পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$$$ দরকার কি ? লেখাপড়ার আদৌ মন বসে না । সে চেষ্টা করাও সে এবারে ছাড়িয়া দিয়াছে। খাটের উপর বিছানায় গুইয়া কড়িকাঠের দিকে চাহিয়া ভাবিতেছিল, আর কত দিন এই নিৰ্ম্মম নীরবতায় দিন কাটিবে। অভিমান ভাসাইয় দিয়া সে-ই না হয় প্রথমে নিৰ্ম্মলাকে চিঠি লিখিবে। চিঠি লিখিবে স্থির করিয়া সে ফাউণ্টেন পেন এবং কাগজ টানিয় লইয়া বসিবে বসিবে করিতেছে, এমন সময় ওবাড়ির দাসী আসিয়া জানালার কাছে দাড়াইল। যামিনী উঠিয়া দরজ খুলিবার উপক্রম করিতেই কহিল, “দরজা খুলবার দরকার নেই বাবু। তিনি ভাল আছেন। এই চিঠিখানা আপনাকে দিয়েছেন।” একটা ফিকে ফিরোজা রঙের পুরু খাম তাহার হাতে জানালা গলাইয়া ফেলিয়া দিয়া সে অস্তধান করিল। ঘামিনী নির্জন মধ্যাহ্নে সেই খামখানা হতে পাতিয়া লইয়া চেয়ারে আসিয়া বসিতেই তাহার সমস্ত মন বিতৃষ্ণায় ভরিয়া উঠিল। কিন্তু কৌতুহল সংবরণ করিতেও পারিল না। খামখানা ছি’ড়িয়া দেখিল লেখা আছে – “কাল তুমি যখন ঘর হইতে চলিয়া গেলে তখন মনে হইল আমার জীবন একবার মাত্র আলো জলিয়া উঠিয়াছিল, তাহাও দপ করিয়া নিবিয়া গেল। তোমাকে তুমি বলিলাম বলিয়া রাগ করিও না । কারণ দূর হইতে অনেকবার তোমাকে মনে মনে তাহাই বলিয়া ডাকিয়াছি। মনে মনে ঘাহা করিয়াছি, প্রেকাশ্যেও তাঁহাই করিলাম ; কারণ তোমার কাছে আমার লুকাইবার কিছুই নাই। কিছু লুকাইব না, বোধ হয় সে সাধাও নাই। যদি আমার ইতিহাস শুনিতে তোমার প্রবৃত্তি না হয় তবুও বলিব, কারণ না-বলিয়া আমার মুক্তি কোথায় ? দূর হইতে জানাল দিয়া কতবার তোমার ধ্যানমগ্ন মুখের দিক বিস্ময়ে ডুবিয়া গিয়া তাকাইয়াছি। মনে করিয়াছি কাহার এত ভাগ্য, কে এমন তপস্ত করিয়াছে, যাহার ধ্যানে তুমি নিজের মনেই এত তন্ময় হইয়া আছ ? না, সে আর কোন চিন্তা ? কিন্তু থাক সে কথা, তোমার কথা জানিবার আমার কি অধিকার ? কিন্তু আমার কথা যে তোমাকে শুনিতেই হইবে। আমার স্বামীর নাম বলিব না । তিনি বাংলাদেশের এক হরে পল্লীগ্রান্তে কোন এক নগণ্য S98షి ষ্টেশনের ষ্টেশন-মাষ্টারী চাকরি করি তন । সেখানকার জমিদারের নজরে আমি পড়িয়া যাই । লোকে বলে আমি না-কি রূপসী, যদিও এ ছাই রূপের দিকে কোন দিন চোখ মেলিয়া চাহি নাই। তাহার পরে সেই অশিক্ষিত দোর্দণ্ডপ্রতাপ জমিদার আমার স্বামীকে ভয় দেথাইয়া এবং বলিতে লজ্জা করে বিস্তর টাকা ধরিয়া দিয়া তাহারই সহিত ষড়যন্ত্র যোগে আমাকে অপহরণ করিয়া লইয়া কলিকাতায় পলাইয় আসেন। স্বামী অত্যন্ত অকিঞ্চন । মাসান্তে পনেরটি টাকা করিয়া বেতন পান । বোধ করি টাকার লোভ সামলাইতে পারিলেন না। এই ত আমার পুরুষের সহিত পরিচয় । কিন্তু আমার অনন্ত দুৰ্গতির মাঝেও বিধাতাকে ধন্যবাদ যে এই পরিচয় সম্বল করিয়াই আমাকে মরিতে হয় নাই । তোমর পরিচয় পাইলাম। আমার জীবনের কালো অন্ধকারের মাঝে সোনার একটি রেখা পড়িল হউক তাহা দু-দণ্ডের । তবু ত তাহাকে দেখিয়াছি। কিন্তু কাল রাত্রি বলাকার ব্যাপারটা এখনও বলা হয় নাই। যিনি আমাকে এই বাড়ি ভাড়া করিয়া রাখিয়ছিলেন, কয়েক দিন হইতে তাহার সহিত এক বেহারী ভদ্রলোক আমার বাড়িতে প্রায়শঃ পদধূলি দিতেন। ক্রমশঃ তাহার অন্তরঙ্গতা করিবার সখ বাড়িয়া উঠিল । দুই জনের মাঝে সুরু হইল ঈর্ষা, প্রতিযোগিতা, বিসম্বাদ । অবশেষে কাল রাত্রিতে দুই জনে একত্র হইয়া মদের ঝোকে মারামারি সুরু করে । আমি বাধা দিতে যাইয়া আহত হইলাম । আমার জ্ঞান ছিল না। পরে দাসীর কাছে গুনিয়াছি বেহারী ভদ্রলোকটি খুব গুরুতর রূপে জখম হওয়ায় তাহার সঙ্গের লোকজন ধরাধরি করিয়া লইয়া গিয়াছে । ভয় পাইয়া জমিদার বাবুও মোটরে অন্তধান করিয়াছেন, যদিও জানি ভয় ভাঙিলেই আসরে আবার আসিবেন । আবার আরম্ভ হইবে আমার দুঃসহ প্লানির জীবন । কিন্তু এই অবসরে, হে আমার দেবতা, দূর হইতে তোমাকে প্রণাম করিয়া লই। আমার কলঙ্ক-সমুদ্রের বহু, বহু উৰ্দ্ধে পূর্ণচন্দ্র উঠিয়াছে। ত হারই জ্যোতিতে আমার সমস্ত কুল আলোকিত হইল। প্রভু, ভয় পাইও না । জোয়ারের জল তোমার উদ্দেশ্যে যতই উচ্ছ্বসিত হইয়া