পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক হাঙ্গীমে কাজ কি, বেশ আছি । না দিলেই হ’ল ।” নিখিল তাঁহারই নির্দেশমত সেইদিককার জানাল দুটা আবার বন্ধ করিয়া দিয়া আসিয়া স্মিতহাসে বলিল, “কিন্তু তাও বলি, তোমার অত বাড়ির ভাবনা কেন দাদা ? বৌদির কাছে সোজা চলে যাও । সকালবেলায় উঠেই প্রাইমাস ষ্টোভের পাম্প ঠেলতে হবে না চায়ের জন্তে । বরঞ্চ সেখানে সোনালি চায়ের সঙ্গে সোনার বর্ণের করকমলের যে ছায়াটুকু এসে মিশবে তাতে ক’রে চায়ের স্বাদের আর অস্ত থাকবে না । তাই যাও না ভাই ! অনৰ্থক অভিমান ক’রে শরীরপাত কেন ? “বল কি ” যামিনী গম্ভীর মুখে কহিল, “একবার ফেল করেছি। অামার পড়াশোনা ?” “আর পড়াশোনা ? পড়াশোনা যা করছ তা স্বর্গের ঈশ্বর দেখছেন।” “সত্যি কিছু পড়ছি নে। নয় নিখিল ?” সে এমন ভাবে নিধিলের মুখের দিকে চাহিয়া এমন স্বরে কথাটা জিজ্ঞাসা করিল যে সেইটুকু প্রশ্নের মধ্যেই তাহার অন্তরের অপরিসীম ভার, অসহ ব্যথা একেবারে উন্মুক্ত হইয়া যেন চোখে পড়িল নিখিল তাহারই পাশে নিজের চৌকিটা সরাইয়া লইয়া গিয়া ষামিনীর একটা হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিল, “কি হয়েছে আমাকে খুলে বল যামিনী । সেই প্রথম যখন আই-এ পড়তে তুমি কলকাতায় এস, তখন থেকেই তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব । আমার কাছে কিছুই লুকিও না।” যামিনী ধীরে ধীরে হাতটা মুক্ত করিয়া লইবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “কিছুই হয় নি। এক দিন এক জনকে প্রাণপণে পাবার চেষ্টা ক’রে মনে করেছিলুম, বাইরের সব বাধা কাটিয়ে তাকে বিয়ে করতে পারলেই বুঝি সমস্তই সুগম হয়ে আসবে। এখন দেখতে পাচ্ছি বাইরের চেয়ে ভিতরের বাধাই বেশী । সেইটেই সবচেয়ে বড় সমস্ত। নিখিল, যেখানে পাশাপাশি রয়েছি, অথচ মিলতে পাচ্ছি নে ৷” - “দেখ,তোমাদের নব্য পুরুষদের এই একটা ভারি দোষ—” 盤 t ওসব গোলমালে কান মুক্তি S$Nలి মেয়েদের হার মানিয়েছ । বসে বসে সুক্ষ্মতমরূপে ভাষা থেকে ভাবটুকু এবং তাৎপর্য হইতে তত্ত্বটুকু বেছে চিনে বার করা চাই। কিন্তু দোহাই তোমাদের, সংসারের সর্বত্র অত স্বক্ষ মনের আমদানী ক’রো না । যা সহজ এবং সরল মুখে মুখে ছড়াকেটে তাকেই কাব্য বানিয়ে তুলো না ।” ঘামিনী উঠিয়া পড়িয়া কহিল, “ভাই নিখিল, আমার কথা তুমি বুঝতে পারবে না, সে চেষ্টাও ক’রো না । সংসারের যারো আনা লোক ঘরের গৃহিণীকে পেলেই সুখী হয়, স্বস্তিতে সংসারযাত্রা নিৰ্ব্বাহ করে। কিন্তু আমার সে স্বস্তিতে দরকার নেই। আর সে সুখেও আবশ্রাক নেই— না না, মুখ চাই নে এ কথাটা অবশ্য এখন অত জোর দিয়ে বলতে পারি নে। কারণ এখন অত হৃদয়হীন হই নি । কিন্তু আমি যে-পরিপূর্ণতাকে চেয়েছি সে ত শুধু ঘরের গৃহিণীকে দিয়ে মেটে না । আমি তাঁরই জন্য অপেক্ষা ক’রে রইলুম। যদি কখন পাই তেমনি ক’রেই পাব । তার চেয়ে কমে আমার মন ভরবে না ভাই । এর জন্তে যদি সমস্ত জীবন অপেক্ষা ক’রে থাকতে হয় সেও স্বীকার, কিন্তু আমার চাওয়াকে আমি ছোট করব না।” “হয়েছে গো মশাই হয়েছে। সারাজীবন তপস্তার পালা এখন শিকেয় তোলা থাক, দুটো মাস বিরহ সহ্য হ’লে বাচি । রোজ ডাক আসবার সময় যখন হয়, তখন মনটা যেন মেঘের পানে চাতকের চেয়ে থাকার মত সেই দিকপানে অনিমেষ হয়ে থাকে। দেথি দাদা, আর দু’টাে দিন সবুর কর, ডাকটা আগে কোনদিক থেকে আসে । R* রাত্রি তখন প্রায় বারোটা । মেসের সমস্ত ঘর অন্ধকার । আলো নিবাইয়া দিয়া সকলেই ঘুমাইতেছে। যামিনীর পাশের ঘরে নিখিলও গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন। কেবল সে নিজেই এত রাত্রি অবধি ঘুমাইতে পারে নাই। আলোর অভাবে বই পড়িতে না পারির চুপ করিয়া বিছানায় গুইয়া ছট্‌ফট্‌ করিতেছিল। এমন সময় তাহারই পাশের ঘরটার কে ধেন ধাজ্ঞা দিয়া ডাকিতে লাগিল, “বাবুর কেউ জেগে আছেন গে ? ভারি বিপদে পড়েছি। জোহাই আপনাদের যদি জেগে থাকেন ত দেীর খুলুন।” § { .