পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাত্তিক মুক্তি $$'h উঠুক, জানি তাঁহা তোমার কাছেও পৌছাইতে পারিব না । কিন্তু এক এক সময় ভাবি কাহার অভিশাপে আমার জীবনভর এই অন্ধকার। বিধির বিধানে বিনাদোষে মরণের শেষদিন পর্য্যন্ত আকণ্ঠ পঙ্কে নিমজ্জিত হইয়া থাকা । ইহার কি শেষ নাই ? এ জীবন হইতে কি উদ্ধার নাই ?” ঘামিনী যদি সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকিত তবে এই চিঠির সাজান নাটকীয় ভঙ্গী হয়ত ধরিতে পারিত। আমাদের ত মনে হয় তাহ'র ধরিতে পারা উচিত ছিল । কারণ আজকালকার দু-পয়সা তিন পয়সা দামের সপ্তাহিক কাগজগুলাতে পতিতার কথা এবং পতিতার ব্যথা নাম দিয়া রসে-ভেজ বীপগদগদ তাল তলি যে-সকল লেখা বহির হয়, সে ধরণের শিক্ষণ এবং সংস্কৃতির বহু উৰ্দ্ধে তাঁহার মন । কিন্তু সেই সময়ে যামিনীর মন অভিমানে, বেদনায় এমনই বিকৃত হইয়াছিল যে, তাহাকে ঠিক স্বাভাবিক অবস্থা বলা চলে না। নিৰ্ম্মলার ব্যবহ রকে সে তাহার পৌরুষের অবমাননা বলিয়া কল্পনা করিয়া লইয়াছিল ৷ এক জনের কাছে আপনার যথার্থ মূল্য না পাইয়া সে নিজের উপর নিজের শ্রদ্ধা হরাইতে বসিয়ছিল ; ঠিক সেই সময়ে আর এক জনের কf:ছ নিজের স্তুতির যথার্থতা ধরিতে পরিল না । তাঁহাকে যথার্থ মনে করিয়া ত’হর হৃদয় স্ফীত হইয়। উঠিল। যে-ভাষায় চিঠিখান লেখা, তাহ। যে হৃদয়ের ভাষা নয়, তাঁহাতে আস্তরিকতা মাত্র নাই, এমনতর সহজ কথাটাও তাহার নজর এড়াইয়া গেল । তাহার অবমানিত পুরুষের চিত্ত যত করুণা যত শক্তি সুপ্ত হইয়াছিল তাহার একসঙ্গে জাগিম্ন উঠিল। মনে মনে সে কহিল, “আমি ত ইহার মধ্যে অন্তায় কোনখানটায় দেখিতে পাই না। কারণ আমি কোন উদ্যে লইয়া তাহার কাছে ঘাইতেছি না। আমীর মধ্যে কোন আসক্তি নাই। কিন্তু কেহ যদি আমার কাছে মুক্তির উপায় খোজে, সাহায্য চায়, তবে তাঁহা না-দিয়া থাকি কি করিয়া ?” তখন দুপুর বলায় মেসর সমস্ত বাড়িটা খালি । যে যাহার কলেজ, কোর্ট আফিস গিয়াছে। পালন হইতে চাদরটা টানিয়া লইয়া ষামিনী পাশের বাড়িত আসিয়া উপস্থিত হইল। দাসী অগিয়া দরজা খুলিয়া দিল। অমল মুখর হাসি কোন রকম চাপিয়া, গম্ভীর মুখে যামিনীর হাত হইতে চাদরটা লইয়া রাখিল । সোৱাই হইতে ঠাণ্ড জ্বল গড়াইয়া রাখিল । গোলাপ জল, সুগন্ধী পান বাহির করিল। আপনার হাতে হাতপাখা লইয়া বাতাস করিতে করিতে কহিল, “আমার উপরে যে তোমার এত দয়া তা জানতুম না ।” যামিনী কহিল, “থাক, আমার অত সবে প্রয়োজন নাই। তুমি আমাকে ডেকেচ তাই আমি এসেছি । যদি তোমার উদ্ধারের কোনও উপায় থাকে ত বল । আমি যথাসাধ্য করতে রাজী আছি ।” অবরুদ্ধ হাস্তবেগে আমলার পক্ষে আপনাকে সংবরণ করা কঠিন হইয়া উঠিল । মনে মনে হাসিয়া লুটোপুটি খাইতে থাইতে সে মনে মনেই কহিল, “আমি ডেকেছিলাম অমনি এসেছ, এমন জানলে যে আরও আগেই ডাকতুম ” কিন্তু মুখে বিষণ্ণ যুর কহিল, “উদ্ধার করবে কি ক’রে, একবার স্থন এ-পথে আমাকে জোর ক’রে টেনে এনে ফেলা হয়েছে তখন সংসারে সমাজে আর ত আমার স্থান নাই ।” “তা না-ই থাক, কিন্তু তোমাকে স্বাধীন ভাবে সৎ উপায়ে জীবিকানিৰ্ব্বাহের কোন উপায় হয়ত দেখিয়ে দিতে পারি। কোন নারীমঙ্গল সমিতিতে—” ঘামিনী থামিল । ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া কি যেন ভাবিতে লাগিল। কারণ এসব বিষয়ে তাহার জ্ঞান অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। কিছুই জানা নাই। ভাসা-ভাসা ভাবে লোকের মুখে শুনিয়াছে, কাগজে পড়িয়াছে মাত্র । অমল হাতপাখাটা তুলিয়া লইয়া আবার মৃদু মৃদু পাখা করিতে করিতে কহিল, “আচ্ছা, সে ধীরে-সুস্থে ভেবে ঠিক করা যাবে। কিন্তু আমীর কপালে যা-ই থাক আমার জন্তে যে ভেৰেভেবে তুমি সারা হবে, সে আমার কিছুতেই সইবে না। তুমি আমার জন্তে উদ্বিগ্ন হতে পাবে না। এখন ক'ট্ৰিন আমি স্বাধীন। কাল রাত্তিরের ব্যাপারের পর ভয়ে সেই দু’টো লোকই আর এখন সহজে এমুথো হচ্ছে না । ইতিমধ্যে কিছু একটা উপায় ভেবে স্থির করছি।” “তুমি এখন কেমন আছ?” যামিনী এতক্ষণ মুখ নামাইরা ছিল। এইবারে মুখ তুলিয় অমলার দিকে চাহিল। কালরাত্রির দীপালোকে অবসর বিক নারী অন্তরক লাগিয়াছিল, আজ দিনের উজ্জ্বল আলোর ভাষার অনাবৃত ৷