পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-8や সন্দেহ নিতান্ত অমূলক না হইতেও পারে। কারণ, মণ্টেগু-চেমসফোর্ড শাসনসংস্কারের প্রারম্ভ হইতেই ভারতশাসনে নিযুক্ত অধিকাংশ ইংরেজ রাজপুরুষ দ্বৈরাজ্য পছন্দ করেন নাই। কেননা, যদিও দ্বৈরাজ্য চূড়ান্ত ক্ষমতা দেশের লোক-প্রতিনিধিদের হাতে দেয় নাই, তথাপি রাজপুরুষদের অনেককে দেশী মন্ত্রীদের তাবেদার করিয়াছিল এবং অনেককেই ব্যবস্থাপক সভার ভ্যদের নিকট প্রয়োজন-মত কৈফিয়ং দিতে হইত। বিজিত জাতির লোকদের সহিত জেতা জাতির কাঙ্গরও এইরূপ সম্বন্ধ ভারতপ্রবাসী ইংরেজদের পক্ষে প্রতিকর হইতে পারে না। তদ্ভিন্ন, রাজস্বের টাকা যথেচ্ছ ব্যয় করিবার পথেও কিছু বাধা জন্মিয়াছিল । অনেক স্থলে বাধ। শেষ পর্য্যস্ত না টিকিলেও, রাজপুরুষদের মনোরথসিদ্ধিতে বিলম্ব হইত। এখন লাট লিটন এবং তাহার পরামর্শ-দাতাগণ অবাধে যথেচ্ছ খরচ করিতে পারিবেন ; এবং অন্যান্ত কাজও তাহার যথেচ্ছ করিতে পারিবেন। কিন্তু যদি তাহারা বিজ্ঞ ও বিবেচক হন, তাহা হইলে, যে-সব বিষয়ে লোকমত বিশদরূপে বুঝা গিয়াছে, তাহাতে তাহার। লোকমতের বিপরীত কাজ করিবেন না । লিটন নানা ভ্রমবশতঃ লোকের অপ্রিয় হইয়াছেন ; আরও অপ্রিয় যাহাটত না হন, সে-চেষ্টা তাহার ও তাহার পরামর্শ-দাতাদের করা উচিত। স্বরাজরা নিজেদের জয়ে ও গবর্ণমেণ্টের পরাজয়ে খুব উল্লাস প্রকাশ করিতেছেন। বলিতেছেন দ্বৈরাজ্যের প্রাণবধ করিয়াছেন । তাহাদের উল্লাসে বাধা দিবার ইচ্ছা বা ক্ষমতা আমাদের নাই। তবে, র্তাহাদের ইহা মনে রাখা উচিত, যে, তাহার এক দ্বৈরাজ্যের উচ্ছেদসাধন করিতে পারেন নাই ; অন্য যাহাদের সাহায্যে ইহা সাধিত হইয়াছে, তাহাদের উদ্দেশ্য অন্যরূপ ছিল । সকলের চেয়ে বড় কথা এই, যে, গবর্ণর স্বয়ং দ্বৈরাজ্যের বিনাশ সাধন করিয়াছেন, স্বরাজীরা নহে। কারণ, গবর্ণর ইচ্ছা করিলে নূতনতম ও তৃতীয় মন্ত্রীর বেতন আলাদা করিয়া মঞ্জুর করাইয়া এবং পরে নূতন দুজন মন্ত্রী নিযুক্ত করিয়া দ্বৈরাজ্য প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড রক্ষা করিতে পারিতেন। এখনও তিনি নূতন মন্ত্রী নিযুক্ত করিতে পারেন । স্বরাজী সভ্যেরা প্রায় সকলেই এই বলিয়া নিৰ্ব্বাচিত হইয়াছিলেন, যে, তাহারা ব্যবস্থাপক সভায় গবর্ণমেণ্টের সখ কাজে বাধা দিবেন এবং দ্বৈরাজ্যের উচ্ছেদ-সাধন করিবেন। তাহারা গবর্ণমেণ্টের সব কাজে বাধা দিতে না পারিয়া প্রকাশুভাবে সে-নীতি ত্যাগ করিয়াছেন । কিন্তু, দ্বৈরাজ্যের উচ্ছেদ-সাধন যে-প্রকারেই ঘটিয়া থাকুক, তাহা ঘটিয়াছে ইহা স্বীকার করিতে হইবে। এখন দেখিতে হইবে ইহার ফলাফল । স্বরাজীরা অনেক-দিন হইতে বলিতেছেন এবং বাংলা গবর্ণমেণ্টের শেষ পরাজয়ের পর আরও জোর গলায় বলিয়াছেন, যে, তাহারা দ্বৈরাজ্যের মুখস্থ খুলিয়া উহার প্রকৃত রূপ বাহির করিয়া দিয়াছেন। ইহা কেবল র্তাহাদের পক্ষেই সত্য, যাহাদের নিকট ইহার প্রকৃত রূপ ঢাকা ছিল । দ্বৈরাজ্য আমাদিগকে কি দিয়াছে ও কি দেয় নাই, আমরা তাহা পাচ বৎসর আগে লিখিয়াছিলাম ; অন্য অনেক সম্পাদকও লিথিয়া থাকিবেন। t বাস্তবিক দেখিতে হইবে, দ্বৈরাজ্য আপাতত: স্থগিত থাকায় লাভ কি হইল । গবর্ণমেণ্টের স্থবিধা এই হইল, যে, এখন লাট লিটন ও র্তাহার পারিষদের নিজেদের অভিপ্রায়-অনুযায়ী কাজ অবাধে করিতে পরিবেন। জবরদস্ত ও জুলুমবাজ রাজস্মচারীদের এই সুবিধা হইল, যে, আপাততঃ ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশন স্থগিত হওয়ায় এবং যখন অধিবেশন হইবে তখন কেবল সরকারী কাজ নিৰ্ব্বাহ হওয়ার ব্যবস্থা হওয়ায়, তাহাদিগকে কোন কৈফিয়ুং দিতে হুইবে না, তাহদের কোন কাজ-সম্বন্ধে ব্যবস্থাপক সভায় কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হইবে না। এইসব কারণে গবৰ্ণমেণ্ট পক্ষও কিছু জিতের দাবি করিতে পারেন । : স্বরাজীদের জিত প্রমাণ করিতে হইলে দেখাইতে হইবে, যে, দেশের লোকদের অধিকার ও ক্ষমতা মন্ত্রীদের বেতন নামঞ্জুর হওয়ার ফলে বাড়িয়াছে কিম্বা বাড়িবে কি না। তাহাদের ক্ষমতা ও অধিকার আপাততঃ বাড়ে নাই, তাহা