পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২৬ করেন। নিজেদের ভিত্তি ও গঠন আমাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের মধ্যেও অজ্ঞাত বলিয়া আমরা মনন-শাস্ত্রের পথে ক্রমশঃ মূলহীন হইয়া পড়িতেছি। বিদ্যালয়ে যেটুকু যুরোপীয় দর্শনশাস্ত্র পড়ান হয়, সেটুকুর সঙ্গে আমাদের কোনও নাড়ীর যোগ নাই, কাজেই তাহা আমাদিগকে নূতনের পথে প্রোৎসাহিত করিতে পারে না। আমাদের নিজেদের দর্শনের ধারা আমাদের এখনও অতি অল্পই জানী আছে এবং তাহার নিষেক-ভূমি হইতেও আমরা এখন অনেক দূরে সরিয়া পড়িয়াছি। কাজেই আমাদের প্রাচীনকে জানা বা নিত্য-নিত্য নূতন-নূতন মৌলিক তত্ত্বালাপের উন্মেষ সাধন করা, ইহার কোনওটিই আমাদের দ্বারা হইতেছে না । অথচ য়ুরোপে জড়বিজ্ঞানের আলোচনার সঙ্গে-সঙ্গে মননশাস্ত্র ও তত্ত্ববিদ্যার আলোচনা ঠিক্‌ সমান তাল রাখিয়া চলিয়াছে । নিত্য-নিত্য নূতননূতন মনীষীরা নূতন-নূতন প্রণালীতে তত্ত্বালোচনার নবোন্মেষ সাধন করিতেছেন, কত-না নূতন-নূতন দার্শনিক সভার সে-দেশে প্রতিষ্ঠা হইতেছে এবং প্রাচীন সভাগুলি জরাকে জয় করিয়া বর্ষে-বর্ষে ওজোভূয়িষ্ঠ ও বলসম্পন্ন হইয়া উঠিতেছে। এমন প্রকাণ্ড যুদ্ধের এত বড় ভাঙ্গন সত্ত্বেও তাহাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনের প্রাচীন সপ্ততিগুলি অবিচ্ছিন্ন-ধারা পুনরাবৰ্ত্তিত হইয়া চলিয়াছে! যুরোপে নিখিল পৃথিবীর একটি আন্তর্জাতীয় তত্ত্ববিদ্যা*sons ( International Congress of Philosophy) আছে। যুদ্ধের অনেক পূৰ্ব্বেই ইহার আরম্ভ হয় ও ইহার অনেকগুলি অধিবেশনও হইয়া গিয়াছিল, কিন্তু এই পরিষদে কোনও দিনই ভারতবর্ষ নিমন্ত্রণ পায় নাই । যুদ্ধের সময় ইহার আর কোনও অধিবেশন হয় নাই। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্যারিসে জাৰ্ম্মানি ও তাহার মিত্রবর্গকে বাদ দিয়া, ফ্রান্স, ও তাহার মিত্রবর্গ ও উদাসীনবর্গকে লইয়া এই সভার একটি অধিবেশন হয়, সেসভায়ও ভারতবর্ষকে নিমন্ত্রণ করা হয় নাই । ভারতবর্ষকে নিমন্ত্রণ করা হইবে কি না একথা তখন উঠিয়াছিল, তাহাতে “ সম্পাদক জেভিয়র লেয় নাকি বলেন যে, ভারতবর্ষে এমন কোনও তত্ত্ববিদ্যাপরিষৎ ( Philosophical Society ) নাই যাহার পত্রিকাদি দ্বারা তাহার প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩১ 龜 স্বরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্তের নিমন্ত্রণ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড আলোচনার স্বরূপ আমরা জানিতে পারি, কোনও তত্ত্ববিদ্যার প্রামাণিক গ্রন্থও কোনও ভারতবাসী লিখিয়াছেন বলিয়া আমরা জানি না, এবং আমাদের পরিচিত কোনও দার্শনিকও সেখানে নাই, সেইজন্য ভারতবর্ষকে আমরা নিমন্ত্ৰণ করিতে পারি না। কথাটা শ্রুতিকটু হইলেও অসত্য বলা যায় না । গত ৪ঠা মে তারিখে নেপলস্ বিশ্ববিদ্যালয়স্থাপনের ৭০০ বৎসর পূর্ণ হইল। সেই উৎসব-উপলক্ষে সেখানে যুদ্ধের পর এই প্রথম নিখিল পৃথিবীর আন্তর্জাতীয় তত্ত্ববিদ্যাপরিষদের এক অধিবেশন হয় । পৃথিবীর যেখানে-যেখানে দর্শনশাস্ত্রের চর্চা চলিতেছে, প্রায় তাহার সকল স্থান হইতেই সেই-সেই দেশের প্রতিনিধিস্থানীয় দার্শনিকের এই পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করেন । ভারতবর্ষ হইতে কেবলমাত্র অধ্যাপক ডাক্তার হইয়াছিল। নেপল্স্ কংগ্রেস শুধু তাহাকে নিমন্ত্ৰণ করিয়াই ক্ষান্ত থাকেন নাই, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লাট লিটনকেও সুরেন্দ্র-বাবুকে পাঠাইবার যাহাতে ব্যবস্থা হয়, সেই মৰ্ম্মে এক অকুরোধ-পত্র লিখেন । ফলে যাতায়াতের ব্যয় দিয়া গবর্ণমেণ্ট তাহাকে নেপলস্ পাঠান । এরূপ কার্য্যেও নানাদিক্ হইতে নানাপ্রকার আপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা যে না ঘটিয়াছিল, এমন নহে। স্বরেন্দ্র-বাবু এই সভায় যে বক্তৃতা দেন, তাহা আমরা আগষ্ট মাসের মডার্ণ, রিভিয়ুতে প্রকাশ করিয়াছি। স্বরেন্দ্র-বাবুর ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসখানি যুরোপের দার্শনিক-সমাজে অসাধারণ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে, এবং যুরোপীয় একাধিক ভাষায় তাহার তর্জমা আরম্ভ হইয়াছে, এবং উহা পাঠ করিয়া বহু যুরোপীয় পণ্ডিতেরা র্তাহার প্রতি শ্রদ্ধাপরায়ণ হইয়াছেন । ইহাই তাহার এই সম্মানলাভের প্রধান কারণ । ভারতীয় দৰ্শনশাস্ত্রের ইতিহাস ছাড়া, ভারতীয় দর্শনের উপর তাহার আরও দুইখানি গ্রন্থ প্রকাশিত হইযুছে । ইহা ছাড়া, বৰ্ত্তমান যুরোপীয় দর্শনের উপর এক বিস্তৃত মৌলিক গ্রন্থ লিখিয়া তিনি কেন্থিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার উপাধি লাভ করেন। তিনি ঐ বিদ্বৎপরিষদে এই কথা