পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—বিলাতী কাপড় বর্জন bሥ® » অঙ্গচ্ছেদের সময় বাংলাদেশে দেশী কাপড় ব্যবহারের প্রচেষ্টা আরম্ভ হয়। তাহারও আগে এলাহাবাদে কর্ণেলগঞ্জে এবং তৎপরে চোঁকে দেশী কাপড়ের দোকান স্থাপিত হইয়াছিল ; সেখান হইতে আমরা দুেশী কাপড় ব্যবহার করিতে আরম্ভ করি। এখনও তাহা করি । ষোল বৎসর পূৰ্ব্বে কলিকাতায় ফিরিয়া আসিবার পরও দেশী কাপড় ব্যবহার করিবার ও করাইবার চেষ্ট৷ এপর্য্যন্ত যথাসুধা করিয়াছি। দেশী মিলের কাপড় অপেক্ষ খন্দর ব্যবহার দেশের অধিকাংশ লোকের পক্ষে উপকারী বুঝিয়া আমরা কয়েক বৎসর হইতে খন্দর ব্যবহার করিতেছি । ইহাতে কোন বাহাদুরী নাই। কেবল আমাদের অভিজ্ঞতার কথা বলিবার জন্য এই গৌরচন্দ্রিকার অবতারণা। যাহা সহজ-বুদ্ধিতে সহজেই বুঝা যায়, দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতাতেও তাহাই দেখিতেছি। বিরাট সভা, বিকট চীৎকার ও পিকেটিঙে বিলাতী কাপড়ের পরিবর্তে দেশী কাপড়ের ব্যবহার চালাইতে পারা যাইবে না, যদি যথেষ্ট দেশী কাপড় উৎপন্ন না হয়, যদি তাহার মূল্য পিদেশী কাপড়ের ঠিক সমান বা অন্ততঃ কাছাকাছি না হয়, যদি কাপড়-বিক্রেতার লাভের লোভে প্রবঞ্চক না হইয়া সত্য-সত্যই দেশী কাপড় বিক্ৰী আরম্ভ না.করেন, এবং যদি নেতারা ও র্তাহাদের অমুচরেরা ভণ্ডামি না করিয়া সত্য-সত্যই দেশী কাপড় ব্যবহার না করেন। চরিত্রহীনতা, স্থির-বুদ্ধি ও চিঞ্চাশীলতার অভাব, উপযুক্ত আয়োজন না করিয়াই ফললাভের স্বপ্ন-দেখা, এইরূপ নাবিধ কারণ ভারতীয় বহু প্রচেষ্টার নিস্ফলতার মূলী ভূত। দেশের অনেক নেতৃস্থানীয় লোকেরও মোটামুটিরকমের সত্যবাদিত ও সত্যে দৃঢ়তা নাই, কথায় ও কাজে মিল নাই। " দোকানদারদের মধ্যে অনেকেই ছাপহীন জাপানী ও বিলাতী কাপড় দেশী বলিয়, চালায়, দেশী ও বিদেশী মিলের ছাপহীন মোট কাপড় ধুয়াইয়। খন্দর বলিয়া বিক্ৰী করে । দেশী ও বিদেশী মিলওয়ালার এই প্রতারণার উদেহু জানিয়াও ঐ-প্রকার ছাপহীন মোটা কাপড় বুনিয়া দেয়। অনেক ক্রেতাও জানিয়া-শুনিয়া মিলের তথাকথিত খদ্দর কিনিয়া ব্যবহার করে । অথচ আমরা মনে করিতেছি, ধে, বিরাট সভায় বিকট চীৎকার করিয়া আমরা বিদেশীর পরিবর্তে দেশী চালীইতে পারিব ! সংবাদপত্র-পাঠকের জানেন,দেশের সব লোকের জন্ম যত কাপড়ের দরকার, তত কাপড় ভারতবর্ষে উৎপন্ন হয় না। দেশের কাপড় উৎপন্ন দুই-প্রকারে হইতে পারে, মিলের দ্বারা ও হাতেরপ্তাতের দ্বারা। উৎপাদনের উভয় উপায়ই ব্যর্থ হইবে যদি আমরা যথেষ্ট তুলা না পাই। অথচ ভারতবর্ষেই যথেষ্ট তুলা জন্মাইতে পারা যায়। বঙ্গের অনেক স্থানে, যেমন বাকুড়া জেলায়, যথেষ্ট জলসেচনের বন্দোবস্ত হইলে ভাল তুলা প্রচুর পরিমাণে হইতে পারে। র্যাহারা বিলাতী বর্জনের জন্য এখন সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক চীৎকারের বন্দোবস্ত করিতেছেন, র্তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করি, তাহারা জল-সেচনের ও তুলা-উৎপাদনের জন্য কি চেষ্টা কথন ও কোথায় করিয়াছেন ? দেশী মিলের কাপড়ের দ্বারাই যদি কাপড়ের অভাব দূর করিতে হয়, তাহা হইলে আরও মিল স্থাপন করিতে হইবে । বঙ্গবিভাগের সময়কার স্বদেশী আন্দোলনের ফলে তবু একটি মিল বাঙ্গালীর স্থাপন করিয়াছিল—যদিও তাহা কয়েকবার-যায়-যায় হইয়াছিল । তাহার পর বাঙ্গালী নিজের স্বতা ও কাপড় মিলে নিজে উৎপন্ন করিবার কি চেষ্টা করিয়াছে ? বর্তমান হুজুক-উৎপাদকরা কি করিয়াছেন ? দেশী স্থতা ও কাপড় উৎপাদন করিবার দ্বিতীয় উপায় চব্‌খ ও হাতের তাত। ইহার প্রচলনের জন্য বাংলাদেশে সকলের চেয়ে বেশী চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন আচাৰ্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়,—চীৎকারকারীরা তাহ করেন নাই। বরং চীৎকারকারীদের দলের লোকের রায় মহাশয়কে অপদস্থ করিবারই চেষ্টা করিয়াছেন। ডাক্তার প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ টাকশালে উচ্চপদ ছাড়িয়া দিয়া হুজুক বর্জন করিয়া চবৃথার স্থতায় বস্ত্রবয়ন-কার্ষ্যে সময় ও শক্তি নিয়োগ করিয়া মাসিতেছেন। তিনিও স্বরাজ্যদলের পৃষ্ঠপোষকতায় বঞ্চিত। অতএব, ইহা বলিলে অন্যায় হইবে না, যে, চীৎকার