্যদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। তাহার চোখের সামনে অটুট-যৌবনা মাহির নিকষ-কালো দেহের স্বচ্ছন্দ লীলা যেন ভাসিয়া উঠিতেছিল। স্বকৃলাও বড় কাকে দেখিতে পাইয়াছিল ; কিন্তু তাহাকে কোনও কথা না বলিয়াই সে আপনমনেই জোড়টা পার হইয়া কুঠার দিকে আসিতেছিল। এমন সময় হঠাৎ বড় কা ডাকিল,—স্বক্লা, শোন । স্বকৃলা সাশ্চর্য্যে বড় কার দিকে চাহিল। দেখিল, তাহার মুখে-চোখে ঈৰ্ষার কি হিংসার ভাব এতটুকুও নাই, জল-ভর-ভর চোখে সে তাহার দিকে চাহিয়া আছে। সে ধীরে ধীরে বড় কার নিকটে আসিয়া জিজ্ঞাস্ব দৃষ্টিতে তাহার মুখের পানে চাহিল। 影 কোন ভূমিকা না করিয়াই বড় কা বলিল,—তুর একটা ছেলা হইছে। আনন্দে স্বকুল। লাফাইয়া উঠিল । সে বড় কার একখানি হাত ধরিয়া সাগ্রহে প্রশ্ন করিয়া বসিল,—কেমন ইইছে রে ? ছেলটি কেমন আছে ? মাহি কেমন আছে ? বড় কার চোখ ফাটিয়া জল বাহির হইয়া আসিতেছিল, সে কোনওক্রমে নিজেকে সাম্‌লাইয়া লইয়া, মুকুলাকে টানিয়া আনিতে আনিতে বলিল,—এই দিকে আয়, সব আখুনি কইব । 衅 নীরব বিস্ময়ে ইকুলা বড় কার সঙ্গে-সঙ্গে চলিল। একটু গিয়াই একটা পোড়ো কুঠীর পাশে প্রকাগু বটগাছের তলায় স্বক্লাকে বসাইয়া সে বলিল,—তুই টুগৃদ্ধ বস ; আমি এই এলম্ —সে আর সেখানে না দাড়াইয়া মিনিট পাচেকের মধ্যেই একখানা সাবল হাতে করিয়া বড় কা ছুটিয়া আসিল । মিনিট দুই ধরিয়া কুঠার পাশের আগাছা কাটিয়া সে যেন অবহেলায় সময় নষ্ট করিতে লাগিল। মুকুল কিছু বুঝিতে না পারিয়া, অবাক হইয়া তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল। তার পর জিজ্ঞাসা করিল,—এঠিনে কি আছেরে ? কোনও কথা না বলিয়া বড় কণ কুঠার ভিতর ঢুকিয়া গেল। কিছুক্ষণ পরে সে একটি জীর্ণ শিশুকে আনিয়া স্বক্লার পায়ের কাছে ফেলিয়া দিয়া বলিল,—এই লে তুর ছেলা ! রাগের মাথায় আমি সেদিন ইকে চুরি করে এনে এইঠিনে রেখে দিইছিলম্। মুকুলা তাহার কথায় বাধা দিয়া ক্রুদ্ধস্বরে বলিল, মাহি কোথা গেল ? বড়কা নিৰ্ব্বিকারভালে বলিল, তাকে মরাই দিয়েছি । একটা আৰ্ত্ত চীৎকার করিয়া মুকুলা সেইখানে বসিয়া পড়িল ; বড় কাও ধূলি-ধূসরিত হাত দুইখানির ভিতর মাথাটা গুজিয়া চুপ করিয়া রহিল। একটু পরেই মাথা তুলিয়া সে বলিল, মাহি সেই দিনই কাতে কাদতে চলে গেইছে, আর জ্যাস্ত ফিরেনি । স্বকুল গর্জন করিয়া উঠিল, এবং সাবলখানি তুলিয়৷ লইল। বড় কা যেন প্রস্তুত হইয়াই আসিয়াছিল; সে নিউকিকণ্ঠে বলিল,—দে আমায় মরাই দে,আমার কিছু দুখ নেই। সাবলখানা ফেলিয়া দিয়া স্থকলা হঠাৎ সেই শিশুটিকে আকুল আগ্রহে নিজের বক্ষে চাপিয়া ধরিল। তুই আমায় নাই মারুবি ? এই দেখ তবে । বলিয়া সাবলধানি বড় কা এবার নিজে উঠাইয়া লইল, এবং স্বক্লা তাহার দিকে চাহিবার পূৰ্ব্বেই নিজের মাথায় সজোরে সেই সাবলের দ্বারা আঘাত করিল। বড়কার রক্তাক্ত দেহ স্থকলার পায়ের কাছে লুটাইয়া পড়িল । শিশুকে বুকে করিয়া স্বক্লা নির্ণিমেষ-নয়নে বড় কার রক্ত-প্লাবিত দেহের ধুকে চাহিয়া-চাহিয়া আপন মনেই বলিয়া উঠিল,--ইয়ার তরেই সেদিন স্বদেশী বঁাশীটে বেজেছিল !